কোভিশিল্ডের আরও দুই ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া! গবেষণায় ফাঁস হচ্ছে একের পর এক সত্য

Covishield Side Effects: ২০২১ সালে কোভিড মহামারী থেকে বাঁচতে ভারতে Covishield এবং ইউরোপে Vaxzevria নামে বিক্রি হয়েছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন।

কোভিশিল্ড নিরাপদ ছিল না। ভ্যাকসিন নেওয়ার বছর দুয়েক কেটে যাওয়ার পরে, বহুজনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর জানা গেছে, সারা ভারতবর্ষ যে সংস্থাকে বিশ্বাস করে কোভিশিল্ড টিকা নিয়েছিল কোভিডের থেকে বাঁচতে তাতে ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্মা জায়ান্ট AstraZeneca অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় তৈরি করেছিল কোভিডের ভ্যাকসিন। কিছুদিন আগেই সংস্থা সেই বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা স্বীকারও করে। এবার আরও দুই ভয়াবহ পার্শপ্রতিক্রিয়ার কথা প্রকাশ্যে এল। দেখা গেছে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে ইমিউন থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া এবং থ্রম্বোসিস (VITT)-এর ঝুঁকি বাড়ছে। এটি একটি বিরল কিন্তু মারাত্মক রক্ত জমাট বাঁধার রোগ।

২০২১ সালে কোভিড মহামারী থেকে বাঁচতে ভারতে Covishield এবং ইউরোপে Vaxzevria নামে বিক্রি হয়েছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। Oxford-AstraZeneca-র এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে VITT দেখা গেছে বহুজনের শরীরে। গবেষকরা বলছেন, "প্লেটলেট ফ্যাক্টর 4 (বা PF4) নামক প্রোটিনের বিরুদ্ধে একটি অস্বাভাবিকভাবে বিপজ্জনক রক্তের অটোঅ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।" এটিই VITT-এর কারণ।

আরও পড়ুন- কোভিডের ভ্যাকসিন নিয়ে মৃত্যু সন্তানদের! কতটা ভয়াবহ এই কোভিশিল্ড?

২০২৩ সালে পৃথক এক গবেষণায়, কানাডা, উত্তর আমেরিকা, জার্মানি এবং ইতালির বিজ্ঞানীরা PF4 অ্যান্টিবডির খানিক একই সমস্যা লক্ষ্য করেছিলেন। প্রাকৃতিক অ্যাডেনোভাইরাস (সাধারণ ঠান্ডা লাগা) সংক্রমণের পরে কিছু ক্ষেত্রে এই অ্যান্টিবডির সমস্যা মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়।

এখন একটি নতুন গবেষণায়, অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, অ্যাডেনোভাইরাস সংক্রমণ-সম্পর্কিত VITT এবং ক্লাসিক অ্যাডেনোভাইরাল ভেক্টর VITT দুই ক্ষেত্রেই PF4 অ্যান্টিবডির একই মলিকিউলার ফিঙ্গারপ্রিন্ট রয়েছে। "আসলে, এই রোগগুলিতে প্রাণঘাতী অ্যান্টিবডি উৎপাদনের পথগুলি কার্যত অভিন্ন হতে হবে এবং একই রকম জেনেটিক ঝুঁকির কারণও থাকতে হবে," বলেছেন ফ্লিন্ডারের অধ্যাপক টম গর্ডন।

ওই গবেষক উল্লেখ করেছেন, অ্যাডেনোভাইরাস (সাধারণ সর্দি লাগা) সংক্রমণের পরে রক্ত জমাট বাঁধার বিরল ক্ষেত্রে VITT হতেই পারে, এরসঙ্গে ভ্যাকসিনের প্রভাব জড়িত রয়েছে। গবেষকদের এই একই দল ২০২২ সালের একটি গবেষণায় PF4 অ্যান্টিবডির আণবিক কোডটিকে ভাঙে এবং জেনেটিক ঝুঁকির কারণ চিহ্নিত করে।

আরও পড়ুন- ভ্যাকসিন-ভীতির ফায়দা তুলে শহর জুড়ে জালিয়াতি! পরের নিশানা আপনি নন তো?

অ্যাস্ট্রাজেনেকা ইতিমধ্যেই আইনি নথিতে স্বীকার করেছে, তাদের তৈরি কোভিড ভ্যাকসিন 'খুব বিরল ক্ষেত্রে, থ্রম্বোটিক থ্রম্বোসাইটোপেনিক সিনড্রোম (TTS)' সৃষ্টি করতে পারে। TTS হলো একটি বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যাতে মানুষের রক্ত জমাট বাঁধতে পারে এবং রক্তের প্লেটলেট সংখ্যা কম হতে পারে। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে কমপক্ষে ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে ঠিক এই কারণে। শ'য়ে শ'য়ে মানুষ গুরুতর রোগে ভুগছেন।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা ইতিমধ্যেই ইওরোপ এবং অন্যান্য বাজার থেকেও তাদের কোভিড ভ্যাকসিন বিক্রির অনুমোদন প্রত্যাহার করেছে। অর্থাৎ বিশ্বে এই ভ্যাকসিন আর পাওয়া যায় না। কেবল তা রয়ে গেছে কোটি কোটি মানুষের রক্তে যারা সংস্থাকে বিশ্বাস করে, রাষ্ট্রকে বিশ্বাস করে ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। কোভিড থেকে বাঁচতে গিয়ে অকালে ভুগে মারা যাচ্ছেন তারা।

More Articles