লকআপে সন্দেশখালির ত্রাস! কীভাবে গ্রেফতার হলো শেখ শাহজাহান?

Sheikh Shahjahan Arrested : গত ৭ জানুয়ারি থেকেই শাহজাহানের এবং অনুগামীদের বিরুদ্ধে লাগামছাড়া অত্যাচারের অভিযোগ তুলে পথে নামের সন্দেশখালির মহিলারা।

সন্দেশখালির মহিলারা বলেছিলেন, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দার গ্রেফতার হওয়াতে মিষ্টিমুখ হয়েছে কিন্তু সমস্ত কুকীর্তির মাথা, শেখ শাহজাহান গ্রেফতার হলে পিকনিক হবে সন্দেশখালি জুড়ে। গ্রেফতার হয়েছেন শেখ শাহজাহান। যখন হয়েছেন, সন্দেশখালি তখন গভীর ঘুমে। ঘুম ভেঙে এই ঘবর পেতেই হুড়মুড়িয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন সাধারণ মানুষ, অত্যাচারিত মহিলারা। ৫৫ দিন পর অবশেষে রাজ্যপুলিশ মিনাখাঁর বামনপুকুর থেকে থেকে গ্রেফতার করেছে শেখ শাহজাহানকে। রাত দুটোর পর থেকেই তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ। চারটের মধ্যে গ্রেফতার হয় শাহজাহান। ভোরবেলাতেই জনরোষ এড়াতে বসিরহাট মহকুমা কোর্ট লকাপে নিয়ে আসা হয় তাঁকে কনভয় করে।

গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতি মামলায় সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি করতে গিয়েছিল ইডি। শাহজাহানকে ছোঁয়া তো দূর অস্ত, শেখ শাহজাহানের বাহিনীর হাতে মার খেয়ে পালিয়ে আসতে হয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আধিকারিকদের। এই ঘটনার পর থেকেই শেখ শাহজাহান নিখোঁজ ছিলেন। যদিও এলাকাবাসীরা বারেবারেই বলছিলেন, সন্দেশখালিতেই আছেন শেখ শাহজাহান। গত ৭ জানুয়ারি থেকেই শাহজাহানের এবং অনুগামীদের বিরুদ্ধে লাগামছাড়া অত্যাচারের অভিযোগ তুলে পথে নামের সন্দেশখালির মহিলারা। জোট বেঁধে হাতে লাঠি, কাটারি নিয়েই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন মহিলারা। উঠে আসতে থাকে সন্দেশখালি জুড়ে চলতে থাকা একের পর এক ভয়াবহ ঘটনার খবর। সন্দেশখালি ছিল শেখ শাহজাহান ও তাঁর দলবলের ক্ষমতা প্রদর্শনের অবাধ ক্ষেত্র। জমি দখল, ভেড়ি দখল, কাজ করিয়ে টাকা না দেওয়া, প্রতিবাদ করলে বাড়ির মহিলাদের ক্লাবে তুলে আনা, সারা রাত রেখে দেওয়া, শ্লীলতাহানি, মানসিক অত্যাচার- কী অভিযোগ নেই তাঁদের বিরুদ্ধে। মহিলারা শিবু হাজরার পোল্ট্রি ফার্মে আগুন ধরিয়ে দেন। গণরোষের মুখে পড়ে শাহজাহানের দলের দুই নেতা উত্তম সর্দার এবং শিবপ্রসাদ হাজরা ওরফে শিবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে শাহজাহান ছিল অধরা। শাহজাহানের গ্রেফতারির দাবি ঘিরে সন্দেশখালির এই আন্দোলন সারা দেশের রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে ওঠে। বিজেপি নামে মাঠে, শাসকদল তৃণমূলের উপর বাড়তে থাকে চাপ।

 

আরও পড়ুন- শাহজাহান কোথায়? ‘ওঁরাই’ সবটা জানেন!

ক'দিন আগেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, হাইকোর্টই পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছিল। শাহজাহানের গ্রেফতারির উপর স্থগিতাদেশ ছিল, না হলে রাজ্য পুলিশ আগেই শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারত। গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট জানায়, শাহজাহানকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারবে না এমন কোনও স্থগিতাদেশ দেওয়াই হয়নি।রাজ্য পুলিশকে কোনও বাধা দেওয়া হয়নি। ইডির মামলায় সিট গঠনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি জানান, সিবিআই, ইডি এবং রাজ্য পুলিশ যে কেউই শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারে।

হাইকোর্টের এই শেখ শাহজাহান সংক্রান্ত নির্দেশের পরেই তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয় আদালতের জটেই আটকে ছিল শাহজাহানের গ্রেফতারি। এবার সাত দিনের মধ্যে শাহাজাহান গ্রেফতার হবেন। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘোষণা করার ঠিক চার দিনের মাথায় গ্রেফতার হয়েছেন শাহজাহান। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, শাহজাহান কোথায় আছে তা শাসকদল জানে, রাজ্যপুলিশের আশ্রয়েই নিরাপদে আছে শাহজাহান। অভিষেক বলেছিলেন, তৃণমূল পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককেও রেয়াত করেনি তাই শাহজাহানকে না ধরার কোনও কারণই নেই।

তৎপরতা শুরু হয় শাহজাহানকে নিয়ে। একাধিক মামলা ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। হিংসা ছড়ানো, দাঙ্গা বাঁধানো, প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন শাহজাহান। শাহজাহানের খোঁজে দু'দিন ধরেই পুলিশ সন্দেশখালির বিভিন্ন স্থানে খোঁজ শুরু করে। মোবাইলের লোকেশন, শেষ কবে দেখা গিয়েছে এই বিষয়ক তথ্য জোগাড়ের ততপরতা দেখে বোঝা যাচ্ছিল শাহজাহান গ্রেফতার হতে চলেছেন শিগগিরই।

More Articles