চন্দ্রযান ৩-র সাফল্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে শেষ ১৫ মিনিটেই! কেন জরুরি 'সন্ত্রাস'-এর এই ১৫ মিনিট?
15 Minutes Of Terror, Chandrayaan-3: অভিজ্ঞরা বলছেন, চন্দ্রযান ৩-র সাফল্যের অনেকখানিই নির্ভর করছে অবতরণের চূড়ান্ত ১৫ মিনিটের উপর। সেখানেই নাকি নির্ধারণ হতে চলেছে চাঁদের মাটিতে ভারতের ভাগ্য।
সেই 'সত্তর মিনিট'! বিশ্বকাপের চূড়ান্ত ম্যাচে নামার আগে যে 'সত্তর মিনিট' মহিলা হকি টিমের হাতে তুলে দিয়েছিলেন কোচ কবীর খান। বলেছিলেন, এই সত্তর মিনিট তোমাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ঈশ্বরেরও নেই। 'চক দে ইন্ডিয়া' ছবির সেই সংলাপ আজও ইতিহাস। তবে চন্দ্রযান ৩-র জন্য় অতটাও সময় নেই। ইসরো জানিয়েছে, সত্তর মিনিট নয়, অবতরণের শেষ পনেরো মিনিটই নাকি দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। তার উপরেই নির্ভর করছে চন্দ্রযান ৩-এর বিশ্বকাপ জয় থুড়ি চন্দ্রাভিযানের সাফল্য। আর কিছুক্ষণের অপেক্ষা। চাঁদের মাটিতে পা রাখবে ভারত। উঠে আসবে আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের সঙ্গে প্রথম সারিতে। দেশজোড়া প্রার্থনা আর উত্তেজনার মধ্যেই উঁকি মারছে সংশয়।
আরও পড়ুন: চাঁদ ছুঁতে কয়েক ঘণ্টা! কেন তীরে এসে তরী ডুবেছিল চন্দ্রযান ২-এর?
২০১৯ সালে চাঁদের মাটিতে যে উপগ্রহখানা পাঠিয়েছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, তা যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে আছড়ে পড়েছিল চাঁদের মাটিতে। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল। সেই চন্দ্রযান ২-এর অরবিটারের সঙ্গে কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে মুলাকাতও হয়ে গিয়েছে চন্দ্রযান ৩-এর বিক্রমের। সে বেচারা একা একা আজও ঘুরপাক খেয়ে যাচ্ছে চাঁদের চারপাশে অভিশপ্ত আত্মার মতো। দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানের ব্যর্থতার ক্ষত আজও টাটকা বিজ্ঞানীদের বুকে। সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই চন্দ্রযান ৩-র ব্যাপারে আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না বিজ্ঞানীরা। গত ১৪ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেয় চন্দ্রযান ৩। গত ৫ অগস্ট পৌঁছেও যায় চাঁদের কক্ষপথে। পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুসারে, ২৩ অগস্ট, বুধবার সন্ধে পৌনে ছ'টা নাগাদ চাঁদের মাটিতে পা রাখার কথা ছিল সেটির। তবে সেই সময় পিছিয়ে হয় সন্ধে ৬টা বেজে ৪। তার মধ্যেই ইসরোর তরফে জানানো হয় অনুকূল পরিস্থিতি না পেলে আরও পিছোতে পারে সময়। তেমন প্রয়োজন হলে বুধবারের পরিবর্তে রবিবার চাঁদে অবতরণ করবে চন্দ্রযান ৩। তবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে নির্ধারিত সময়ের দেড় দু'ঘণ্টা আগে। ফলে প্রবল আগ্রহ নিয়ে দুরুদুরু বুক নিয়ে অপেক্ষা করছে আপামর দেশ। কখন চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ইতিহাস গড়বে ভারত।
তবে অভিজ্ঞরা বলছেন, চন্দ্রযান ৩-র সাফল্যের অনেকখানিই নির্ভর করছে অবতরণের চূড়ান্ত ১৫ মিনিটের উপর। সেখানেই নাকি নির্ধারণ হতে চলেছে চাঁদের মাটিতে ভারতের ভাগ্য। কেন জরুরি এই পনেরো মিনিট। চারদিকে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, সফট ল্যান্ডিং শব্দটি। শুনতে সহজ হলেও আদতেই খুব একটা সহজ নয় ব্যাপারটি। জটিল প্রযুক্তিগত কৌশল রয়েছে এর পিছনে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, তার জন্য অনুভূমিক অবস্থান বদলে উলম্বিক অবস্থানে আসতে হবে ল্যাডারটিকে, এবং চাঁদের মাটি ছোঁয়ার জন্য অবতরণের গতি কমিয়ে আনতে হবে অনেকটাই।
ওই শেষ ১৫ মিনিটের উপরেই নির্ভর করছে অনেককিছুই। প্রাক্তন ইসরো চেয়ারম্যান কে সিভানের কথায় ওই শেষ ১৫ মিনিট আদতে সন্ত্রাসের ১৫ মিনিট। ২৩ অগস্ট, বুধবার সন্ধে ৬.০৪ মিনিটে চন্দ্রযান ৩-এর চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কথা। সেই হিসেবে ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত ডিবুস্টিং সম্পন্ন করে ফেলার কথা চন্দ্রযান ৩-এর। যার ফলে চাঁদের আরও কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে সেটি।
আরও পড়ুন:চাঁদের মাটি ছোঁয়ার অপেক্ষায় চন্দ্রযান-৩, ভারতের চাঁদে যাওয়ার নেপথ্যে যেসব তুখোড় মস্তিষ্ক…
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, চন্দ্রযানটি যখন চাঁদ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে থাকবে, তখনই চন্দ্রযানটির গতি একেবারে কমিয়ে ফেলা হবে। ঘণ্টায় ১.৬৮ কিলোমিটার থেকে যা নেমে আসবে একেবারে শূন্যতে। যাতে সফট ল্যান্ডিং করতে কোনও রকম অসুবিধার মধ্যে না পড়ে চন্দ্রযানটি। ২০১৯ সালে ঠিক এইখানেই এসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল চন্দ্রযান ২। ফলে এই বার এই পর্যায়ে এসেই অতিরিক্ত সতর্ক বিজ্ঞানীরা। সেই সতর্কতা হিসেবেই ল্যান্ডারে রয়েছে সেন্সর। যা ল্যান্ডিং প্রক্রিয়ার প্রথম দশ মিনিটের মাথয় ৩০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে ৭.৪২ কিলোমিটার উচ্চতায় নামলেই গতি কমাতে শুরু করবে। বুধবার বিকেল ৫.৪৭ মিনিট নাগাদ চূড়ান্ত অবতরণের প্রক্রিয়া শুরু করবে চন্দ্রযান ৩। আর জরুরি ওই পনেরো মিনিটের প্রক্রিয়াটি কম্পিউটার লজিকের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ল্যান্ডারের কম্পিউটার ও নেভিগেশন সিস্টেমে ভরে দেওয়া হয়েছে। জানা যাচ্ছে, অবতরণের জন্য অনুভূমিক অবস্থান থেকে প্রায় ৯০ ডিগ্রি উল্লম্বিক অবস্থানে পৌঁছতে হবে চন্দ্রযানটিকে। যাতে নিরাপদে চাঁদের মাটি ছুঁতে পারে সেটি।
এই এতসব জটিল প্রযুক্তিগত বিষয়আশয় সম্পাদিত হবে ওইটুকু সময়ে। আর তার জন্য প্রতিকূল পরিবেশ পাওয়া যাবে কি আদৌ? আদৌ কি চাঁদের মাটি ছোঁয়া হবে ভারতের। চূড়ান্ত উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রতীক্ষা করছে গোটা দেশ।