ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা, হেমন্ত ফিরতেই সরে দাঁড়ালেন চম্পাই

Hemant Soren: তবে হেমন্ত ফিরতেই সেই গদি ছেড়ে সরে দাঁড়াতে হল চম্পাইকে। বুধবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন চম্পাই সোরেন।

ইডি-র হাতে গ্রেফতারির আভাস পেয়েই তড়িঘড়ি মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়েছিলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী। কোনও ভাবে যাতে ফাঁক গলে রাজ্যের ক্ষমতা বিজেপির হাতে না চলে যায়, তা নিশ্চিত করতে ছুটে গিয়েছিলেন রাজ্যপালের কাছে। রীতিমতো চিন্তাভাবনা করে উত্তরসূরীর নাম ঘোষণা করে গিয়েছিলেন হেমন্ত সোরেন। তার পর হেমন্তের গ্রেফতারি এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার অন্যতম বরিষ্ঠ সদস্য চম্পাই সোরেনের মুখ্যমন্ত্রীর পদে আরোহন। কম লড়াই পোহাতে হয়নি তাঁর জন্য চম্পাইকে।

অবশেষে জমি দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টে জামিন পেয়েছেন হেমন্ত সোরেন। আশঙ্কা ছিল, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরির সঙ্গে যা হয়েছে, তা হতে পারে হেমন্তের সঙ্গেও। সুযোগ পেয়েই হেমন্তের জামিনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে পারে ইডি। শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্ত যদি হেমন্তের বিরুদ্ধে যায়, সেক্ষেত্রে বাইরে বেরোনো মুশকিল হয়ে যাবে হেমন্তের পক্ষে। ফের জেলের অন্ধকারেই ফিরে যেতে হতে পারে ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। তবে সেই মেঘ ক্রমে সরছে বলেই আঁচ করা যাচ্ছে। কারণ ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে আচমকাই পদত্যাগ করলেন চম্পাই। মাত্র পাঁচ মাসের মাথাতেই। কারণ ফিরছেন হেমন্ত। ফের মুখ্যমন্ত্রীর পদ তাই তার জন্য় ফাঁকা করে দিলেন ঝাড়খণ্ডের 'টাইগার' চম্পাই।

আরও পড়ুন: চম্পাই সোরেন ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হেমন্তের, এত করেও ঝাড়খণ্ডে বিজেপিকে রুখতে পারবে JMM?

অথচ সহজ ছিল না চম্পাইয়ের লড়াই। গত জানুয়ারি মাসে হেমন্ত সোরেন গ্রেফতার হওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে একের পর এক নাম ভেসে উঠেছিল। এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে ভাবা হয়েছিল হেমন্তপত্নী কল্পনা মুর্মু সোরেনকেও। কিন্তু দান আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন হেমন্ত। এমনকী চিঠি লিখে মহাগাঠবন্ধনের শরিকদেরকেও জানিয়ে দেন, হেমন্তের অবর্তমানে সমস্ত দায়িত্ব সামলাবেন চম্পাই-ই। তবে নাম প্রস্তাব করলে কী হবে! ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় রীতিমতো আস্থা ভোটে জিতে তবে মুখ্যমন্ত্রীর পদটি নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন চম্পাই। তার জন্য কংগ্রেস শাসিত রাজ্য তেলঙ্গানায় গিয়ে সুরক্ষিত করতে হয়েছিল সমর্থনে থাকা বিধায়কদের। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার তিন নম্বর মনে করা হয় চম্পাইকে। জেএমএম প্রতিষ্ঠা হওয়ার সময় থেকেই তিনি সঙ্গে রয়েছেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন চম্পাই।

তবে হেমন্ত ফিরতেই সেই গদি ছেড়ে সরে দাঁড়াতে হল চম্পাইকে। বুধবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন চম্পাই সোরেন। গত ২৮ জুন হাইকোর্টে জমি দুর্নীতি মামলায় জামিন পান হেমন্ত। সব ঠিক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার ফের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন হেমন্ত। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণানের সঙ্গে কথা বলে সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছেন হেমন্ত সোরেন। এদিন পদত্যাগের পর চম্পাই জানান, জেএমএম নেতৃত্বাধীন জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদত্যাগ করছেন তিনি। রাজভবনে গিয়ে ইতিমধ্যেই ইস্তফাপত্রও জমা দিয়েছেন চম্পাই। জানা গিয়েছে, সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণও করেছেন রাজ্যপাল। গোটা জোটের তরফে জেএমএম দলের নেতা হিসেবে হেমন্ত সোরেনকে আরও একবার নির্বাচিত করা হয়েছে।

স্বাভাবিক ভাবেই ঝাড়খণ্ডের এই পালাবদলকে মোটেই ভালো চোখে দেখছে না বিজেপি। জেএমএম ও কংগ্রেস জোটের এই সিদ্ধান্তকে পীড়াদায়ক বলেই বর্ণনা করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তাঁর দাবি, চম্পাইকে সরিয়ে এমন একজনকে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসানো হচ্ছে, যাঁর গায়ে লেগে রয়েছে জমি কেলেঙ্কারি মামলায় অর্থ পাচারের অভিযোগ। একজন জেলফেরত আসামীর হাতে রাজ্যের দায়িত্ব সঁপে দেওয়া হচ্ছে বলে কটাক্ষ করেন বিজেপি নেতা। ঝাড়খণ্ডের মানুষ এই সিদ্ধান্তকে ভালো ভাবে নেবেন না বলেই মত তাঁর।

আরও পড়ুন: হাইকোর্টে মঞ্জুর জামিন! জমি-দুর্নীতি মামলায় তার পরেও জেলমুক্ত হতে পারবেন হেমন্ত?

বিজেপির হাত থেকে রাজ্যকে বাঁচাতে একদিন তড়িঘড়ি যে চেয়ার ছেড়ে গিয়েছিলেন হেমন্ত, জেল থেকে বেরিয়েই সেই হিসেব বুঝে নিতে চলেছেন তিনি। দলের বিশ্বাসযোগ্য নেতা হিসেবে চম্পাইও বিনাবাক্যবায়ে ছেড়ে দিচ্ছেন পদ। দলের অনুশাসনের কাছে তিনি সেই কাজ করতে বাধ্য। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের মানুষ কি ফের হেমন্তকেই বেছে নেবেন তাঁদের নেতা হিসেবে? রাজ্যের দায়িত্ব কি তাঁর হাতেই রাখতে চাইবেন, নাকি ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার বিপক্ষে যেতে চলেছে এই সিদ্ধান্ত সেটাই দেখার।

More Articles