খাদে ঝুলছে দোকান, চিনের নতুন আশ্চর্যে হাঁ বিশ্ব

Store In The Sky: সমতল থেকে প্রায় ৩৯৩ ফুট উপরে দোকানটির অবস্থান। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন পাহাড়টি আঁকড়ে কোনও মতে টিকে রয়েছে সেটি। একটু এদিক-ওদিক হলেই ঘটে যেতে পারে বিপদ।

পাহাড়ের খাদে দোকান! তা-ও আবার প্রায় ৩৯৩ ফুট উঁচুতে! আসেন খদ্দের, চলে কেনাকাটাও। কীভাবে, তা আম-আদমিদের কাছে বিস্ময়। কিন্তু কারও কারও কাছে এ-ও আদতে দুর্দান্ত এক অ্যাডভেঞ্চার। রোজের ছকবাঁধা জীবনের ফাঁকে যেন একটু অক্সিজেন। আসলে  প্রতিদিনের রোজনামচা, দিনগত আয়ুক্ষয় তো মাঝেমধ্যেই আমাদের ক্লান্ত করে, অবসন্ন করে। তখন বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছা করে যে দিকে দু'চোখ চায়। বুকের ভিতর কেউ বলে ওঠে- 'ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন'। কিন্তু সেই বেদুইন হয়ে ওঠা সহজ নয়, দুঃসাহসী হয়ে ওঠাও মুখের কথা নয়।

 আরও পড়ুন: কেন অষ্টম আশ্চর্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয় একে? যে রহস্য বয়ে বেড়াচ্ছে স্বয়ং রাবণের রাজপ্রাসাদ

তবে সত্যিই যদি কেউ তেমন দুঃসাহসী হতে চান, তবে কিন্তু আমাদের আশপাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অজস্র উপাদান। শুধু তাদের চিনে নেওয়ার পালা। যা রোজের জীবনকেই করে তুলতে পারে দারুণ রোমাঞ্চকর। রোমাঞ্চের সঙ্গে ঝুঁকির সম্পর্ক তো চিরকালীন। তাই একটু আধটু ঝুঁকি না থাকলে আর রোমাঞ্চ কীসের! আর তেমনই রোমাঞ্চের স্বাদ ছড়িয়ে রয়েছে চিনের রাস্তায়।

খুব সাধারণ কাজ, মানে ধরুন দোকান, বাজার, কেনাকাটার মধ্যেও যে মিলতে পারে দুর্দান্ত অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ, তা ভাবা কঠিন। কিন্তু চিনের হুনান প্রদেশের শিনুঝাই ন্যাশনাল জিওলজিক্যাল পার্কে রয়েছে এমনই একটি দোকান, যেখানে কেনাকাটা করতে যাওয়া কোনও অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের চেয়ে কম নয়। দোকান বাজারের সুবিধা কোনও জায়গাকে আরও বেশি সচল, আরও বেশি সুবিধাজনক করে তোলে। তবে শিনুঝাই ন্যাশনাল জিওলজিক্যাল পার্কের এই দোকানের অবস্থানই এত বন্ধুর, যে তার আশপাশে জনবসতি বা অন্যান্য সুবিধা পাওয়াই রীতিমতো কঠিন ব্যাপার।

তা সত্ত্বেও এই দোকানে ভিড় করেন খদ্দেররা। না জিনিসপত্রের প্রয়োজনে নয়, বরং অ্যাডভেঞ্চারের নেশায়। আসলে গোটা চিন জুড়েই এমন নানান অদ্ভুত, আশ্চর্য সব জিনিসপত্র ছড়িয়ে রয়েছে। তার সবচেয়ে কারণ বোধহয় চিনের ভূখণ্ডগত বৈচিত্র্য। ইতিহাস, সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সেই বিষয়টি।

সমতল থেকে প্রায় ৩৯৩ ফুট উপরে দোকানটির অবস্থান। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন পাহাড়টি আঁকড়ে কোনও মতে টিকে রয়েছে সেটি। একটু এদিক-ওদিক হলেই ঘটে যেতে পারে বিপদ। বিজ্ঞান আমাদের শিখিয়েছে, মাধ্যাকর্ষণ বলে একটি ব্যাপার রয়েছে। যার জেরে আপেল মাটিতেই পড়ে, উড়ে যায় না। যার জেরে আমরা পৃথিবীর উপরে শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি। তবে সেই তত্ত্বকেই সরাসরি সওয়াল করে ফেলেছে দোকানটি। পাহাড়টি আঁকড়ে যে কীভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে দোকানটি, তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মজার ব্যাপার, সিমেন্ট নয়, কাঠের তৈরি এই দোকানটি। সামান্য কিছুটা দূর থেকে দেখলেও মনে হবে যেন একটি দেশলাইবাক্স পাহাড় থেকে ঝুলছে।

ইতিমধ্যেই 'মোস্ট ইনকনভেনিয়েন্ট' অর্থাৎ 'সবচেয়ে অসুবিধাজনক' দোকানের শিরোপা অর্জন করে নিয়েছে চিনের এই দোকানটি। আসলে পর্বতারোহীদের সাহায্যের উদ্দেশ্য নিয়েই খোলা হয়েছিল দোকানটি। পাহাড়ে উঠতে উঠতে পথক্লান্ত পর্বতারোহী যাতে সেই দোকান থেকে সামান্য জল বা টাটকা খাবার কিনে খেতে পারেন, তাই এই ব্যাবস্থা। ফলে এই দোকানে পৌঁছতে চাইলে পাহাড় চড়তে জানার প্রশিক্ষণ যে থাকতেই হবে, তা তো জানা কথাই।

 

পৃথিবীর আর কোথাও এমন উচ্চতায় এমন ঝুলন্ত দোকান আছে কিনা জানা নেই। পথক্লান্ত পথিকদের জন্য যেখানে সতেজ খাবার, জলের ব্যবস্থা তো আছেই, আর যারা রোজের জীবনে একঘেয়ে কাজের মধ্যে থেকে থেকে ক্লান্ত, তাদের জন্য রয়েছে প্রাণখোলা অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ। সম্প্রতি সবচেয়ে অসুবিধাসম্পন্ন দোকানটির ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন এক ব্যবহারকারী। আর তার পরেই ভাইরাল হয়ে যায় পোস্টটি।

আরও পড়ুন: ওদের কাছে গুগল-ই ঈশ্বর, যে ভাবে চলছে সাধনা…

পৃথিবীতে অনেক কিছুই এমন হয়, যার যুক্তি হোরাশিওর কাছে কেন, কারওর কাছেই খোঁজা মুশকিল। তবু সেসব আমাদের জীবনে কিছুটা হলেও অস্বাভাবিকের দোলা নিয়ে আসে। পাহাড়ের খাদে ঝুলতে থাকা এই দোকানও অনেকটা তেমন। বেদুইন-জীবনের সংজ্ঞাটা যেন দূর থেকেই খুব সহজ করে বুঝিয়ে দিতে জানে চিনের এই মোস্ট আনকনভেনিয়েন্ট দোকানটি। আসলে জীবন তো প্রতিদিনই নানারকম চ্যালেঞ্জ, ঝুঁকিতে ঠাসা। যতই কঠিন হোক না কেন, আমরা তার থেকে মুখ লুকোতে পারিনা। এই দোকান যেন সেই কথাই মনে করিয়ে দেয় আরও একবার।

More Articles