স্কুলে যাচ্ছে সন্তান, করোনা-আতঙ্কের মাঝেই || যেটুকু সতর্কতা নিতেই হবে

করোনা-আবহে টানা দু'বছর স্কুল-কলেজে শারীরিকভাবে উপস্থিত থেকে পঠনপাঠন বন্ধ ছিল। অবশেষে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্যে প্রাথমিক উচ্চমাধ্যমিক-সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি খুলে গেছে। ১৫ বছরের কম বয়সি পড়ুয়াদের তখনও ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে ১৬ মার্চ থেকে দেশজুড়ে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করে সরকার। তবে এখনও বাকি শিশুদের জন্য ভ্যাকসিন। এই কারণে প্রথমদিকে শিশুদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে খানিক দোটানায় ছিলেন অভিভাবকরা। রাজ্য সরকারের তরফেও জানানো হয়েছিল যে, স্কুল খুললেও ক্লাসে যোগ দেওয়া সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছাধীন। তবে সময় গড়াতেই কেটে গেছে সেই কুণ্ঠাবোধ। যথাসম্ভব বিধিনিষেধ মেনেই শিশুদের স্কুল পাঠান অভিভাবকরা। 

কিন্তু শিশুদের অনেকেরই করোনা-আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে আসতে শুরু করেছে। দিল্লিতে রবিবার পর্যন্ত করোনা-আক্রান্ত হয়ে যে ৫১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তার ২৭ শতাংশ শিশু। সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়তেই মা-বাবারাও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সন্তানের স্বাস্থ্য সম্পর্কে। 

তবে সংক্রমণের এই পর্যায়ে প্রশাসনও শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল খোলা রাখার পক্ষপাতী। তার মূল কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, গত দু'বছর করোনা অতিমারীর কারণে স্কুল বন্ধ থাকার ফলে পড়ুয়াদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়। ইউনিসেফ-এর রিপোর্ট অনুসারে, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতে দশ বছর বয়সি পড়ুয়াদের ৭০ শতাংশই সাধারণ কোনও অক্ষর বা পাঠ্য পড়া ও বোঝার ক্ষমতা হারিয়েছে। বিশ্বব্যাপী ৩৭০ মিলিয়নেরও বেশি শিশু স্কুল বন্ধের কারণে একবেলার পর্যাপ্ত খাবার থেকেও বঞ্চিত হয়েছে, যা পুষ্টির এক নির্ভরযোগ্য উৎস, ভারতে এই সমস্যা আরও প্রকট। সুতরাং, এই পরিস্থিতিতে যদি আরও একবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ হয়ে যায়, তার ফল হবে মারাত্মক। তাই স্কুলে গেলেও ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সন্তানকে বাঁচানোর উপায় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে হবে অভিভাবকদের। এর ফলে শিশুদের মধ্যে বিধিনিষেধ পালনের সচেতনতা গড়ে উঠবে। কীভাবে কোভিড নিরাপত্তার পাঠ দেবেন আপনার সন্তানকে, রইল তার বিশদ বিবরণ‌।

আরও পড়ুন: স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছবি মিত্তল || পুরুষদেরও হতে পারে এই রোগ?

• সন্তানকে ভাইরাস বা সংক্রমণ সম্পর্কে অযথা ভয় দেখাবেন না। বরং খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে বুঝিয়ে বলুন, ভাইরাস এবং শরীরের ওপর এর ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে। 

• সমাজ ও পরিবারের অংশ হিসেবে সে কীভাবে রুখে দিতে পারে সংক্রমণের শৃঙ্খলকে, সেকথা বোঝানোও জরুরি তাকে। 

• কোভিডের বিধিনিষেধ যথাযথভাবে পালন না করলে কী ফলাফল হতে পারে, তা ধৈর্য ধরে বুঝিয়ে বলুন।

• সন্তানের স্কুল ব্যাগে কিছু টিস্যু বা রুমাল এবং স্যানিটাইজার রাখতে কোনওভাবেই ভুলবেন না। পাশাপাশি খেয়াল রাখুন সেগুলি যেন তারা ব্যবহারও করে। 

• সর্বদা যেন মাস্ক পড়ে থাকে, সে-ব্যাপারে সন্তানকে উৎসাহ জোগান। 

• সহপাঠীদের সঙ্গে যেন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে সে ব্যাপারেও সচেতন করুন আপনার সন্তানকে। তাদের বুঝিয়ে বলুন, আমরা সংক্রমণ রুখতে উদ্যোগী, বন্ধুর সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করতে নয়। 

• সন্তানকে বলুন স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলেই তা যেন আপনাকে জানায়। স্কুলে থাকাকালীন কোনওভাবে অসুস্থ বোধ করলে যেন অবশ্যই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জানায়, সেকথাও বলুন তাঁকে। একইভাবে বন্ধুর অসুস্থতার কথাও যেন কোনওভাবেই গোপন না করে, সেদিকে নজর রাখতে শেখান। 

• কোভিডবিধি সম্পর্কে সন্তানকে সচেতন করুন এবং সেগুলি মেনে চলার পরামর্শ দিন। এক্ষেত্রে আপনি নিজেই যথাযথভাবে কোভিড বিধিগুলি পালন করে সন্তানের জন্য উদাহরণ তৈরি করতে পারেন। আপনাকে দেখে সেও খানিক অনুপ্রাণিত হতে পারে।

More Articles