আয়লার ভূতই ফিরে এল রেমাল হয়ে? কতটা ভয়াবহ ছিল ১৫ বছর আগের সেই দিন?

Cyclone Remal Vs Aila: ভারতে আয়লার প্রকোপে অন্তত ১৪৯ জনের মৃত্যু হয়। প্রবল ঝড়ে সমস্ত অঞ্চল জুড়ে গাছ উপড়ে পড়ায় রাস্তাঘাট অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

১৫ বছর আগে। ঠিক এই মে মাস। তছনছ করে দিয়েছিল গোটা বাংলাকে, একটিই ঘূর্ণিঝড়। সেই তাণ্ডবের স্মৃতি এখনও ফিকে হয়নি। মে মাস মানেই এই বাংলায় বিপর্যয়ের মাস। ২০০৯ সালের ২৫ মে সুন্দরবন সহ উপকূলীয় বাংলাকে তছনছ করেছিল আয়লা। ২০০৯ সালে ভারত মহাসাগরে জন্ম নিয়েছিল আয়লা, ২১ মে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাংশে আয়লা আঘাত হানে ২৫ মে। ঘূর্ণিঝড় আয়লার ব্যাস ছিল প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় নিয়ে উপকূল অতিক্রম করে আয়লা। পরে আয়লার বাতাসের বেগ ৮০-১০০ কিলোমিটার হয়ে যায়।

ভারতে আয়লার প্রকোপে অন্তত ১৪৯ জনের মৃত্যু হয়। প্রবল ঝড়ে সমস্ত অঞ্চল জুড়ে গাছ উপড়ে পড়ায় রাস্তাঘাট অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। উপকূলের আটটি গ্রামের ১৫,০০০-এরও বেশি মানুষ প্রবল বন্যার কবলে পড়েন। তাঁদের কাছে ত্রাণ সরবরাহ করাও কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। ঝড় ও বৃষ্টিতে কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যায়। পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, কলকাতা এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল সেবার। আয়লার প্রভাবে সারা বাংলা জুড়ে এক লক্ষেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হন। অন্তত ১০০টি নদীবাঁধ ঝড়ের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আরও পড়ুন-শক্তি কমলেও আজও তাণ্ডব রেমালের! কোথায় কোথায় তুমুল ঝড়-বৃষ্টি?

দার্জিলিংয়ে প্রবল বর্ষণে পাহাড়ে ধস নামে। ৬ জন নিখোঁজ এবং ২২ জন নিহত হন তাতে। ওই অঞ্চলে অন্তত ৫০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্তত ৫০,০০০ হেক্টর কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আয়লা এতখানিই ভয়াবহ ছিল যে সারা রাজ্যে এর প্রভাবে মোট ৪০,০০০ বাড়ি ধ্বংস হয়, ১,৩২,০০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্তত ৩,৫০,০০০ মানুষ আয়লার দাপটে ক্ষতির শিকার হন।

পরবর্তীকালে, সমস্ত ক্ষতির হিসেব প্রকাশ্যে এলে দেখা যায়, ১,৭৫,০০০ বাড়ি ধ্বংস হওয়ার ফলে, ২,৭০,০০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে ২৩,০০,০০০-এরও বেশি মানুষ ভিটেমাটি হারা হন।

বাংলাদেশের পটুয়াখালি, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালির হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপ, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটায় আয়লা। ঘূর্ণিঝড়ে খুলনা ও সাতক্ষীরায় ৭১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নষ্ট হয়ে যায় যার ফলে খুলনা এবং সাতক্ষীরার বহু জায়গা নোনা জলে ডুবে যায়। কাজ হারান ৭৩,০০০ কৃষক ও কৃষি-মজুর। বাংলাদেশে কমপক্ষে ৩,০০,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। খুলনা ও সাতক্ষীরায় প্রাণ হারান ১৯৩ জন।

আয়লার পর প্রায় দশ বছর সেভাবে বিশাল ঘূর্ণিঝড় দেখেনি পশ্চিমবাংলা। ২০১৯ সালের ৩ মে ঘণ্টায় ১৭৫ থেকে ১৮০ কিলোমিটার বেগে পশ্চিমবঙ্গের বুকে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই ২০২০ সালের ২০ মে ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার বেগে পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় আমফান। ২০২১ সালের ২৬ মে ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটার বেগে পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। ইয়াসের প্রায় তিন বছর পর রেমালের তাণ্ডব দেখা গেল বাংলায়।

আরও পড়ুন- নিমেষে তছনছ হয়ে যায় জীবন! কেন এত শক্তিশালী হয় রেমালের মতো ঘূর্ণিঝড়?

কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে রেমালের ফলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি দেখা গিয়েছে। নানা জায়গায় গাছ পড়েছে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়েছে। রেমালের জেরে কলকাতায় ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়েছিল। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রবিবার রাতে ঝড়ের গতিবেগ পৌঁছবে ১০০-১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ঝড়ের গতিবেগের পূর্বাভাস ছিল ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত।

অন্যদিকে বাংলাদেশে রেমালের প্রাথমিক ধাক্কায় দুইজনের মৃত্যু ঘটেছে। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে একের পর এক গ্রাম। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রবিবার দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন নদীতে জল বাড়তে শুরু করেছিল। জলোচ্ছ্বাসের সময়ই পরিবারকে নিরাপদ রাখতে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে গিয়ে জলের তোড়ে ভেসে মারা যান মহম্মদ শরীফ হাওলাদার নামে এক যুবক। নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে গিয়ে সাতক্ষীরায় মৃত্যু হয়েছে শওকত মোড়ল নামে এক বৃদ্ধের। এখন শক্তি হারাচ্ছে রেমাল, তবে তাতেও আশঙ্কা কাটছে না। সোমবার সারাদিনই তাণ্ডব চালাবে এই ঘূর্ণিঝড়। তবে আয়লার মতো ভয়াবহ তা হবে না, এমনটাই আশা করছেন আবহাওয়াবিদরা।

More Articles