শরীরে জিকা ভাইরাস! ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা! কেন হু হু করে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক

Zika Virus : কেরল, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশের পর এবার কর্নাটকে হদিশ মিলল জিকা ভাইরাসের

কেরল, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশের পর এবার কর্নাটকে হদিশ মিলল জিকা ভাইরাসের। কর্নাটকের রায়চুরে পাঁচ বছরের এক শিশুর শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। করোনা সংক্রমণকে যখন প্রায় বশ মানাচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞান তখনই ফের ভয়ের ভ্রুকুটি। কড়া নাড়ছে নয়া ভাইরাস। নাম জিকা। কর্নাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. ডি কে সুধাকর বলছেন, ওই বাচ্চাটির নমুনা পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে পাঠানো হয়েছিল। সেখানেই পরীক্ষায় মিলেছে ভাইরাল স্ট্রেন। একটি শিশুর শরীরে এই সংক্রমণের হদিশ পাওয়ায় নড়ে বসেছে গোটা রাজ্য। আরও কতজনের মধ্যে ইতিমধ্যেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে তা নিয়েও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যদপ্তর। কর্নাটকে এটিই প্রথম জিকা ভাইরাসের ঘটনা। বর্তমানে এ নিয়ে গোটা দেশ জুড়েই শুরু হয়েছে জল্পনা।

বেশ কিছুদিন যাবৎ অসুস্থ ছিল বাচ্চাটি। জ্বর না কমায় রক্ত পরীক্ষার কথা বলেন চিকিৎসকেরা।মূলত ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার জন্য সিরাম পরীক্ষা করতে গিয়েই সামনে আসে জিকার বিষয়টি। যদিও এখনই যাতে ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন না হয়, সে দিকেও জোর দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু হঠাৎ করে এই যে অজানা ভাইরাস ছড়াতে শুরু করলো দেশে, তা নিয়ে কী বলছে বিজ্ঞান? কী এই জিকা? কীভাবেই বা সংক্রমিত হয় রোগ? কী কী উপসর্গ? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে এখন গোটা দেশ।

আরও পড়ুন - আমাদের শরীরে লুকিয়ে প্রাচীন ভাইরাসের জিন! নতুন গবেষণায় তোলপাড় বিশ্বজুড়ে

১৯৪৭ সালে আফ্রিকার উগান্ডায় প্রথম জিকা ভাইরাসের (Zika Virus) খোঁজ মেলে। বানরের দেহে প্রথমবারের মতো হদিশ মিলেছিল জিকা ভাইরাসের। এর সাত বছর পর অর্থাৎ ১৯৫৪ সালে নাইজেরিয়ায় প্রথম মানবদেহে জিকার সংক্রমণের খবর শোনা যায়। এর পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আফ্রিকা, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোতে জিকা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ২০১৫ সালের মে মাসে ব্রাজিলের ভয়াবহ আকার নেয় জিকা। ভারতে প্রথম কেসটি হয় ২০১৭ সালে, গুজরাট রাজ্যে। তারপর একে একে কেরল, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশেও দেখা যায় জিকার প্রকোপ। তবে কর্ণাটকে হদিশ এই প্রথম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে জিকা এডিস মশা বাহিত একটি ভাইরাস। এডিস মশা অবশ্য শুধু জিকা নয় পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং শহুরে হলুদ জ্বরও ছড়াতে পারে বলে জানা গিয়েছে। মূলত শরীরের রক্ত অথবা অন্যান্য তরলে মিশে থাকে জিকা, তাই রক্ত এবং তরল পরীক্ষা করেই সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব। যদিও জিকা ভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনা বিরল কিন্তু ভাবনার বিষয় অন্য জায়গায়। কারণ এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা অথবা ভ্যাকসিনের কথা জানা যায়নি।

আরও পড়ুন - করোনার পর কোন ভাইরাস? অতিমারীর ভয়াল দিন ফেরাচ্ছে জলবায়ুর ভোলবদল?

ডব্লিউএইচও আরও জানিয়েছে যে, ফুসকুড়ি, জ্বর, কনজেক্টিভাইটিস, পেশী এবং জয়েন্টে ব্যথা, অস্বস্তি এবং মাথাব্যথা এই রোগের সাধারণ লক্ষণ। যদিও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই বাইরে থেকে লক্ষণগুলি দেখা দেয় না। তাই চিকিৎসকদের মতে, যদি কোনও রোগীর একটানা এক সপ্তাহ জ্বর, নাক থেকে জল পড়া, মাথা ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করানো দরকার। যদিও এই ভাইরাসটি মূলত মশার মাধ্যমে পরিবাহিত হয়, তবে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

চিন্তার বিষয় একটাই যত দ্রুততার সঙ্গে রোগটি ছড়াচ্ছে তাতে বিপদ আসন্ন। কারণ এর প্রতিষেধক আসতে ১০ বছরও লেগে যেতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। এমনকী তা এলেও যে আকাশছোঁয়া দাম হতে পারে, এমনটাও আশঙ্কা রয়েছে। তাই মশার হাত থেকে বাঁচতে সরবরকম সতর্কতা জারি করা প্রয়োজন। এই মুহূর্তে সংক্রমণ থামানো না গেলে আগামী প্রজন্মের বিরাট অংশ শারীরিক বৈকল্য বা অপরিণত মস্তিষ্ক নিয়ে জন্ম নিতে পারে। একটা ভয়াবহ সংকটময় ভবিষ্যতের হাত থেকে বাঁচতে তাই প্রয়োজন যথাযথ পদক্ষেপ।

More Articles