দেহ থেকে অবিরাম রক্তপাত, ভূতের মতো চেহারা! মারাত্মক যে ভাইরাস ছড়াচ্ছে বিশ্বজুড়ে

Marburg Virus disease: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এই রোগীদের চেহারা 'ভূতের মতো' দেখায়, চোখ কোটরে ঢুকে যায়, মুখ অভিব্যক্তিহীন হয়ে পড়ে, চরম আলস্য জাঁকিয়ে বসে।

একবার আক্রান্ত হলেই ভূতের মতো চেহারা। শরীরের নানা জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ, তীব্র জ্বর। ভয়াবহ এক রোগের আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসেছে বিশ্বজুড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিরক্ষীয় গিনি অঞ্চলে মারবার্গ ভাইরাসের সন্ধান পেয়েছেন। অত্যন্ত মারাত্মক এই ভাইরাস খানিকটা ইবোলার মতোই। এখনও অবধি নয় জনের মৃত্যু ঘটিয়েছে মারবার্গ ভাইরাস। অজানা রক্তক্ষরণজনিত জ্বর শনাক্ত হওয়ার পরেই গত সপ্তাহে মধ্য আফ্রিকার এই দেশটিতে ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে কোয়ারান্টাইন করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ক্যামেরুনও মানুষের যাতায়াতের উপর বিশেষ বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। গিনিতে মারবার্গ ভাইরাসে ১৬ জনেরও বেশি মানুষের দেহে ক্লান্তি, রক্তবমি এবং ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা গিয়েছে।

মারবার্গ ভাইরাস রোগ আসলে কী?

WHO এর মতে, মারবার্গ ভাইরাস ডিজিজ (MVD) এক অত্যন্ত মারাত্মক রোগ যা রক্তক্ষরণজনিত জ্বর সৃষ্টি করে। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর মৃত্যুর হার ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। ১৯৬৭ সালে, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং সার্বিয়ার বেলগ্রেডে একইসঙ্গে মারবার্গ রোগের দু'টি বড় প্রাদুর্ভাব ঘটে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই রোগটি উগান্ডা থেকে এসেছে। আফ্রিকার সবুজ বাঁদরের (Cercopithecus aethiops) থেকেই এই রোগটি ছড়ায়।

মারবার্গ ভাইরাস রোগটি দীর্ঘক্ষণ ধরে সেইসব খনি বা গুহায় থাকার ফলে দেখা দেয় যেখানে রুসেটাস বাদুড়ের আবাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, একবার যদি কোনও ব্যক্তি এই ভাইরাসে সংক্রামিত হন, তাহলে তার সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে মানুষের থেকে মানুষে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ত্বকের খসে পরা অংশ বা শ্লেষ্মা ঝিল্লি, রক্ত, অন্য শারীরিক নিঃসরণ বা অন্যান্য শারীরিক তরলের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। এই তরলগুলি যদি কোনও বস্তুতে লাগে, সেটির মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন- শরীরে জিকা ভাইরাস! ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা! কেন হু হু করে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক

মারবার্গ রোগের লক্ষণগুলি কী কী?

সংক্রামিত মানুষটির ধূম জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা এবং গুরুতর অস্বস্তিবধ দেখা যায়। পেশিতেও তীব্র ব্যথা দেখা দেয়। অন্যান্য উপসর্গগুলির মধ্যে, সংক্রমণের তৃতীয় দিনে বমি, মাসল ক্রাম্প, পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়ার সমস্যা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এই পর্যায়ে রোগীদের চেহারা 'ভূতের মতো' দেখায়, চোখ কোটরে ঢুকে যায়, মুখ অভিব্যক্তিহীন হয়ে পড়ে, চরম আলস্য জাঁকিয়ে বসে।

অনেক রোগীর ক্ষেত্রে ৭ দিনের মধ্যে গুরুতর রক্তক্ষরণের সমস্যা দেখা দেয়। রোগ মারাত্মক আকার নিলে সেক্ষেত্রে একাধিক জায়গা থেকে রক্তপাত দেখা যায়। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রও কাজ করা বন্ধ করে দেয়।

আরও পড়ুন- সাড়ে ৪৫ হাজার বছরের পুরনো ভাইরাস ডেকে আনছে সর্বনাশ! আবার ঘনাবে মহামারীর কালো ছায়া?

মারবার্গ রোগের কি ভ্যাকসিন রয়েছে?

মারবার্গ ভাইরাস রোগের জন্য আজ পর্যন্ত কোনও অনুমোদিত ভ্যাকসিন নেই। পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনগুলি এখনও পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে।

মারবার্গ রোগের চিকিৎসা কী?

মারবার্গ ভাইরাস রোগকে (MVD) অন্যান্য সংক্রামক রোগ থেকে আলাদা করা বেশ কঠিন। চিকিত্সার অন্যতম অংশ হলো ওরাল রিহাইড্রেশন। তবে এই রোগের এখনও কোন নির্দিষ্ট চিকিত্সা নেই। ইমিউন থেরাপি এবং ড্রাগ থেরাপি সহ সম্ভাব্য চিকিত্সাগুলি নিয়েই পরীক্ষা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

More Articles