মিউজিয়ামে ঢুকে মোনালিসার মুখে স্যুপ! কেন এমন কাণ্ড ঘটালেন ওঁরা?
Mona Lisa: ষোড়শ শতকে আঁকা জগৎজোড়া চিত্রশিল্পগুলির মধ্যে একটি লিওনোর্দো দ্য ভিঞ্চির 'মোনালিসা'। সেই বিখ্যাত চিত্রকর্মটির উপরেই এবার স্যুপ ছুড়ে মারলেন বিক্ষোভকারীরা।
যে কৌনিক বিন্দু থেকেই তাঁকে দেখা হোক না কেন, সব সময়েই তাঁর মুখে লেগে থাকে একটা আলতো হাসি। তিনি হাসছেন না, অথচ তিনি হাসছেন। ষোড়শ শতকে আঁকা জগৎজোড়া চিত্রশিল্পগুলির মধ্যে একটি লিওনোর্দো দ্য ভিঞ্চির 'মোনালিসা'। সেই বিখ্যাত চিত্রকর্মটির উপরেই এবার স্যুপ ছুড়ে মারলেন বিক্ষোভকারীরা। প্রতিবাদে লোকে বিক্ষোভ করে, ধর্না দেয়। প্রয়োজনে কুশপুতুলও পোড়ায়। তবে দামী দামী ছবির উপর স্যুপ ছুড়ে মারার মতো এমন অভিনব প্রতিবাদ আগে কেউ কখনও দেখেছেন কিনা সন্দেহ। তবে তেমনই দৃশ্যের সাক্ষী রইল এবার প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়াম।
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির এই শিল্পকর্মটির জগৎজোড়া নাম। কেউ ভিঞ্চি সম্পর্কে আর কিছু জানুক ছাই না জানুক, 'মোনালিসা'-র কথা শোনেননি, এমন মানুষ বিরল। সম্প্রতি একটি প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছিল ল্যুভর মিউজিয়ামে। যেখানে দর্শকদের জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছিল বিখ্যাত ছবিটি। আর সেখানেই স্বাস্থ্যকর ও টেকসই খাবারের অধিকারের দাবিতে মোনালিসার মুখে স্যুপ ছুড়ে মারলেন দুই বিক্ষুব্ধ মহিলা।
আরও পড়ুন: অবশেষে রহস্য উদ্ধার! কোথায় বসে আছেন ভিঞ্চির মোনালিসা? জানলে চমকে উঠবেন…
শিল্প জরুরি না স্বাস্থ্যকর খাবারদাবার বেশি গুরুত্বপূর্ণ? এই প্রশ্ন লাখ টাকার। সত্যিই খাদ্যসুরক্ষা প্রয়োজনীয় তো বটেই। তবে তার জন্য এই ভাবে ঐতিহাসিক একটি ছবিকে কলুষিত করা যায় কি, যেমনটা করেছেন তাঁরা! বিক্ষোভকারীদের দাবি, দেশের কৃষিব্যবস্থায় ঘুন ধরে গিয়েছে, প্রতিদিন অসংখ্য কৃষকের মৃত্যু হচ্ছে দেশ জুড়ে। সেখানে দাঁড়িয়ে এমন শিল্পপ্রদর্শনীর জনসমাজে প্রয়োজন কতটা, প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। সংগ্রহশালাটিতে কালো পর্দা টাঙিয়ে বিক্ষোভও প্রদর্শন করেন প্রতিবাদীরা। রিপোস্ত অ্যালিমেন্তেয়ার ( ফুড কাউন্টারঅ্যাটাক) নামক একটি সংগঠন এই ঘটনার দায় নিয়েছে।
যদিও 'মোনালিসা'-র ছবিটির কোনও ক্ষতি হয়নি। কারণ সেটি গ্লাস দিয়ে আড়াল করা ছিল। ফলে স্যুপের কণাও ছুঁতে পারেনি ছবিটিকে। তবে প্রতিবাদের মাধ্য়ম হিসেবে এমন একটি কাজ কতটা গ্রহণযোগ্য, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। এই ধরনের ঐতিহাসিক ও বহুমূল্য চিত্রশিল্প যে কোনও দেশেরই সম্পদ। শুধু দেশের নয়, গোটা পৃথিবীর সম্পদ। খাদ্য সুরক্ষার দাবিতে আদৌ তার অবমাননা করা যায় কিনা, উঠেছে সওয়াল।
বহুদিন ধরেই খাদ্য ও তার সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়আশয়গুলিকে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ভিতরে ঢোকানোর দাবি উঠেছে প্যারিসে। বর্তমানে যে খাদ্যব্যবস্থা চালু রয়েছে ফ্রান্সে, তা অনিশ্চয়তায় ভরপুর। এমনটাই দাবি আন্দোলনকারীদের। পাশাপাশি তা খাদ্যের মৌলিক অধিকারেরও পরিপন্থী। এই প্রথম নয়, এর আগেও রিপোস্ত অ্যালিমেন্তেয়ারের সদস্যরা একটি পেন্টিংয়ের উপরে কুমড়োর সস ছুড়ে মারে। তবে সে যাত্রাতেও বেঁচে গিয়েছিল ছবিটি। ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর কথা জানিয়েছে সংগ্রহশালা কর্তৃপক্ষ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে উঠেছে নিন্দার ঝড়। ফ্রান্সের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন।
BREAKING:
— AshB (@RealAshishBatra) January 28, 2024
Mona Lisa Vandalized!
Protesters hurl soup at the Mona Lisa painting in Paris today, but it was protected from damage by its glass casing.
“Two activists from the environmental movement ‘Riposte Alimentaire’ sprayed pumpkin soup on the armoured glass protecting the… pic.twitter.com/Zk80rJY64B
সাম্প্রতিক কালে একাধিক বার কৃষক বিক্ষোভের মুখে পড়েছে প্যারিস। ক্রমশ দাম বাড়ছে জ্বালানির। পাশাপাশি কৃষি ও খাদ্য নিয়ে সরকারের একাধিক নিয়মকানুনের জালে কৃষকদের অবস্থা আরও কঠিন। দিন কয়েক আগেই প্যারিসের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। সেই বিক্ষোভেরই অংশ হিসেবে মিউজিয়ামের ভিতরে এই বিশৃঙ্খলতা তৈরি করেছিল ওই সংগঠনের সদস্যরা।
আরও পড়ুন: প্যারিসের মিউজিয়াম থেকে চুরি গেল মোনালিসা ছবি
অবশ্য বারবারই ল্যুভর মিউজিয়াম এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। বিশেষত হামলার মুখে পড়েছে ভিঞ্চির 'মোনালিসা' নামে ছবিটিই। কেন ভিঞ্চির ছবির উপরেই এত রাগ, তার কারণ অবশ্য পরিষ্কার নয়। ১৯৫০ সালের গোড়ার দিকে মোনালিসা চিত্রশিল্পটির উপরে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়া হয়েছিল। তখনও কাচের আড়ালেই ছিল ছবিটি। ২০১৯ সালে ছবিটি রক্ষা করতে বুলেটপ্রুফ গ্লাস আরও মজবুত করা হয়। ২০২২ সালেই এক বিক্ষোভকারী ছবির মুখে কেক ছুড়ে মারেন। শুধু কি তাই, ১৯১১ সালে এই মিউজিয়াম থেকেই চুরি হয়ে গিয়েছিল পেন্টিংটি। পরে জানা যায়, জাদুঘরেরই এক কর্মী ছবিটি আলমারিতে লুকিয়ে রেখেছিলেন। পরে সেটিকে পুরনো জিনিসপত্রের ডিলারের কাছে বিক্রি করতে গিয়ে ইতালির ফ্লোরেন্সের কাছে ধরা পড়েন তিনি। উদ্ধার হয় ভিঞ্চির 'মোনালিসা'।