মানচিত্রে গা-জোয়ারি, উলটে ভারতকেই শান্ত থাকতে বলছে চিন?

China map: চিনের তৈরি ওই স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপ ২০২৩ সংস্করণ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে চিনের সমস্ত দাবি নস্যাৎ করা হয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে।

একটু একটু করে কৌশলে ভারতের ভূমি নিজেদের মানচিত্রে কি ঢুকিয়ে নিচ্ছে চিন। বেজিং প্রকাশিত নয়া মানচিত্র দেখে তেমনটাই মালুম হচ্ছে। তবে ভারতও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। অন্তত চিনকে তো নয়ই। 'বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী' বলে গর্জে উঠেছে তারাও। চিনের তৈরি ওই স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপ ২০২৩ সংস্করণ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে চিনের সমস্ত দাবি নস্যাৎ করা হয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে।

আরও পড়ুন: নতুন মানচিত্রে ভারতের একাধিক জায়গা নিজেদের বলে দাবি! ঠিক কী করতে চাইছে চিন?

সোমবারই চিনের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে মানচিত্রের ২০২৩ সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। যেখানে দেখা যায় অরুণাচল প্রদেশের বেশ কিছুটা অংশ ও আকসাই চিনকে নিজেদের অংশ হিসেবে দেখিয়েছে চিন। আর এর পড়েই নড়েচড়ে বসে ভারত। ভারত দীর্ঘকাল ধরেই এই ভূখণ্ডগুলিকে নিজেদের বলে দাবি করে এসেছে। হঠাৎ করে ২০২৩ সালে এসে এই এলাকাগুলির স্বত্ত্ব চিন দাবি করে বসায় ব্যাপারটি ভাল চোখে দেখেনি নয়াদিল্লি।

এমনিই চিনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নয় ভারতের। কোনও ক্রমে যুদ্ধ ঠেকিয়ে রেখেছে দু'দেশই। বছর দুয়েক আগেই লাদাখ সংলগ্ন গালওয়ান সীমান্তে যুযুধান হয়ে পড়েছিল দুই পক্ষ। সে সময় লড়াই আটকানো গেলেও ভূখণ্ডের লড়াই নিয়ে আজও উত্তাপ কমেনি দুই দেশের মধ্যে।

সাম্প্রতিক ওই মানচিত্রে চিন দাবি করেছে, অরুণাচল আসলে দক্ষিণ তিব্বতের মধ্যে পড়ে ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের সময়ই নাকি ওই এলাকা দখল করে নিয়েছিল চিন। নতুন মানচিত্রে দক্ষিণ চিন সাগরকেও নিজেদের অংশ বলে দাবি করেছে চিন। এ বিষয়ে চিনের তরফে জানানো হয়েছে, সে দেশের আইন অনুযায়ী এই মানচিত্রের সংস্করণ একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। চিনের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন জানান, চিন আশা করছে, অন্য পক্ষ বিষয়টি বুঝবেন এবং শান্ত ভাবে ব্যাপারটি বিবেচনা করবেন।

চিনের আগ্রাসন এবং বারবার ভূখণ্ড দখলের চেষ্টার কারণে এমনিতেই যথেষ্ট বিব্রত কেন্দ্র সরকার। এরই মধ্যে চিনের এই নয়া পদক্ষেপের জেরে চাপ বেড়েছে নয়াদিল্লির। এই পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কোণঠাসা করতে ছাড়েনি বিরোধীরাও। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী জানান, চিনের এই সীমানা লঙ্ঘন নিয়ে বেজিংয়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা উচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। এর আগেও বহুবার ভারতীয় ভূখণ্ডের উপর আগ্রাসন দেখিয়েছে চিন। তবে বেজিংয়ের এই সাম্প্রতিক দাবি দু'দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে বলেই মনে করছেন রাহুল।

২০১৯ সালে যখন লাদাখকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়, সেসময় বিনাকারণেই গর্জে উঠেছিল চিন। ভারতের তরফে জানানো হয়েছিল, আন্তর্জাতিক সীমানার কোনও রকম পরিবর্তন করা হচ্ছে না। তা সত্ত্বেও ব্যাপারটি নিয়ে যথেষ্ট উত্তেজনা তৈরি করেছিল বেজিং। এদিকে, এবার যখন ভারতের গোটা এলাকাকেই নিজেদের মানচিত্রে ঢুকিয়ে ফেলেছে তারা, তাকে রুটিন প্রক্রিয়া বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে চিনের বিদেশ মন্ত্রক।

আরও পড়ুন: কম বয়সী কনে জোগাড় করলেই মিলবে দেদার টাকা! আজব নিয়ম চিনে

এই প্রসঙ্গে নিজেদের কড়া অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তাঁর সাফ কথা, চিনের এই নয়া মানচিত্রের দাবি সম্পূর্ণ ভাবে অমূলক, এবং নিজেদের ভূখণ্ড ও সীমান্ত সম্পর্কে সম্পূর্ণ রূপে সচেতন ভারত। ফলে চিনের এই অমূলক আবদারকে কোনও ভাবেই আশকারা দেবে না নয়াদিল্লি।

More Articles