চিকিৎসায় দেরি হলেই ডেঙ্গিতে খোয়া যাবে চোখ! ভয় দেখাচ্ছে ভয়াবহ সম্ভাবনা
Dengue Symptoms: চক্ষুবিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গিতে সাবকনজাংটিভাল হেমারেজ, ম্যাকুলার কোরিওরিটিনাইটিস, ম্যাকুলার এডিমার মতো মারাত্মক কিছু চোখের সমস্যা হতে পারে। যা ক্রমশ চোখ নষ্ট করে দেয়।
একা রামে রক্ষে নেই, সুগ্রীব দোসর! একদিকে চোখ রাঙাচ্ছে করোনার নয়া স্ট্রেন, তার উপর নতুন করে ভয় দেখাচ্ছে ডেঙ্গি। প্রতিবছরই কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকায় ভয়াল রূপ ধারণ করে ডেঙ্গির উৎপাত। কাড়ে প্রাণ। এমনিতে কথাই রয়েছে, 'দিনে মশা, রাতে মাছি, এই নিয়ে কলকাতায় আছি।' সেই উবাচ সত্যি করেই ফি বছর নানান উপসর্গ নিয়ে হাজির হয় ডেঙ্গি। আর এবার নাকি ডেঙ্গির নয়া নিশানা চোখ।
আরও পড়ুন: উপসর্গ বদলাচ্ছে ডেঙ্গু! জমা জলেই কি তবে লুকিয়ে কলকাতার সর্বনাশ?
বর্ষা পড়তে না পড়তেই হাসপাতালে বেড়েছে ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা। প্রশাসনের তরফে বারবার প্রচার, সচেতনতা কর্মসূচীতে মানুষ সচেতন হলেও পুরোপুরি রুখে দেওয়া যাচ্ছে না মশাবাহিত এই ভাইরাসকে। ডেঙ্গির মশার একটি কামড়েই শরীরে ঢুকতে পারে এই অসুখ, যা ক্রমশ কব্জা নেয় গোটা শরীরের। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপরেই প্রভাব ফেলে এই জীবাণু, হু হু করে কমতে শুরু করে প্লেটলেট। আর এবার ডেঙ্গির নয়া উপসর্গ নাকি চোখের সমস্যা। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, যথাসময়ে চিকিৎসা না হলে সারা জীবনের মতো চোখ খোয়াতে হতে পারে ডেঙ্গি রোগীদের।
প্রাথমিক ভাবে ডেঙ্গির লক্ষণ, জ্বর, গায়ে অস্বাভাবিক ব্যথা, বমিভাব। এমন সব লক্ষণ থাকলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞেরা। তবে এসবের সঙ্গেই এবারের ডেঙ্গির অন্যতম উপসর্গ নাকি চোখের সমস্যা। যেমনটা ঘটেছে পিকনিক গার্ডেনের বাসিন্দা পম্পা শর্মার সঙ্গে। অগস্টের গোড়ায় গায়ে জ্বর, ব্যথা এবং বমিভাবের লক্ষণ নিয়ে ডেঙ্গির পরীক্ষা করান পম্পা দেবী। টেস্টে ডেঙ্গি ধরা পড়তেই হাসপাতালে ভর্তি করতে থাকে। কিন্তু দিন ছয়েক কাটতে না কাটতেই ডান চোখে প্রবল যন্ত্রণা আরম্ভ হয় তাঁর। এমনকী ওই চোখটিতে ভালো দেখতেও পাচ্ছিলেন না তিনি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কিছু বোঝার আগেই একদিনের মাথায় সম্পূর্ণ ভাবে অকেজো হয়ে যায় পম্পার ডান চোখটি।
চিকিৎসকদের আশঙ্কা, ডেঙ্গির চিকিৎসায় একটু দেরিতে শুরু হলেই হার্ট, কিডনি, লিভারের মতো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকী খারাপ হতে পারে চোখও। এই সব কিছুই নির্ভর করে আসলে ভাইরাল লোডের উপরে। পম্পার ভাইরাল লোড এতটাই বেশি ছিল, যে তার প্রভাব সোজা পড়েছে চোখের উপর।
আর এই ব্যাপারটি নিয়ে বর্তমানে উদ্বেগে চিকিৎসকদের একাংশ। চক্ষুবিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গিতে সাবকনজাংটিভাল হেমারেজ, ম্যাকুলার কোরিওরিটিনাইটিস, ম্যাকুলার এডিমার মতো মারাত্মক কিছু চোখের সমস্যা হতে পারে। সাবকনজাংটিভাল হেমারেজের ক্ষেত্রে চোখকে আস্তরণ করে রাখে যে ঝিল্লি, তা ফেটে গিয়ে রক্তপাত হতে থাকে। যা ক্রমশ চোখ নষ্ট করে দেয়। এছাড়া ডেঙ্গির ভাইরাস অপটিক স্নায়ুর উপরেও বাজে প্রভাব ফেলে। হতে পারে রেটিনাল রক্তক্ষরণও।
আরও পড়ুন: Covid-19: মাস্ক পরতে হবে আবার! পুজোর আগেই ফিরতে পারে করোনা?
ফলে এই সময় জ্বর বা ওই ধরনের কোনও উপসর্গ দেখলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি ডেঙ্গি প্রতিরোধে মশারি ব্যবহার, বাড়িতে কোথাও জল জমতে না দেওয়ার মতো সতর্কতা পালন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে মশানিরোধক ব্যবহারের কথাও বলছেন ওয়াকিবহাল মহল। সামনেই পুজো। একটু অসতর্ক হলেই মাটি হতে পারে পুজোর আনন্দ। এমনকী তা ডেকে আনতে পারে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিও। ফলে মহামারী আটকাতে সতর্ক হওয়া ছাড়া কোনও গতি নেই বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।