দুই বাংলার স্রোত মেশে এখানে, একদিনের ছুটিতে ঘুরে আসুন এই ‘মিনি সুন্দরবন’ থেকে

Short weekend trip, taki, টাকি ভ্রমণ, দুই বাংলার স্রোত মেশে এখানে, একদিনের ছুটিতে ঘুরে আসুন এই মিনি সুন্দরবন থেকে, কাছেপিঠে ভ্রমণ, tour, travel, near kolkata, picnic spot

এ বছরের মতো ফিরতি পথে শীত, বসন্তের আগমনের আভাস ইতিমধ্যেই জানা দিচ্ছে বাতাস। তবুও শেষ বেলায় যতটুকু সময় হতে আছে তাতেই কাছেপিঠে ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ পেলে মোটেই হাত ছাড়া করতে চান না বাঙালি। এমনিতেই ভ্রমণপ্রিয় এই জাতি। তার ওপর ব্যস্ত জীবনের ইঁদুর দৌড়ে হাঁসফাঁস করে ওঠা প্রাণটুকুকে একটু বিশ্রাম দিতে সপ্তাহান্তের ছুটিতে হাওয়া বদল করতে চান অনেকেই। সময়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বাঙালি তাই এখন লম্বা ছুটিতে দিপুদা ভ্রমণের পরিবর্তে কাছেপিঠে অফবিট ভ্রমণের দিকেই বেশি ঝুঁকছে। আর এই তালিকাতেই একটি চির পরিচিত জায়গা টাকি।

যদিও খুব অফবিট মোটেই বলা চলে না টাকিকে। দুই বাংলার মিলনস্থলে অবস্থিত এই জায়গাটি বহুকাল ধরেই অনেক ইতিহাসের সাক্ষ্য দিয়ে আসছে। আজও প্রতি বছর দুর্গাপুজোর বিজয়ার দিন লক্ষ লক্ষ মানুষ এসে জড়ো হয় এখানে। নৌকা বিহারে দুই বাংলার দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের সেই দৃশ্য প্রতি বছর নতুন করে মোহ সৃষ্টি করে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের দাগ আজও সযত্নে লুকিয়ে রেখেছে টাকি। বয়ে বেড়াচ্ছে সেদিনের যন্ত্রণাও।

আগের থেকে অনেক বদলে গিয়েছে টাকি। সময়ের তালে তাল মিলিয়ে নিজেকে ভ্রমণ প্রিয় বাঙালির উপযোগী করে তুলেছে এই জায়গাটি। কলকাতা থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত শহর টাকি। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন তালিকায় এর জায়গা যথেষ্ট ওপরের দিকে। যেহেতু ব্যস্ত কর্মজীবনে আজকাল লম্বা ছুটির অবকাশ বিশেষ নেই তাই, সপ্তাহান্তের ছুটিতেই ভরসা করতে হয় মানুষকে। আর ঠিক সেই কারণেই আরও জনপ্রিয়তা বেড়েছে টাকির। কলকাতা থেকে দিনের দিন গিয়ে আবারও ফিরে আসা যায় ইছামতী নদীর তীরে অবস্থিত এই জায়গাটি থেকে। সঙ্গীকে নিয়ে নিরিবিলি পরিবেশে কাটানোর পাশাপাশি পরিবার কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিক করতে চাইলেও দারুণ বিকল্প হতে পারে টাকি। নদীর চড়ে বসে ইছামতীর স্রোতের সঙ্গে সহজেই ভেসে যাওয়া যায় এখানে।

আরও পড়ুন - কলকাতার খুব কাছেই রয়েছে ‘মিনি আন্দামান’, কম খরচে ঘুরে আসুন এই জায়গা থেকে 

‘গয়নার বাক্স’, ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘পাখি’, ‘অপুর পাঁচালি’, ‘গল্প হলেও সত্যি’, ‘বিসর্জন’-এর মতো ছবির শুটিং হয়েছে এই টাকিতে। টিভি সিরিয়ালের শুটিংয়ের জন্যও প্রযোজক-পরিচালকেরা বর্তমানে বেছে নিচ্ছেন টাকিকে। এখানকার মনভোলানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নৈসর্গিক রূপ মুগ্ধ করে সকলকে।

কী কী দেখবেন?

এই টাকিতেই জালালপুরের কাছে সম্প্রতি গড়ে উঠেছে মিনি সুন্দরবন। তাই পকেটের সঙ্গে যখন সমঝোতা না হওয়ায় সুন্দরবন যাওয়ার শখ মাঠে মারা যেতে বসেছে ঠিক তখনই চলে আসতে পারেন স্বল্প খরচের মিনি সুন্দরবনে। এখানে গোলপাতা, গরান, কেওড়া, বাইন, কাঁকাড়ার মতো গাছ লাগানো হয়েছে। জঙ্গলের মধ্যে যাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে লম্বা সেতু। জালালপুরেই আছে নন্দদুলালের মন্দির, সোদপুরে জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরীর বাড়ি, পীরের দরগা, পদ্মপুকুর-সংলগ্ন পার্ক। ভ্রমণের সঙ্গে যোগ করে নিতে পারেন এইসব জায়গাগুলিও। আরও বেশ কিছু দর্শণীয় স্থান রয়েছে টাকিতে। যেমন - টাকি রাজবাড়ি, মাছরাঙা দ্বীপ, জোড়া মন্দির, ইছামতীর ধারে বৃদ্ধাশ্রম, বিধান সৈকত, ইকো ট্যুরিজম পার্ক, রামকৃষ্ণ মিশন, হেমন্ত ঘোষাল স্মৃতিসৌধ, সাংস্কৃতিক মঞ্চ-সহ আরও অনেক কিছু। এছাড়াও রয়েছে ইছামতীর বুকে লঞ্চ ও নৌকা ভ্রমণের সুযোগ। মাঝ নদী থেকে ওপার বাংলাকে যেন ছুঁয়ে দেখা যায় টাকিতেই। পিকনিক করতে চাইলেও রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা, এর জন্য অবশ্য আলাদা করে আগে থেকে বুকিং করে নিতে হয়। খরচ মোটামুটি জন প্রতি পাঁচশো টাকার আশেপাশে।

কীভাবে যাবেন?

শিয়ালদহ বা দমদম স্টেশন থেকে হাসনাবাদ লোকালে চেপে নামতে হবে টাকি স্টেশনে। সময় লাগবে ঘণ্টা দুয়েক। স্টেশনে নেমেই মিলবে টোটো। টোটোয় চেপে মিনিট দশেকের মধ্যেই পৌঁছে যেতে পারবেন টাকি রাজবাড়ি তথা পিকনিক স্পট। এছাড়াও ধর্মতলা থেকে হাসনাবাদের বসে চেপেও পৌঁছে যাওয়া যায় টাকি।

More Articles