তরুণী সাংবাদিককে হেনস্থা! অভিযুক্ত সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য যা বলছেন...

Tanmoy Bhattacharya CPIM: প্রাক্তন বাম বিধায়ক বলছেন, সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, এর আগেও তন্ময় তাঁর সঙ্গে এমন ব্যবহার করেছেন। তাহলে এতদিন তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতনকে বলেননি কেন?

সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা। প্রতিবাদের মুখ। দল আরজি কর কাণ্ডে সামনের সারিতে নেমে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। সেই সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধেই হেনস্থার অভিযোগ আনলেন এক তরুণী সাংবাদিক। আরজি কর কাণ্ড পরবর্তী বাংলায় স্বাভাবিকভাবেই একাধিক ঘটনা এমন উঠে এসেছে যেখানে বহু তাবড় তাবড় নাম জড়িয়ে গিয়েছে যৌন হেনস্থার ঘটনায়, পাইয়ে দেওয়া নামে যৌন নিগ্রহে অথবা নেহাতই স্বভাবসুলভ অশ্লীলতায়। তবে রবিবার দুপুরে ফেসবুক লাইভে যে বোমা ফাটিয়েছেন ওই সাংবাদিক তা আবারও প্রমাণ করে দেয়, বিচার অপরাধের হয় ঠিকই, ভেতরে গেঁড়ে থাকা অভব্যতা বা পুরুষতান্ত্রিকতার কোনও বিচার নেই আসলে। ওই সাংবাদিক কী অভিযোগ করেছেন?

তরুণী বলছেন, ওই দিন সকালেই তিনি তন্ময় ভট্টাচার্যের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন। এর আগেও বহুবার তিনি এই সিপিএম নেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। অভিযোগ, তাঁর ক্যামেরাপার্সনের সামনেই সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য ওই সাংবাদিকের কোলে বসে পড়েন। অভিযোগ, এর আগেও একাধিকবার গায়ে হাত দিয়ে কথা, ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেছেন এই নেতা। তবে রবিবারের ঘটনা কোথাও মারাত্মক অস্বস্তিতে ফেলেছে ওই সাংবাদিককে। ফেসবুক লাইভে ওই সাংবাদিক বলেছেন, এদিন সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য তাঁর ক্যামেরাপার্সন ফ্রেম ঠিক করছিলেন। তখন, তাঁর সামনেই নানারকম কথা বলতে বলতে তরুণীর কোলেই বসে পড়েন এই নেতা। সাংবাদিক তাঁকে বলেন বিষয়টা মোটেও ভালো হচ্ছে না। তন্ময় সেসবে পাত্তা দেন না। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আনন্দবাজারকে তন্ময় ফোনে বলেন, ‘‘আমি স্বভাবগত ভাবেই সকলের সঙ্গে ইয়ার্কি করি। এর আগে ওই মেয়েটি অন্তত দশবার আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। ওর সঙ্গে আমি এর আগেও ইয়ার্কি করেছি। কিন্তু আজকে হঠাৎ করে কী হল আমি জানি না।’’

আরও পড়ুন- বুদ্ধদা আদর্শ কমিউনিস্ট ছিলেন

তন্ময় যাকে 'ইয়ার্কি' ভাবছেন তা আসলে কারও অসম্মতিতে, তাঁকে অস্বস্তিতে ফেলা। তন্ময় 'ইয়ার্কি' বলছেন মানে তিনি ঘটনাটি মিথ্যা তা বলছেন না কিন্তু। যদিও ঘটনা পরম্পরা যত এগোয়, বদলে যায় তাঁর বয়ান। রবিবার সন্ধেতেই, ওই মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থার অভিযোগ ওঠায় তন্ময় ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয় সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানান, তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের অভ্যন্তরীণ তদন্ত হবে দলে। যত দিন তদন্ত চলবে, তত দিন সাসপেন্ড থাকবেন তন্ময়। তদন্ত কমিটি যে প্রস্তাব দেবে, সেই মতোই পদক্ষেপ করা হবে। সাংবাদিক বৈঠকে সেলিম আরও বলেছেন, ‘‘এক মহিলা সাংবাদিক তন্ময়ের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কোন ছোঁয়া সাধারণ আর কোনটা খারাপ ভাবে ছোঁয়া, তা মেয়েরা খুব ভাল করে বুঝতে পারেন। এই ধরনের কোনও অভিযোগ এলে সিপিএম দল হিসাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখে। তন্ময় গর্হিত কাজ করেছে। তা সিপিএম দল হিসাবে কোনও ভাবেই সমর্থন করে না। কেউ এটাকে ভাল চোখে দেখবেন না। আমরা এগুলোকে ক্ষমার চোখে দেখি না।’’

আর দলের এই সিদ্ধান্তকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করছেন প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য। এক সংবাদমাধ্যমকে তন্ময় বলেছেন, “একটি মেয়ে অভিযোগ করা মানেই যে সাসপেন্ড করতে হবে, দল যদি এটা মনে করে, তাহলে ঠিক কাজ করেছে। কাল অন্য কারও বিরুদ্ধে যদি কোনও মেয়ে অভিযোগ করে, তাঁকেও সাসপেন্ড করবে। এই রুটিনে যদি দল চলে যায়, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আমি আশা করেছিলাম, দল আমার কথা শুনবে। রাজ্য সম্পাদক হোয়াটসঅ্যাপে কিছু জানতে চেয়েছিলেন। আমি জানিয়েছিলাম। তারপরও এই সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের পরিবার বামপন্থী হিসেবেই পরিচিত। আমি মাথা উঁচু করে বামপন্থার সঙ্গে ছিলাম। মাথা উঁচু করেই থাকব। যদি কেউ মনে করেন, আমাকে হেনস্থা করে আমার রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারবেন, তাহলে তিনি মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন।”

আরও পড়ুন- মুখে খেটে খাওয়া মানুষের কথা, তবু কেন শূন্য বামেরা?

যেমন অধিকাংশ মানুষই এমন অভিযোগ ওঠার পর বলে থাকেন, তন্ময়ও একই সুরে কথা বলেছেন। তাঁর গলায় অভিযোগকারিণীকেই কাঠগড়ায় তোলার আভাস স্পষ্ট। প্রাক্তন বাম বিধায়ক বলছেন, সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, এর আগেও তন্ময় তাঁর সঙ্গে এমন ব্যবহার করেছেন। তাহলে এতদিন তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতনকে বলেননি কেন? কেন ওই সাংবাদিক রবিবার সমস্ত কাজ করে বাড়ি গিয়ে তারপর ভিডিও করলেন? তন্ময় প্রশ্ন করছেন, "মানসিক বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত অবস্থায় এত কাজ করা যায়? আমার বাড়ি থেকে বরাহনগর থানা ৫ মিনিট দূরে। সেই থানায় গেল না কেন? তার ক্যামেরাপার্সন তখন কিছু বলল না কেন? আমি কিছু মেলাতে পারছি না।” যদিও বরাহনগর থানায় তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই সাংবাদিক। তন্ময়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ যদি সত্য প্রমাণিত হয়, আর তাঁর এই 'ইয়ার্কি' যদি আগেও নানাজনের সঙ্গে ঘটে থাকে তাহলে একটি বিষয়ই স্পষ্ট হয়। মানসিকতার দিক থেকে কোনও দল, মত নির্বিশেষে যে সংবেদনশীলতা প্রয়োজন তা আইন করে সম্ভব নয়। আইন বিচার করে শাস্তি দিলেই যে এই ধরনের হেনস্থায় কোনটা অযাচিত স্পর্শ, কোনটা হেনস্থা আর কোনটা 'ইয়ার্কি' তা আইনে বলা সম্ভব না। তবে যে দলের থেকে আদর্শ প্রত্যাশিত, সেই দলের নেতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আরেকটু পিছনে টেনে নিয়ে যায় মেয়েদের প্রকৃত মুক্তির আন্দোলনকে।

More Articles