আর্টিস্ট হতে চেয়েছিলাম, হলাম প্রকাশক

আমার একটা সময় স্বপ্ন ছিল আমি আর্ট প্র্যাকটিস করব, ছবি আঁকবো, আর্টিস্ট হব এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে এই পথে চলে আসলাম!

আগামী ২৮ জানুয়ারি বসতে চলেছে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। শেষ হবে ৯ ফেব্রুয়ারি। ১২ দিন ধরে চলবে বইয়ের উৎসব। বই নিয়ে চিন্তা-ভাবনা বদলেছে। প্রকাশক-মহলে এখন ই-বুক, পিওডি ইত্যাদি লব্জ ঘুরপাক খাচ্ছে। বহু প্রকাশক ব্যাবসা সুনিশ্চিয় করছেন তন্ত্রমন্ত্র-থ্রিলার ছেপে। তবে ব্যতিক্রমও আছে। তরুণদের মধ্যে কেউ কেউ নেহাত ছাপার জন্যেই ছাপছে না, বই নিয়ে তাঁরা রীতিমতো সিরিয়াস। গড়ে তুলতে চাইছেন সিরিয়াস প্রকাশনা। তেমনই এক ব্যতিক্রম খসড়া খাতা, যাদের বিষয়ভাবনা, বইয়ের গঠন স্বাতন্ত্র‍্য ইতিমধ্যেই চোখ টেনেছে। খসড়া খাতার কর্ণধার তন্ময় দাশগুপ্ত-র সঙ্গে  তনভিয়া বড়ুয়ারকথাবার্তা রইল ইনস্ক্রিপ্টের পাঠকদের জন্য।

কবে থেকে প্রকাশনা (খসড়া খাতা) শুরু করলেন?

লকডাউনের পর থেকে। লকডাউনের মধ্যে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছিল। পুরোপুরি কাজ শুরু হয় লকডাউনের পর থেকে। ২০২০-র শেষের দিকে।

কত পুঁজি নিয়ে প্রকাশনা শুরু করেছিলেন?

শূন্য। একদম শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম। আমার কোনো ধারণা ছিল না। একজন সামান্য সামান্য কিছু ধারণা দিয়েছিলেন। আমার খুব ভাগ্য ভাল যে কিছু ভালো প্রেসের সাথে কাজ করেছি। যেমন- শরদ ইম্প্রেশনের দেবাশিস আঢ্য আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন, বৈঠকখানার বাইন্ডার ঝন্টু দা, ডি অ্যান্ড পি অ্যান্টি গ্রাফিক্সের অর্ক মিত্র। এখনও শিখি। আমি ওঁদের সাথে কাজও করি বিভিন্ন রকমের। পরবর্তীকালে প্রতিক্ষণে কিছুদিন কাজ করেছি, সেখান থেকে কিছু শিখেছি। বর্তমানে রামকৃষ্ণ মিশনের উদ্বোধনের পুরো প্রোডাকশনটা আমি সামলাই। এখান থেকে আমি প্রতিনিয়ত সম্পাদনার বিষয়গুলি শিখি।

কাদের প্রকাশনা দেখে কাজ করতে এসেছেন?

এইভাবে এটা ঠিক বলা যায় না। ছোটবেলায় একটা সময় আনন্দের বইগুলোই সেরা মনে করতাম। মনে হতো, আনন্দের বইয়ের প্রোডাকশন সবচেয়ে ভাল। তার পর আরেকটু বড় হয়ে যখন বইপত্র দেখি, তখন কারিগর, লিরিক্যাল, প্রতিক্ষণ — এই সংস্থাগুলোর বইপত্র দেখে ভাল লাগত। এর পর যখন ইউরোপে গেলাম তখন ইউরোপের ক্যাটালগ বা বইপত্র দেখে ধারণা আরও বদলে গেল। সেই জায়গা থেকে বিভিন্ন ভাবনার শুরু। এইভাবে ভাবতে ভাবতেই কাজ চলছে।

তবুও, কাজ করতে এসে বাংলার কোন প্রকাশনাকে আপনারা বেঞ্চমার্ক বলে মনে করেন?

বইয়ের জগতে প্রতিযোগিতা হয় না। আমরা প্রত্যেকে একটা আইডিয়া নিয়ে কাজ করি। আমার চিন্তা-ভাবনা একরকম, আরেক জনের চিন্তা-ভাবনা আরেকরকম। আর পৃথিবীতে বহুমানুষ একইরকম ভাবেন। তার উদাহরণ একটা গ্লাস-থালা-বাটি দেখলেই বোঝা যায় আরকি। আমার মতো বহুমানুষ আবার একই ভাবছেন। তাই আলাদা করে বেঞ্চমার্ক ভাবার কিছু নেই। কিন্তু সবার থেকে আলাদা কিছু চিন্তা-ভাবনা করার চিন্তা আমার আছে।

আপনাদের প্রকাশনার বইপত্রের ডিজাইন,বইপত্র সাজানোর ধরন একটু আলাদা। এটাই কি আপনাদের ইউএসপি?

আসলে এটার কারণ হল- আমি ডিজাইনের ছাত্র ছিলাম। আমার ওরিয়েন্টেশনটা ডিজাইন নিয়ে। আমি ফাইন আর্টস নিয়ে পড়াশোনা করেছি। গভমেন্ট আর্ট কলেজ, তারপর কলাভবন। বলতে গেলে দীর্ঘদিন ধরে বই নিয়ে কাজ করা চলছে। বইয়ের ডিজাইন নিয়ে কাজ করার একটা জায়গা ছিল আরকি। সেই থেকে মনে হয়েছে ভাবা যেতে পারে। এই করতে করতে খেলার ছলেই এই প্রকাশনাটা হয়ে উঠেছে এবং কাজ করছি।

ঠাকুরবাড়ি আপনাদের চুম্বক, রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ-এর উপর আপনারা জোর দিচ্ছেন। এই ভাবনা কোথা থেকে এল? কলাভবনে পড়েছেন বলেই?

রবীন্দ্রনাথ নয়। বিশেষ করে অবনীন্দ্রনাথ-এর উপর আমরা জোর দিচ্ছি। কারণ, অবনীন্দ্রনাথ এবং গগনেন্দ্রনাথ এরা এবং ঠাকুরবাড়ির আরও কয়েকজন খুব গুরুত্বপূর্ণ। তার মধ্যে গগনেন্দ্রনাথ আমাদের চর্চায় অনেক কম উঠে এসেছে। অবনীন্দ্রনাথ সেই তুলনায় অনেকটাই উঠে এসেছে। কিছু দিন আগে অবনীন্দ্রনাথের ১৫০ চলে গেল। কিন্তু মঙ্গল প্রকাশনায় অবনীন্দ্রনাথকে নিয়ে নতুন কিছু দেখতে পাওয়া গেল না বা শিল্পী সমাজেও দেখতে পাওয়া গেল না। কিন্তু অবনীন্দ্রনাথ-কে আমরা যতটা সরল ভাবি, আদেও ততটা নয়। সেটা বাগেশ্বরী বিভিন্ন প্রবন্ধগুলো পড়লে বোঝা যায়। আর শিল্পকর্মগুলি দেখলেও বোঝা যায়। কিন্তু তাঁর অন্যান্য লেখা কত সহজ সরল। সবসময়ই সেই লেখাগুলোর মধ্যে আমার মনে হয় যেন আলাদা আলাদা করে সুকুমার রায়ের মতো করে অন্য কোনো অর্থ লুকিয়ে রয়েছে। অবশ্যই সেটা অবনীন্দ্রনাথের মাসি পড়লে তো বোঝাই যায়। মাসি-কে একটু কাল্পনিক চরিত্র বানিয়ে নিজেকে নিজেই বানিয়ে, নিজের সাথে কথা বলছে। তাই এর পাশাপাশি সব লেখাগুলোকে বসিয়ে আমার মনে হয়েছে যেন পাশাপাশি আরও কিছু অর্থ চলছে আরকি। এবং সেটা খুবই সমসাময়িক। সেই ভাবনা থেকেই কাজ করা কিন্তু অবনীন্দ্রনাথের বহু কিছু বাকি রয়ে গেছে। আমাদের সেই কাজ করার প্রচেষ্টা চলছে।

আপনারা পিওডি (প্রিন্ট অন ডিমান্ড) করেন, নাকি অফসেট প্রিন্টিং করেন?

আমাদের পিওডি তে খুব কম বই হয়। কারণ, আমাদের বই বেশ ভাল বিক্রি হয়। আমি পিওডি-কে ছোট করছি না। সারা পৃথিবীতে পিওডি চলে এসেছে। বড় বড় প্রকাশনারও পিওডি-তে চলে গেছে। পিওডি-তে বই ছাপছে বিক্রি হচ্ছে। বিষয়টা অফসেট বা পিওডি-র নয়। এখানে মার্কেট ভ্যালুটা বুঝে নিতে হয় যে এই বইটা কতটা চলবে। তার উপর নির্ভর করে আমি পিওডি করব নাকি অফসেট করব সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। আমার যদি মনে হয় বইটি ভাল চলবে তাহলে আমি পিওডি করব কেন? সে ক্ষেত্রে আমার ক্ষতি। আমি লং টাইম লাভ দেখব। পিওডি-র কিছু সমস্যা আছে লংজিবিটি কম, ছবি ভাল হয় না। তার সঙ্গে অফসেটের কোনো বিবাদ নেই। আমরা পিওডি কম করি। করি না এমন বলছি না। একটা প্রকাশনা তো শুধু বিখ্যাত বইয়ে চলে না। সেটা তার মুকুট হতে পারে না। আরও অনেক বিষয়ই থেকে যায় আরকি।

আপনাদের কোনো স্থায়ী কর্মী রয়েছে?

না, আমাদের কোনো স্থায়ী কর্মী নেই। এখানেও আমার ভাগ্য ভাল যে আমি কিছু মানুষজনকে পাশে পেয়েছি যারা অস্থায়ীভাবেই আমাদের সাথে কাজ করেন। কিছু ছাত্র-ছাত্রী আছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী-র। সেখানকার ছেলে-মেয়েরা খুব আনন্দের সাথে আমাদের সাথে কাজ করেন। সেটা আমাদের ভালই লাগে। তাতে আমরাও শিখি তারাও শেখে। আমরা একে অপরের পরিপূরক বলা চলে।

প্রুফে কারা কাজ করেন?

প্রথমত আমরা কাগজ বাঁচানোর কাজ করছি। আমরা ওয়ার্ডে প্রুফ দেখাই।‌ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী ছাত্র-ছাত্রীরাই দেখেন। শেষে একজন সিনিয়র দেখেন। এখানে শুধু বানানটা নয় পাশাপশি কিছু টেকনিক্যাল ভুলও দেখার চেষ্টা করি। আমরা বলব না যে তাতেও আমরা ভুল করি না। অজস্র ভুল থাকে। ভুল হয়ে যায়। হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমরা যতটা পারি চেষ্টা করি। একজন প্রকাশক সবটুকু পারে না। এখানে একটা চেন সিস্টেম আছে। একজন কম্পোজিটর আছে। প্রথমে একজন প্রুফ দেখেন, তার পর আরেকজন দ্বিতীয় প্রুফ দেখেন, তারপর আরেকজন তৃতীয় প্রুফ দেখেন। পুরোটাই নির্ভর করে এতগুলো মানুষের উপরে। তার পরেও আমাদের ভুল থেকে যায়।

আমাদের একটা ভুল রয়েছে। বাজারে কোন অভিধান দেখে কাজ হবে সেই নিয়ে আমরা অবগত নয়। এক একজন প্রুফরিডার এক-একরকম কাজ করেন। কিন্তু আমরা এতদিন পুরোটাই বাংলা একাডেমির মাধ্যমে করে এসেছি। যেমন, বিশ্বে ইংরেজিতে যখন কোনো কাজ হয় অক্সফোর্ড নিয়মেই কাজ হয়। ইংরেজিতে সব কিছু নিয়মে থাকার ফলে একটা সামঞ্জস্য থাকে। এটা একটা ভাল দিক। যেমন বাংলাদেশ বাংলা একাডেমিতে কাজ করতে পেরেছে। এতে অটোম্যাটিক বানান ঠিক হচ্ছে। স্পেস থেকে শুরু করে টেকনিক্যাল ভুলও ধরা পড়ছে। যা আমাদের বাংলা বাজারে এত নিয়ম থাকার কারণে হয়ে উঠছে না। তো আমাদের মনে হয় এটা একটা ছাতার তলায় আসা প্রয়োজন।

আপনাদের কি স্থায়ী প্রচ্ছদ শিল্পী রয়েছেন?

অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটা আমি করি। আমি তো ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করেছি, এটা আমার ঘরানা। তো সেই বিষয়ে সেন্সটা আমার কাজ দেয়। আমি অন্যদের থেকে আলাদা দেখি। সাধারণত কাউকে যদি বলা হয় পাতার রং কী? সে বলবে সবুজ। কিন্তু আমি তো তা বলব না। আমি কালো বলব, লাল বলব, হলুদ বলব আরও অনেকরকম টার্ম বলব। তো দু'জনের দেখার ধরনটা আলাদা। আমি তো শুধু প্রচ্ছদটা করি না। সঙ্গে পুরো বইটাই করি। ফাইনাল টাইপ হওয়ার পর বইটা পুরো আমার হাত দিয়েই তৈরি হয়ে ছাপতে যায়। পুরো বইয়ে অক্ষর বা বইয়ের পাতা আমার কাছে একটা ছবির মতো। সেখানে ভাবনাটা সম্পূর্ণ আলাদা। এই জায়গাতে আমার একাডেমিক প্র্যাকটিস আমাকে খুব হেল্প করে। এই জায়গায় আমি সবার থেকে একটু আলাদা।

আরও পড়ুন-বাংলা বই-বাজারে অনেক ম্যাকমিলান ছিলেন একদা

আমি তুলনা করছিনা বা অহংকার করছি না। সাধারণত এই ধরনের কাজে কিন্তু একদম প্রপার ডিজাইনাররাই কাজ করেন। কিন্তু আমাদের বাজারে কম্পজিটাররাই ডিজাইনার। এবং প্রি প্রেস কেমন হবে অধিকাংরাই জানেন না। এর জন্য ফিল্ডে কাজ করতে হয়। কাগজ অনুযায়ী কালার কারেকশন থেকে অনেক কিছুই প্রি প্রেসে হয়। আমাদের এখানে এটা হয়না। কারণ, বাংলা বাজারে টাকা দেয় না। এটা একটা সমস্যা। ইংরেজি বই খারাপ ছাপা হলেও যে দাম দিয়ে কিনবে বাংলা বই তো সেই দাম দিয়ে কিনবে না। যার ফলে সেই ধরনের শিল্পী নিয়োগ করা সম্ভব নয়। সুতরাং, বাংলা বাজারে যারা বই প্রকাশনায় এসেছেন বা যুক্ত থেকেছেন তাদের বই খুব অন্যরকম। যেমন, পূর্ণেন্দু পত্রী একজন আর্টিস্ট তাঁর বই ভাবনা দেখা যেতে পারে। পরবর্তীকালে বিপুল গুহ, কৃষ্ণেন্দু চাকী, তাঁদের প্রত্যেকের চিন্তা-ভাবনা ভীষণভাবে আলাদা। গ্রাফটা দেখলেই বোঝা যাবে বই নিয়ে যাঁরা কাজ করতে এসেছেন, তাঁদের ভাবনার তুলনায় ভিজ্যুয়াল সেন্সটা বাকিদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

বই একটি পণ্য তো অবশ্যই সাথে সাথে বাণিজ্যের ক্রিয়েটিভ জায়গা। ব্যানিজের মূল ক্ষেত্র না হলেও ক্রিয়েটিভ জায়গা এটি। এটা আমাদের আনন্দ দেয়। সেই জায়গা থেকে জরুরি। তাই বইয়ের প্রোডাকশন, লে আউট, ডিজাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাইকোলজিক্যালি ম্যাটার করে- মার্জিন, সাইজ, দু'টি লাইনের স্পেস, অক্ষরের সাইজ। এখানেই একজন ভিজ্যুয়াল আর্টিস্টের দরকার। তাঁরা ভিজ্যুয়াল এসেন্স বাকিদের থেকে ভালো বোঝেন। তবে সব আর্টিস্ট দিয়েও আবার চলবে না। সবাই তো শিল্প বোঝে না। তাই সাধারণ মানুষও বুঝবে, সবার হয়ে উঠবে, মার্কেট বুঝবে এমন ভাবনাটাও থাকা দরকার।

প্রকাশনা কি লাভজনক ব্যবসা?

লাভজনক কতটা বলতে পারছি না। কিন্তু ফল দেয়। এটা দু'টো জিনিস করে। যেমন আর্থিক জায়গা দেখবে, তেমনই পাশাপাশি ভাল আইডিয়া অন্য একটা পরিচিতি দেবে। তাই সবসময় মূলধনটাই লাভ দেবে সেটা না ভেবে আমাদের নতুন কিছু করার প্রচেষ্টা করা দরকার। সেটা বই হতে হবে এমন নয়, যে কোনো কিছু মানুষের কাছে অন্য রকম ভাবনায় নিয়ে আসা যাবে এবং সেটা আপনাকে একটা পরিচিতি দেবে এটাও কিন্তু একপ্রকার লাভ। তো সেই অর্থে যদি বলতে হয় এটা লাভদায়ক কিনা? তাহলে বলতে হয় অবশ্যই লাভদায়ক। এটার পেছনে কিন্তু চিন্তা-ভাবনা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেমন আইডিয়া, কী ধরনের আইডিয়া, কী বিষয়ভিত্তিক বা আইডিয়াটা কতটা যুগোপযোগী বা সমসাময়িক- এগুলো আমাদের কাছে খুব প্রাধান্য পায়।

বলা যেতে পারে, যেই কারণে নোকিয়া বাজার থেকে আউট হয়ে গেল। ২০০১, ২০০২, ২০০৩-এ যেভাবে বাজার করেছে সেই বাজার কিন্তু বর্তমানে নেই। কেন নেই? কারণ, সমসাময়িক হওয়াটা খুব প্রয়োজনীয়। সেটাই হচ্ছে আমাদের কাছে মূল বিবেচনার বিষয়। এবং বইকে যদি আবেগগতভাবে দেখিও, বই কিন্তু একটি মার্কেট জাতীয় দ্রব্য। লাভ, ক্ষতির সেটি একটি পণ্য। প্রডাক্ট ওরিয়েন্টেশন নিয়ে ক্রেতা কেমন, বাজার কেমন সেই কথা ভেবেও আমাদের কাজ করা উচিত। এটাও একটা পাটর্স অফ আইডিয়া। এই সব মিলিয়েই ব্যবসা লাভদায়ক কিনা ডিপেন্ড করে। তবে ভাল আইডিয়া মার যায়না। সেটা সব জায়গাতে গিয়েই ফলদায়ক হয়। সেটা একটা ভাল ফল দেয় সবসময়।

আরও পড়ুন-পুরনো বই সমানভাবে ছেপে যাওয়াই মূল মন্ত্র

আগামী দিনে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

বিভিন্নরকম বইপত্র নিয়ে কাজ হচ্ছে।
আমাদের মূল ঘরানাটা হচ্ছে চিত্রকলা, চিঠিপত্র। এগুলোকে যদি এককথায় বলা যেতে পারে তাহলে বলতে হয় সংরক্ষণ নথি (আর্কাইভাল ডকুমেন্টস)-র উপরে সবচেয়ে বেশি কাজ। সেখানে চিত্রকলা, চিঠিপত্র, অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি, ফটোগ্রাফি, স্মৃতিকথা এ ধরনের বিষয়। তার পর সরাসরি রাজনৈতিক স্যাটায়ার ধরনের লেখা, সমসাময়িক রাজনৈতিক চিন্তন, মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা কেমন, মানুষের মধ্যে সামাজিক চিন্তা-ভাবনা কেমন তার উপর। আরও একটা জিনিস হচ্ছে, কোনো বিষয় নিয়ে কোর প্রবন্ধ সে সব। একাডেমিক নয় যদিও।

আগামী দিনে প্রকাশনাকে কোথায় দেখতে চান?

এভাবে তো বলা যায় না। ছোটবেলা থেকেই বাবা আমাকে একটা কথা বলতেন, তুমি নারকেল গাছে উঠতে পারো না তুমি নারকেল গাছের ধারের কাছে যাবে না। আমার কাছে ব্যাপারটা ছিল অন্য রকম। আমাকে মাথায় উঠতে হবে। অন্তত উঠতে পারব না, হয়তো কিছুটা উঠতে পারব, হয়তো বুক ছিঁড়ে যাবে পারব না বা পারব কিনা জানি না আবার পারতেও পারি। কিন্তু অন্তত জড়িয়ে তো ধরা শিখি। গাছের যত্নটা তো করি। অন্তত এইটুকু তো পারব। গাছটার কাছে তো যেতে পারব। সেই চেষ্টাই আমার আছে। জানি না আমি ভবিষ্যতে কতটুকু পারব। কিন্তু এটাকে নিয়ে স্বপ্ন আমার অনেকটা দূর।

আমার একটা সময় স্বপ্ন ছিল আমি আর্ট প্র্যাকটিস করব, ছবি আঁকব, আর্টিস্ট হব, এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে এই পথে চলে আসলাম! এখানে আমার এক দিদির কথা বলতেই হয় কবি এবং প্রাবন্ধিক পল্লবী সেন। তিনি আমাকে একবার বলেছিলেন এরকম করতে পারিস তো। সেই জায়গা থেকে আমার শুরু এবং সেটা চলতেই থাকল। পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এখনও পর্যন্ত।আমি খুব গর্বিত এবং আনন্দিত যে আমি খুব ভাল লেখক এবং সম্পাদকদের পেয়েছি যাঁরা প্রতিনিয়ত আমায় ভালবাসেন। এবং আমার বন্ধু দাদা, স্থানীয় এদেরকেও পাশে পেয়েছি। বেশ কিছু সহ প্রকাশককে পাশে পেয়েছি যারা আমার পাশে থাকেন যেমন ইতিকথার শূদ্রক উপাধ্যায়, প্রতিক্ষণের শুদ্ধব্রত দেব।

More Articles