পাক হামলায় নিহত ৪৬! কীভাবে বিষিয়ে গেল পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সম্পর্ক?
Pakistani Airstrikes On Afghanistan: সূত্রের খবর, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার গভীর রাতে প্রতিবেশী আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালায় মূলত টিটিপি-দের লক্ষ্য করে।
এই মুহূর্তে ভারতের পড়শি দেশগুলোর একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক অদ্ভুত জটিল সমীকরণের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। শুধু ভারত বাংলাদেশের কূটনৈতিক সঙ্কট নয়, এই মুহূর্তে নানা প্রতিবেশীই একে অন্যের সঙ্গে যুযুধান। মঙ্গলবার আফগানিস্তানের পূর্ব পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানি সামরিক বিমানের বোমা হামলায় কমপক্ষে ৪৬ জন নিহত হয়েছেন, যাঁদের বেশিরভাগই শিশু এবং মহিলা। আফগানিস্তানে এখন তালিবান শাসন। সেই দেশের চারটি জায়গায় হওয়া এই বোমা হামলায় ছয়জন আহত হয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে। এই হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী পাকিস্তানের দিকেই। যদিও সেই দেশের সরকার এবং সামরিক কর্মকর্তারা এই নিয়ে কোনও মন্তব্যই করেননি। তবে তালিবান শাসকেরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা প্রতিশোধ নেবে।
"আফগানিস্তান এই নৃশংস কাজটিকে সমস্ত আন্তর্জাতিক নীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আগ্রাসনের সুস্পষ্ট কাজ বলে মনে করে। ইসলামি রাষ্ট্রপুঞ্জ এই কাপুরুষোচিত কাজের যোগ্য জবাব না দিয়ে ছাড়বে না,” এক বিবৃতিতে বলেছেন জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র এনায়াতুল্লাহ খোয়ারজমি। এনায়াতুল্লাহ খোয়ারজামি, সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “পাকিস্তান পক্ষের বোঝা উচিত যে এই ধরনের স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপ কোনও সমস্যার সমাধান নয়।" সূত্রের খবর, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার গভীর রাতে প্রতিবেশী আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালায় মূলত টিটিপি-দের লক্ষ্য করে। আফগানিস্তানের জন্য পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি মহম্মদ সাদি কাবুলে অন্তর্বর্তীকালীন আফগান বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে দেখা করার কয়েক ঘণ্টা পরেই এই হামলা চালানো হয়, এই বছর দ্বিতীয়বার এমন বিমান হামলা চালানো হলো।
আরও পড়ুন- পাকিস্তানে ভয়াবহ স্বাস্থ্য-ঝুঁকির মুখে ১১ মিলিয়ন শিশু, শিশু-মৃত্যু ঠেকাতে পারবে পাক-সরকার?
পাকিস্তান বারবার আফগান সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করেছে, বিশেষ করে টিটিপি, যেটি পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে আন্তঃসীমান্ত হামলা চালায়। যদিও তালিবানরা এমন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে আশ্রয় দেওয়া বা তাদের অঞ্চলকে আন্তঃসীমান্ত আক্রমণের জন্য ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। এই বিষয়টি সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, পাকিস্তানি তালিবানি (টিটিপি) ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর একটি শিবিরের উপর বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। টিটিপি তালিবানদের অনুগত, তাঁদের নামটিও আফগান তালিবানদের থেকেই পাওয়া কিন্তু সরাসরি আফগানিস্তান শাসনকারী দলের অংশ নয় তারা। এই গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য পাকিস্তানে ইসলামিক ধর্মীয় আইন জারি করা, যেমন তালিবানরা আফগানিস্তানে করেছে।
পাকিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান এলাকায় টিটিপি একটি বড় টিটিপি হামলা চালায়। এই এলাকাটি আফগানিস্তানে পাকিস্তানের হামলার লক্ষ্য হওয়া শিবিরের অবস্থানের খুব কাছেই। সেখানে শনিবার এই হামলায় ১৬জন পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মী নিহত হন। আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, পাকিস্তানের বোমা হামলায় নিহতদের বেশিরভাগই ওয়াজিরিস্তানি উদ্বাস্তু- তাঁরা পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তান ভূখণ্ড থেকেই ওই দেশে গিয়েছিল।
দুই প্রতিবেশি দেশের মধ্যে এই সম্পর্ক এখন হামলা আর হামলার প্রতিশোধের জায়গাতেই দঁড়িয়ে আছে। পাকিস্তান বলেছে, সেই দেশে আফগানিস্তানের মাটি থেকে টিটিপি প্রথম হামলা শুরু করেছে। স্বাভাবিকভাবেই এই অভিযোগটি আফগান তালিবানরা অস্বীকার করেছে। পাকিস্তান আফগানিস্তানের সম্পর্ক জটিল হয় মার্চ মাসে। তালিবানদের অভিযোগ ছিল পাকিস্তানকে আফগান ভূখণ্ডে দু'টি বিমান হামলা চালিয়েছে যাতে পাঁচজন মহিলা ও শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। পাকিস্তান তখন বলেছিল, তারা আফগানিস্তানে 'গোয়েন্দাদের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান' পরিচালনা করেছে তবে সেই অভিযানের প্রকৃতি নির্দিষ্ট করেনি।
আরও পড়ুন- অবিবাহিত মহিলাদের কাজ বেআইনি! আফগানিস্তানে যে ভয়াবহ ‘শাসন’ চালাচ্ছে তালিবান
গত সপ্তাহেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে পাকিস্তান বলেছে, “৬,০০০ যোদ্ধা নিয়ে তৈরি টিটিপি আফগানিস্তানে কর্মরত বৃহত্তম সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। আমাদের সীমান্তের কাছেই তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়। এটি পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি এবং প্রতিদিনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।” তথ্য বলছে, আক্রমণ ও মৃত্যু পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, বিশেষ করে পাকিস্তানের অশান্ত উত্তর-পশ্চিম খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম বেলুচিস্তান প্রদেশে বাড়ছে অশান্তি, এই দুই জায়গাই আফগানিস্তানের সীমান্ত।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, এই বছরের প্রথম ১০ মাসে ১,৫০০টিরও বেশি হিংসার ঘটনার ফলে কমপক্ষে ৯২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ নামে এক গবেষণা সংস্থা, ২০২৪ সালে এ পর্যন্ত ৮৫৬টিরও বেশি হামলার কথা জানিয়েছে। ২০২৩ সালে এই হামলার সংখ্যা ছিল ৬৪৫টি। পাকিস্তান সরকার জুন মাসে আজম-ই-ইস্তেহকাম নামে একটি সামরিক অভিযান শুরু করে। অনেক আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক বিমান হামলা সম্ভবত এই অভিযানেরই অংশ।