চাঁদ ছুঁতে কয়েক ঘণ্টা! কেন তীরে এসে তরী ডুবেছিল চন্দ্রযান ২-এর?
Chandrayaan 3 Landing: ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর অবতরণের কথা থাকলেও ঠিক অন্তিম মুহূর্তে ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ঐতিহাসিক মুহূর্তের দোরগোড়ায় ভারত। দোর খুললেই চাঁদে পা রাখা চতুর্থ দেশের রেকর্ড গড়বে দেশ। কোনও ত্রুটিই রাখা হয়নি এবার, প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল মেপে। চন্দ্রযান-২ ব্যর্থ হওয়ার পর, অপেক্ষা করেছে দেশ। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সাজানো হয়েছে চন্দ্রযান-৩। চন্দ্রযান-৩ বুধবার, ২৩ অগাস্ট, ভারতীয় সময় বিকেল ৫:৫৭-তে চাঁদে অবতরণ করতে চলেছে। রাশিয়ার লুনা ২৫-এর আগে যদি চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে, তাহলে ভারতই হবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করা প্রথম দেশ। কিন্তু কেন ব্যর্থ হয়েছিল এর আগের চন্দ্রযানটি? ফিরে দেখা যাক সেই মুহূর্ত।
চন্দ্রযান-২ এবং চন্দ্রযান-৩ প্রায় অভিন্ন। চন্দ্রযান-২ তে কেবল একটি অরবিটার ছিল। চন্দ্রযান-৩ সঙ্গে করে আর অরবিটার নিয়ে রওনা দেয়নি। চন্দ্রযান-২ মহাকাশযানটিতে ছিল একটি অরবিটার, একটি ল্যান্ডার এবং প্রজ্ঞান নামের একটি রোভার। বিক্রম ল্যান্ডারটি সফট ল্যান্ডিংয়ে ব্যর্থ হলেও এই অভিযানের অন্যান্য দিকে সফল হয়েছিল।
ISRO চেয়েছিল বিক্রমকে চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরের চন্দ্রপৃষ্ঠের এক মসৃণ সমভূমিতে অবতরণ করাতে। ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর অবতরণের কথা থাকলেও ঠিক অন্তিম মুহূর্তে ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, সফটওয়্যার ত্রুটির কারণেই চন্দ্রযান-২ মিশন ব্যর্থ হয়েছে৷ বিক্রম চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে ২.১ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছানোর পর পৃথিবীতে ল্যান্ডার এবং মিশন কন্ট্রোল স্টেশনের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ল্যান্ডারটি চাঁদে অবতরণ করার সময় বিক্রমের সঙ্গে প্রজ্ঞানও ধ্বংস হয়ে যায়।
আরও পড়ুন- চাঁদের মাটি ছোঁয়ার অপেক্ষায় চন্দ্রযান-৩, ভারতের চাঁদে যাওয়ার নেপথ্যে যেসব তুখোড় মস্তিষ্ক…
এই চূড়ান্ত মুহূর্তে অভিযানের ব্যর্থতার পরে বসে থাকেনি ইসরো। চন্দ্রযানের সাফল্য নিশ্চিত করতে বিক্রমে নানাবিধ পরিবর্তন করা হতে থাকে। চাঁদে নিরাপদে বিক্রমকে অবতরণ করাতে ISRO শক্তিশালী ল্যান্ডিং লেগস, উন্নত সেন্সর, প্রসারিত সোলার অ্যারে, অত্যাধুনিক সফটওয়্যার, উন্নত ইঞ্জিন থ্রটলিং এবং অপ্টিমাইজড ইঞ্জিন কনফিগারেশনের দিকে জোর দিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেম চন্দ্রযান-২-এর বিক্রমে পাঁচটি ৮০০ নিউটন ইঞ্জিন ছিল। চন্দ্রযান-৩-এর বিক্রমে চারটি থ্রোটলেবল ইঞ্জিন থাকবে৷ নিজে নিজেই অবতরণের সময় সুনির্দিষ্ট নির্দেশ পেতে ইসরো একটি লেজার ডপলার ভেলোসিমিটার যুক্ত করেছে। ল্যান্ডিং লেগসগুলিকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে৷ শেষ মুহূর্তে গিয়ে সমস্ত সেন্সর এবং ইঞ্জিন যদি কাজ করা বন্ধও করে দেয়, তাহলেও যাতে অবতরণ নিশ্চিত করা যায় সেটির বন্দোবস্তও করা হয়েছে৷ লেজার ডপলার ভেলোসিমিটার আসলে একটি সেন্সর। বিক্রমের ক্ষেত্রে লেজার ডপলার ভেলোসিমিটার চাঁদে বাতাসের বেগ মাপবে।
চন্দ্রযান-২-এর বিক্রমের তুলনায় সোলার অ্যারের শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি কারণ অ্যারের আকারটি এবার বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ চাঁদে অবতরণের সময় ল্যান্ডারটির একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং নির্ভরযোগ্য শক্তির উত্স রয়েছে। চাঁদে নেমে অন্যান্য কাজ করার সময়ও এই সোলার অ্যারের শক্তিই কাজে আসবে। এখনও পর্যন্ত যে তিনটি দেশ চাঁদে পা রেখেছে, অর্থাৎ আমেরিকা, রাশিয়া ও চিন কেউই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামতে পারেনি। পৃথিবীর সব মহাকাশ সংস্থাগুলি এখনও পর্যন্ত মোট ৩৮ টি সফট ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করেছে চাঁদের মাটিতে। সাফল্যের হার ৫২ শতাংশ। চন্দ্রযান ৩ পারবে তো? মুহূর্ত গুনছে আস্ত একটা দেশ।