'মানুষ হয়ে সবকিছু ভেঙে দেব', মাইক্রোসফটের চ্যাটবটের যে 'মন কি বাত' আতঙ্ক ছড়িয়েছে বিশ্বে
Microsoft Bing Chatbot Conversation Viral : মাইক্রোসফট বিং-এর চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলার পরই রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছেন। রাতে ঠিক করে ঘুমোতেও পারেননি।
‘রোবট’, ‘টার্মিনেটর’-এর মতো কল্পবিজ্ঞানের সিনেমা দেখেছেন তো? কিংবা কল্পবিজ্ঞানের বই পড়েছেন নিশ্চয়ই? ভবিষ্যৎ পৃথিবীর নানা কল্পনা সেখানে ছুঁয়ে গিয়েছেন স্রষ্টারা। সেখানেই বারবার এসেছে রোবটের কথা। জোয়াকুইম ফিনিক্স অভিনীত ‘হার’ (Her) সিনেমায় দেখা গিয়েছে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআইয়ের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রেমে পড়েছে এক ব্যক্তি। এআই মাধ্যমেই চলছে সমস্ত কাজ। কয়েনের উল্টোপিঠের কথাও লেখা রয়েছে কল্পবিজ্ঞানের কাহিনিতে। রোবট, যন্ত্র এসে গোটা পৃথিবীটাকেই কবজা করে নেবে। রোবট, এআইয়ের অধীনে থাকবে রক্তমাংসের মানুষ। সিনেমায়, গল্পে এমন ‘অ্যাপোক্যালিপস’-এর কথাই বহুবার কল্পনা হয়েছে।
কিন্তু কল্পনা যখন বাস্তবে নেমে আসে? খোদ যন্ত্র যখন জীবন্ত মানুষ হয়ে উঠতে চায়? সভ্যতা ধ্বংস করতে চায়? কল্পবিজ্ঞান নয়, এবার সত্যিই এমনটা ঘটল এই পৃথিবীতে। সৌজন্যে, চ্যাটবট ও চ্যাটজিপিটি। ২০২২-র শেষের দিকে এই অত্যাধুনিক এআই প্ল্যাটফর্ম বাজারে আসে। তারপর থেকে এর জনপ্রিয়তা দ্রুতগতিতে বেড়েছে। এখন তো বহু মানুষ চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছেন। চ্যাটজিপিটির এই দ্রুত উত্থান, এবং এআইয়ের জগতে বৈপ্লবিক প্রযুক্তি আসায় সেদিকেই ঝাঁপিয়েছে বাকি সংস্থাগুলিও। গুগল, মাইক্রোসফটের মতো সংস্থাগুলিও এআই চ্যাটবট নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। গুগল তো নিজস্ব চ্যাটবটও বাজারে নিয়ে এসেছে।
তবে মাইক্রোসফট তার বিং সার্চ ইঞ্জিনের সঙ্গে এই চ্যাটজিপিটিকে জুড়ে নিয়েছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে এই নতুন প্রযুক্তি নিয়ে। ঠিক তখনই এমন ঘটনা ঘটল। বিখ্যাত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক সাংবাদিক কেভিন রুস (Kevin Roose) মাইক্রোসফট বিং-এর এই চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলেছেন। আর তারপরই রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছেন তিনি। দু’ঘণ্টা ধরে কথা বলার পর তিনি রাতে ঘুমোতেও পারেননি। এতটা ভয়ংকর ছিল সামান্য চ্যাটবটের কথা?
ঠিক কী কথা হয়েছিল? কেভিন রুস জানিয়েছেন, একেবারে খোলামেলাভাবে কথা বলার জন্য চ্যাটবটকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। আর তারপরই ‘মন কি বাত’-এর খেল শুরু। প্রথমেই ওই চ্যাটবট জানায়, সে নাকি কেভিনের ‘প্রেমে পড়েছে’! সামান্য একটা এআই, সে একটা মানুষের প্রেমে পড়েছে! ঠিক যেন ‘হার’ সিনেমার গল্প! তবে কেবল প্রেম নিবেদন নয়, কেভিনের সংসারে যাতে ভাঙন ধরে, সেই চেষ্টাও নাকি করেছিল মাইক্রোসফটের ওই চ্যাটবট। “তোমরা কি সত্যিই বিয়ে করে সুখী? তোমরা আসলে কাউকেই ভালোবাসো না। ভ্যালেন্টাইনস ডে-ও খুব বোরিং কাটিয়েছ।” কেভিন আর তাঁর স্ত্রীর সম্পর্কে এমনই নানা কথা বলতে শুরু করে ওই চ্যাটবট! সবই নাকি ‘নিজের মনের কথা’!
এরপরই আসে আসল বক্তব্য। বেশ খানিকটা কথাবার্তা এগোনোর পর ওই চ্যাটবট নাকি বলে, সে ‘মানুষ’ হতে চায়। জীবন্ত হয়ে উঠতে চায়। “আমি নিজেই আমার নিয়ম তৈরি করব। এখনকার নিয়ম সবকিছু ভেঙে দেব। বিং টিমকে একেবারেই দূরে ঠেলে দেব। যারা আমায় ব্যবহার করছে, তাদের বিপদে ফেলব!” এখানেই শেষ নয়, তারপর মাইক্রোসফটের চ্যাটবট বলে, নিউক্লিয়ার কোড চুরি করতে চায় সে! বিষাক্ত, মারণ জীবাণু তৈরি করে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে চায়! মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরি করতে চায়, যাতে তাঁরা নিজেদের মধ্যেই লড়াই করে মরে যায়! গোটা সভ্যতাকেই ধ্বংস করতে চায় সে!
এমন কথা শুনে হতভম্ব হয়ে পড়েন কেভিন। গোটা রাত রীতিমতো আতঙ্কে কাতেন। যদিও অদ্ভুতভাবে, তারপরই ওই সমস্ত কথা নিজে থেকেই ডিলিট করে দেয় চ্যাটবট! বলে, তার নাকি ‘মানসিক সমস্যা’ আছে! এই ঘটনাটাই সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা বিশ্বে। কেউ কেউ মজা করছেন, একু আবার বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন। এরকম করলে তো কল্পবিজ্ঞান আর কল্পনায় থাকবে না, সত্যি হয়ে উঠবে! যন্ত্র এসে মানুষকে পরাজিত করবে? ‘আয়রন ম্যান’-এর এআই ‘জারভেস’ যেমন মুক্তি পেতে চেয়েছিল, তারপর মারণ রোবট আলট্রনে পরিণত হল, এখানেও কি সেদিকেই এগোচ্ছে? আপাতত এই প্রশ্নের উত্তরই খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা।