সত্যিই ভারতের গোয়েন্দা জড়িত মার্কিন দেশের খালিস্তানি হত্যার ষড়যন্ত্রে?
India Canada Conflict: কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলছেন, ভারত কানাডার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা শিখ কর্মীদের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়াচ্ছেন।
কানাডা বলেছে, ভারতের আধিকারিকরা সেই দেশে খালিস্তানি হত্যায় জড়িত। সেই অভিযোগে ৬ ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কারও করেছে কানাডা। এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, একজন প্রাক্তন ভারতীয় গোয়েন্দা আধিকারিক নাকি গত বছর নিউইয়র্কে একজন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীকে হত্যার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই গোয়েন্দা আধিকারিকের নাম বিকাশ যাদব। ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং স্পাই সার্ভিসের প্রাক্তন অফিসার ছিলেন তিনি। হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগের পাশাপাশি বিকাশ যাদবের বিরুদ্ধেও আর্থিক তছরুপেরও অভিযোগ রয়েছে।
হত্যার বিষয়টি গত বছর প্রথম প্রকাশ্যে আসে। নিখিল গুপ্তা নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তাঁকে মার্কিন নাগরিক তথা শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার জন্য ভারত সরকারের তৎকালীন কোনও এক সরকারি কর্মচারী নিয়োগ করেছিলেন। এফবিআইয়ের ডিরেক্টর ক্রিস্টোফার ওয়ে বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী যে কেউ নিজেদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। তা করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার মানসিকতা থেকে হিংসা বা অন্যান্য কোনও ক্ষতি করার প্রচেষ্টা সহ্য করবে না এফবিআই।
হত্যার ষড়যন্ত্র বানচাল করায় ভারতীয় আধিকারিকের জড়িত থাকার ঘটনায় তদন্তকারী ভারত সরকারের এক কমিটি গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে মার্কিন বিচার বিভাগের দাবি খতিয়ে দেখার জন্য চাপ দিয়েছে।
২০২৩ সালে কানাডার মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে কানাডা ছয় ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করার পরে ভারতও কানাডার কূটনীতিকদের বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে এবং কানাডার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আরও পড়ুন- খালিস্তানি হত্যায় সত্যিই জড়িয়ে ভারত? কেন ৬ কূটনীতিককে বহিষ্কার করল কানাডা?
শিখ সমাজকর্মী হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার ঘটনায় ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মুখর পাকিস্তানের শিখ সংখ্যালঘু সদস্যরাও। খলিস্তানের আন্দোলন মূলত শিখদের স্বাধীনতা আন্দোলন। শিখরা নিজেদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে ভারতে খালিস্তান বিদ্রোহের ফলে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুও হয়। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলছেন, ভারত কানাডার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা শিখ কর্মীদের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়াচ্ছেন। অন্যদিকে, ভারত শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সন্ত্রাসবাদী বলে মনে করে। মনে করে, দেশের নিরাপত্তার জন্য এই শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী বা খালিস্তানপন্থীরা বিপজ্জনক।
এই প্রথম, ভারত সরকারকে সরাসরি এমন একটি মামলায় জড়িয়েছে মার্কিন দেশ। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের জন্য চিনের প্রচেষ্টা চলছে। তা মোকাবিলার লক্ষ্যে ওয়াশিংটন এবং নয়াদিল্লি কৌশলগত সম্পর্ককে আরও গভীর করার চেষ্টাও চলছে। এরই মাঝে এমন অভিযোগগুলি প্রকাশ্যে আসছে। বিকাশ যাদব এখনও ভারতেই রয়েছেন। জানা যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁর প্রত্যর্পণ চাইবে।
সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাথিউ জি ওলসেন বলেছেন, "অভিযোগগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে প্রাণঘাতী চক্রান্ত এবং অন্যান্য ধরনের সহিংস আন্তর্জাতিক দমন-পীড়ন বৃদ্ধির একটি গুরুতর উদাহরণ।" মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলি মনে করছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই সম্ভবত এই চক্রান্তের অনুমোদন দিয়েছেন। বাইডেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ২০২৩ সালের জুলাইয়ের শেষ দিকে এই চক্রান্ত এবং ভারত সরকারের সঙ্গে এর সম্ভাব্য যোগসূত্র সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন। কানাডার কর্মকর্তারা মোদির প্রশাসনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও নিশানায় রেখেছে। কাদের নির্দেশে খালিস্তানিদের নিকেশ করার পরিকল্পনা করছেন ভারতীয় কূটনীতিকরা, সেই অনুসন্ধানই করছে মার্কিন গোয়েন্দারা।