চাঁদে নামার সাফল্যের হার মাত্র ৫২%, চন্দ্রযান ৩ কি পারবে ইতিহাস গড়তে?

Chandrayaan-3: পৃথিবীর সব মহাকাশ সংস্থাগুলি এখনও পর্যন্ত মোট ৩৮ টি সফট ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করেছে চাঁদের মাটিতে।

২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। ল্যান্ডার বিক্রম-কে চাঁদের মাটিতে নামাতে গিয়েও শেষ অবধি অধরাই রয়েছিল স্বপ্ন। ব্যর্থ হয়েছিল ইসরোর চন্দ্রযান ২। একেবারে শেষ মুহূর্তে বদলে যায় সব হিসেব নিকেশ! ভুলকে স্বীকার করে, তা থেকে শিক্ষা নিয়েই চন্দ্রযান ৩-এর প্রস্তুতি শুরু হয় দেশে। ১৪ জুলাই শুক্রবার, শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে চন্দ্রাভিযানের জন্য নির্ধারিত সময়ের কিঞ্চিৎ আগেই রওনা দিয়েছে চন্দ্রযান ৩। সব ঠিক থাকলে ৪০ দিন পর চাঁদের মাটি ছোঁবে চন্দ্রযান ৩। চন্দ্রযান কর্মসূচির এটি ২০ বছর পূর্তিও।

ভারত সরকার প্রথম চন্দ্রযান কর্মসূচি নেয় ২০০৩ সালে। তখনও বিজেপি সরকার। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ী আনুষ্ঠানিকভাবে চন্দ্রযান প্রকল্পের ঘোষণা করেন। দিনটাও ছিল বিশেষ, ১৫ অগাস্ট। চন্দ্রযান নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রচার হয়েছিল ২০১৯ সালে। চন্দ্রযান ২-এর পাড়ি দেওয়ার কথা চাঁদে। দিয়েওছিল কিন্তু অবতরণ করতে পারেনি। সারা দেশ দেখেছিল বিজ্ঞানীদের হতাশা, কান্নায় ভেঙে পড়া। সেদিনের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ফের প্রস্তুতি নেওয়া হয় চন্দ্রযান ৩ এর উৎক্ষেপণের।

সেই চন্দ্রাভিযানে পাঠানো অরবিটরটি এখনও চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। তাই এবার নতুন করে আর কোনও অরবিটার পাঠাতে হয়নি চাঁদের কক্ষপথে। কক্ষপথে থাকা চন্দ্রযান ২ এর অরবিটারের সাহায্যেই এবার চাঁদে নামবে চন্দ্রযান ৩ এর ল্যান্ডার আর তার ভিতরে থাকা রোভার। 

চন্দ্রপৃষ্ঠে সফল অবতরণ করতে পেরেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন এবং প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই ৩ শক্তিশালী দেশের পর ভারত এই কৃতিত্ব অর্জনকারী চতুর্থ দেশ হিসেবে উঠে আসতে পারে যদি চন্দ্রযান ৩ সফলভাবে নেমে পড়তে পারে চাঁদের জমিতে৷

আরও পড়ুন- চাঁদের গুঁড়ো দিয়ে পৃথিবী বাঁচানোর ভাবনা! কেন এমন উদ্ভট রাস্তা বেছে নিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা?

চন্দ্রযান ৩-এ রয়েছে একটি ল্যান্ডার মডিউল (LM), একটি প্রপালশন মডিউল (PM) এবং একটি রোভার। এই ল্যান্ডার মডিউলটিই চাঁদে সফট ল্যান্ডিং ঘটাতে সাহায্য করবে। প্রপালশন মডিউলের কাজ হচ্ছে এই চন্দ্রযানের চালনা এবং নিয়ন্ত্রণ পরিচালনা করা। রোভার চন্দ্রপৃষ্ঠে নানা অনুসন্ধান চালাবে এবং বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করবে। চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডারের নাম বিক্রম এবং রোভারের নাম প্রজ্ঞান।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, শুক্রবার দুপুর ২.৩৫ মিনিটে উৎক্ষেপণের প্রায় ১৬ মিনিটের পরে, প্রপালশন মডিউলটি রকেট থেকে আলাদা হয়ে যাবে এবং উপবৃত্তাকারে প্রায় ৫-৬ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে। এই উপবৃত্তাকার পথটির পৃথিবী থেকে সবচেয়ে কম দূরত্ব ১৭০ কিমি এবং সবচেয়ে দূরের পথটি হচ্ছে ৩৬,৫০০ কিমি।

গতি অর্জনের পরে ল্যান্ডারের সঙ্গে প্রপালশন মডিউলটি চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছনোর জন্য এক মাসেরও বেশি দীর্ঘপথ পাড়ি দেবে। ঠিকঠাক অবস্থানে পৌঁছনোর পরে, ল্যান্ডার মডিউলটি চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে সফট ল্যান্ডিংয়ের জন্য নামতে শুরু করবে। এই ঘটনাটি ২৩ বা ২৪ অগাস্ট ঘটবে বলে আশা করছে ISRO।

পৃথিবীর সব মহাকাশ সংস্থাগুলি এখনও পর্যন্ত মোট ৩৮ টি সফট ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করেছে চাঁদের মাটিতে। সাফল্যের হার ৫২ শতাংশ।

More Articles