অমর হওয়ার জন্য বছরে ২ মিলিয়ন ডলার খরচ করেন তিনি।
সমস্ত পরীক্ষা বিফলে? অমর হতে চেয়ে যৌবন হারালেন বিখ্যাত এই উদ্যোক্তা
Bryan Johnson Anti-aging Experiment: গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে রেপামাইসিন ওষুধটি আসলে জৈবিক বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করেছে। যৌবন রক্ষার পরিবর্তে, দ্রুত বয়স বাড়িয়ে দিতে পারে এই ওষুধ।
মানুষ যদি মানুষ মারতে পারে, মানুষ যদি দুরারোগ্য রোগ সারানোর ওষুধ আবিষ্কার করতে পারে, মানুষ যদি অন্য গ্রহে বাসা বাঁধার কথা ভাবতে পারে, তাহলে অমর হতে বা চিরযৌবন ধরে রাখতে পারে না কেন? এভারগ্রিন বা চিরসবুজ বলে কয়েকজনকে আমরা ডেকে থাকি ঠিকই কিন্তু তা নেহাতই শ্রদ্ধা অথবা তাঁর অদম্যভাবের জন্য। শারীরিকভাবে চিরযৌবন থাকা বিজ্ঞানে অসম্ভব! তবে ইমমর্টালিটি মুভমেন্টও তো চলছে বিশ্বে! অর্থাৎ মানুষ বিশ্বাস করছে, চাইলে ঘড়িয়ে উল্টোদিকে হাঁটানো যায়, দেহ পট সনে নট সকলই হারায় না! বিখ্যাত টেক টাইকুন তথা বায়োহ্যাকার ব্রায়ান জনসন আধুনিক এই অমরত্ব আন্দোলনের মুখ। অমর হওয়ার জন্য বছরে ২ মিলিয়ন ডলার খরচ করেন তিনি। এই টাকার বিনিময়ে নিজের দেহে হাজারও পরিবর্তন ঘটান তিনি। কখনও ছেলের তাজা রক্ত নিজের দেহে সঞ্চালন করান, কখনও নিজের দেহের সম্পূর্ণ প্লাজমাই বদলে নতুন প্লাজমা নেন। অমর হওয়ার সমস্ত সম্ভাব্য পথই তিনি ব্যবহার করে ফেলেছেন। কিছুকাল আগে ব্রায়ান জনসনের ভারত সফরেও এসেছিলেন। পডকাস্টার নিখিল কামাথের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারের কথা ছিল তাঁর। তবে বায়ুর গুণমান অত্যন্ত খারাপ হওয়ার কারণে পডকাস্ট রেকর্ডিং থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি। ভারতীয়দের উদ্দেশে বলেছিলেন, "নিজেদের সংগঠিত করুন"ম বলেছিলেন বায়ুদূষণ বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে।
সাম্প্রতিকতম এক স্বীকারোক্তিতে, ৪৬ বছর বয়সী ব্রায়ান জনসন এক তিক্ত সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন বিশ্বকে। বলেছেন, বার্ধক্যকে ধীর করতে গিয়ে হয়তো বুড়িয়ে যাওয়ার গতি বাড়িয়ে ফেলেছেন তিনি। চিরযৌবন হওয়ার নেপথ্যে ব্রায়ান একটি নির্দিষ্ট ওষুধের কথা বলেছেন, Rapamycin। নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিওতে ব্রায়ান জনসন বলছেন রেপামাইসিন বিষয়ে তাঁর হিসেবনিকেশে হয়তো বড় ভুল থেকে গেছে। রেপামাইসিন হচ্ছে মূলত ইমিউনোসপ্রেসেন্ট, মূলত অঙ্গ প্রতিস্থাপন হওয়া রোগীদের জন্যই এটি তৈরি। তবে এই ওষুধের অ্যান্টি-এজিং ক্ষমতা নিজে অনেক গবেষণা হয়, ব্রায়ান জনসন নিজে পাঁচ বছর ধরে এই ওষুধটি পরীক্ষা করছিলেন।
View this post on Instagram
২০০৯ সালের একটি গবেষণায় জানা যায়, রেপামাইসিন ইঁদুরের আয়ুষ্কাল ১৪% পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০২৩ সালে মানুষের উপর একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই ওষুধ খেয়ে ৬৫% রোগীরা সুস্থ বোধ করেছেন। ব্রায়ান জনসন এই ওষুধের সম্ভাব্য সুবিধা এবং ঝুঁকির ভারসাম্য বজায় রাখতে নানা ডোজে খুব সতর্ক হয়েই এই ওষুধ খেতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু বয়স থমকে যাওয়ার পরিবর্তে অস্বস্তিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করতে শুরু করেন তিনি।
আরও পড়ুন- অবিশ্বাস্য! বয়সকে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন এই ব্যক্তি? কীভাবে?
দেখা যায়, মুখের মধ্যে ঘা হতে শুরু করছে। ক্ষত সারতে অনেক সময় লাগছে, কোলেস্টেরলের ভারসাম্যহীনতা দেখা যাচ্ছে। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো বিশ্রামরত অবস্থাতেও জনসনের হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এই উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দেয় ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা। নতুন এই গবেষণা বলছে, গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে রেপামাইসিন ওষুধটি আসলে জৈবিক বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করেছে। যৌবন রক্ষার পরিবর্তে, দ্রুত বয়স বাড়িয়ে দিতে পারে এই ওষুধ - অন্তত জনসনের ক্ষেত্রে তো বটেই।
যে বার্ধক্যকে এড়াতে তিনি কোটি কোটি টাকা খরচ করেছেন, সেই বার্ধক্যের মুখোমুখি হয়ে, ব্রায়ান জনসন অবশেষে সত্যকে সহজে নেওয়ার পথেই এগোচ্ছেন। জানিয়েছেন, ওই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। তার মানেই যে তিনি সম্পূর্ণ পরীক্ষা থেকে সরে এসেছেন এমন নয়। তিনি বলছেন, সাফল্য এবং ব্যর্থতা দুই বিষয়ে কথা বলাই গুরুত্বপূর্ণ। ব্রায়ান জনসন নিজে কোটি কোটি টাকা খরচ করে অমর হওয়ার বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করাচ্ছিলেন নিজেরই উপর, জেনেশুনেই তিনি এই পথে হেঁটেছেন, প্রচণ্ড রকমের ঝুঁকি নিয়েছেন, অসম্ভবকে বাস্তব করে দিতে চেয়েছেন। তবে একটি বিষয় স্বীকার্য, বার্ধক্যের বিরুদ্ধে দৌড়তে গিয়ে সবচেয়ে পরীক্ষিত পদক্ষেপও ব্যুমেরাং হয়ে যেতে পারে। বায়োহ্যাকিং আদতে সম্ভব কিনা তা এখনও প্রশ্নই রয়ে গেল। ব্রায়ান জনসন সেই বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার এক বিশাল দরজা খুলে দিয়েছেন। তবু, অমরত্বের শর্টকাট হয় কিনা, এই নিয়ে কতদূর অবধি মানুষের কাটাছেঁড়া করা উচিত তা প্রাকৃতিক নিয়মের সঙ্গে মানুষের এক লড়াইয়েরও সূচনা করে দিয়ে গেল নিঃসন্দেহে।