জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, মানুষের দৈনন্দিন যে কাজগুলোর সঙ্গী হতে চলেছে ChatGPT
ChatGPT AI Use Extension : আমরা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে যা কাজ করি, সেখানেও অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারে এই প্রযুক্তি
যত দিন যাচ্ছে, প্রযুক্তির জগতে একের পর এক নতুন জিনিস সামনে আসছে। মানুষের চারপাশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এমন বিস্ফোরণ সবকিছুই বদলে দিচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে, গত ২-৩ মাস ধরে একটাই জিনিস লোকের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কর্পোরেট জগত থেকে টেক কনটেন্ট – সমস্ত জায়গাতেই তাকে নিয়ে আলোচনা। চ্যাট জেনারেটেড প্রি-ট্রেইনড ট্রান্সফর্মার, সংক্ষেপে চ্যাটজিপিটি (ChatGPT)। এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই চ্যাট বটের দিকেই এখন তাকিয়ে প্রযুক্তির জগত। ভবিষ্যৎ পৃথিবীর রূপরেখা তৈরি করে দিতে পারে এই বিশেষ প্রযুক্তি, মত বিশেষজ্ঞদের।
২০২২ সালের নভেম্বর মাস। প্রথমবার বাজারে আসে চ্যাটজিপিটি। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওপেনএআই’ (OpenAI) নামের সংস্থা এই বিশেষ প্রযুক্তি তৈরি করে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, এই সংস্থাটি তৈরি করেছিলেন খোদ ইলন মাস্ক! তিনি অবশ্য এখন ওপেনএআইয়ের বোর্ড সদস্য নন। কিন্তু ওপেনএআই তার জায়গা থেকে সরেনি। চ্যাটজিপিটি মানুষের সঙ্গে খুব স্বাভাবিকভাবে যোগাযোগ করতে পারে। এই ব্যাপারটাই মাথায় রেখে তৈরি করছিলেন প্রযুক্তিবিদরা। সেই সহজাত আদানপ্রদানের ক্ষমতাকে হাতিয়ার করেই একের পর এক কাজ করে চলেছে চ্যাটজিপিটি।
আরও পড়ুন : সুতোয় ঝুলছে চাকরি, ChatGPT-এআইয়ের ধাক্কায় কাজ হারিয়ে পথে বসতে পারেন আপনিও!
প্রযুক্তিবিদদের বক্তব্য, অন্যান্য এআই চ্যাট বটের থেকে অনেক বেশি কার্যকর এই চ্যাটজিপিটি। জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, মানুষের প্রায় সব কাজই নাকি করে দিতে পারে এটি। বাচ্চাকে পড়ানোর কাজ, কভার লেটার তৈরি, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, বই লেখা – অনেক কাজই করে দিতে পারে চ্যাটজিপিটি; তাও অনেক কম সময়। এটাও ঠিক, এই প্রযুক্তির অনেক বাধ্যবাধকতা আছে। চ্যাটজিপিটির কাছে বিশাল তথ্যভাণ্ডার নেই। তাই তার লেখা, কাজে কতটা নতুনত্ব রয়েছে, কপিরাইট ইস্যু তৈরি হবে কিনা, সেটা বড় প্রশ্ন। তথ্য না পেলে নিজে বানিয়ে লেখার সম্ভাবনাও কতটা, সেটা নিয়েও সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।
তবুও এই মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এই চ্যাটজিপিটি। তার এমন সাফল্য দেখে গুগল, কুওরা (Quora)-র মতো বেশকিছু সংস্থা নিজেদের চ্যাট বট এনেছে; যা অনেকটা চ্যাটজিপিটির মতোই কাজ করে। কিন্তু চ্যাটজিপিটিকে কেবল অফিসের কাজেই ব্যবহার করা যাবে, তেমনটা নয়। আমরা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে যা কাজ করি, সেখানেও অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারে এই প্রযুক্তি। তার ফলে আমাদের কাজও অনেকটা সহজ হয়ে উঠতে পারে। ঠিক কোন কোন কাজ, আসুন জেনে নেওয়া যাক।
১) গুগল ক্রোমের এক্সটেনশন
মেল চেক করা হোক কিংবা ফেসবুক, টুইটারে পোস্ট – গুগল ক্রোম এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটা অঙ্গ। অধিকাংশ মানুষ নিজেদের ফোন হোক বা কম্পিউটার – সবেতেই এই ব্রাউজারের সাহায্য নেন। এবার সেই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে চ্যাটজিপিটি। কেবল গুগল ক্রোমের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে হবে। তারপর যেমন নির্দেশ দেবেন, তেমনভাবেই কাজ করবে চ্যাটজিপিটি।
২) সার্চ ইঞ্জিন
গুগল ক্রোম, ফায়ারফক্স, মাইক্রোসফট এজ – অনেকরকম চেনা অচেনা সার্চ ইঞ্জিন আমদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কিছু একটা জানতে গেলে সেই সার্চ ইঞ্জিনের দিকেই তাকিয়ে থাকি আমরা। চটপট টাইপ করে কাঙ্খিত জিনিসটি খুঁজে বের করে নিই। এবার সেই সার্চ ইঞ্জিনের সঙ্গে চ্যাটজিপিটিকে যোগ করে নিলে কাজটি আরও সহজ হয়ে যাবে। কীভাবে? ইতিমধ্যেই বাজারে সার্চ ইঞ্জিনগুলোর জন্য চ্যাটজিপিটি এক্সটেনশন চলে এসেছে। সেটি ডাউনলোড করে যে কোনও সার্চ ইঞ্জিনের সঙ্গে জুড়ে নিলেই হবে।
কী হবে এর ফলে? আপনি যখন কোনও একটা জিনিস সার্চ করবেন, তখন সেই সার্চ ইঞ্জিনের পাশাপাশি (গুগল ক্রোম হোক বা ফায়ারফক্স) চ্যাটজিপিটিও নিজে থেকে তার উত্তর দেবে। আলাদা করে চ্যাটজিপিটির অ্যাপ্লিকেশন খুলতে হবে না। ওই সার্চ ইঞ্জিনের ভেতরেই এই কাজটি করবে।
আরও পড়ুন : সামান্য তথ্য জানতে বারবার গুগল ঘাঁটছেন? অজান্তে আপনিও এই বিশেষ রোগের ফাঁদে পড়ছেন
৩) ভয়েসের মাধ্যমে কাজ
প্রতিটা কম্পিউটারেই ভয়েস রেকগনিশন সিস্টেম আছে। সেইসঙ্গে বাজারে রয়েছে সিরি বা অ্যালেক্সা-র মতো ভয়েস সাপোর্ট অ্যাসিসটেন্ট। সেই একই কাজ করতে পারে চ্যাটজিপিটিও। তার বিশেষ এক্সটেনশনের মাধ্যমে আরও সহজভাবে স্রেফ কথা বলেই কাজ ক্রতে পারবেন আপনি।
৪) হোয়াটসঅ্যাপেও চ্যাটজিপিটি
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। কর্মজগত হোক বা ব্যক্তিগত জীবন – প্রতিটা ক্ষেত্রে এই বিশেষ মেসেজিং অ্যাপটি আমাদের নিত্যসঙ্গী। সেইসঙ্গে রয়েছে টেলিগ্রামও। এবার এই দুটি ক্ষেত্রেও জুড়ে যেতে চলেছে চ্যাটজিপিটি! গিটহাব নামের ওয়েবসাইটেই রয়েছে চ্যাটজিপিটির এমন বিভিন্ন এক্সটেনশন। যেগুলো ডাউনলোড করে হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা টেলিগ্রামের সঙ্গে জুড়ে নিতে হবে। এর মাধ্যমে বিশেষ চ্যাট বটও তৈরি করে নেওয়া যায়।
৫) মাইক্রোসফট ওয়ার্ড
পিপিটি তৈরি হোক, বা লেখালেখির কাজ, হিসেবের কাজ, ব্যালেন্স শিট তৈরি – সবেতেই অন্যতম প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার হল মাইক্রোসফট অফিস। ওয়ার্ড, পাওয়ার পয়েন্ট, আউটলুক, এক্সেল… আমাদের জীবনে এদের অবদান অনস্বীকার্য। এর আগে গ্রামারলি-র মতো বেশকিছু সফটওয়্যার মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের সঙ্গে জুড়ে নিয়ে কাজ করা যেত। এবার সেখানেই জায়গা করে নিতে চলেছে চ্যাটজিপিটি। গিটহাব ওয়েবসাইটেই রয়েছে বিশেষ এক্সটেনশন। সেটি ডাউনলোড করে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে যোগ করে নিলেই কাজ শুরু।