ধূপগুড়ি ছিনিয়ে নিল তৃণমূল! বিজেপির দখল কি তবে দুর্বল হচ্ছে উত্তরবঙ্গে?

Dhupguri Bypoll Result 2023: গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে একটি উপনির্বাচনেও জিততে পারেনি বিজেপি।

২০২৪-এ কে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার বুনিয়াদি ধাপ ছিল ছয়টি রাজ্যের সাতটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দিনটি। সারা দেশ এনডিএ আর ইন্ডিয়া দ্বন্দ্বে বিভক্ত। এরই মাঝে এই উপনির্বাচনগুলিকে এই বছরের শেষের দিকে পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বড় একটি পরীক্ষা হিসেবেই দেখা হচ্ছিল। এই ফলাফলের উপরে অনেকটাই নির্ভর করছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র বিরুদ্ধে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া আদৌ ততটা বড় সঙ্কট তৈরি করতে পারবে কিনা। বিজেপি যে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবে না তা খানিক প্রমাণ করে দিয়েছে বাংলাই। সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে রয়েছে, উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর, উত্তরপ্রদেশের ঘোসি, কেরলের পুথুপ্পল্লী, পশ্চিমবঙ্গের ধূপগুড়ি, ঝাড়খণ্ডের ডুমরি এবং ত্রিপুরার বক্সানগর ও ধনপুর। এই আসনগুলিতে ৫ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ হয়েছে। ফলাফল ঘোষণা হতেই দেখা যায় ধূপগুড়ি আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল!

উত্তরপ্রদেশের ঘোসি নির্বাচনী এলাকায় ভোট পড়েছিল মাঝারি, ৫০.৭৭%। ঝাড়খণ্ডের ডুমরিতে ২.৯৮ লাখ ভোটারের মধ্যে মোট ৬৪.৮৪% মানুষ ভোট দিয়েছিলেন। সাতটি আসনের মধ্যে তিনটি ছিল বিজেপির দখলে। ধনপুর, বাগেশ্বর এবং ধূপগুড়ি। একটি করে আসন ছিল সমাজবাদী পার্টি (ঘোসি), সিপিআই(এম) (বক্সানগর), জেএমএম (ডুমরি) এবং কংগ্রেসের (পুথুপ্পল্লী)। বিজেপির হাতে থাকা ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রটি উপনির্বাচনে চলে এল শাসকদল তৃণমূলের কাছে। বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়কে ৪,২১৩ ভোটে হারিয়ে জিতলেন শাসকদল তৃণমূলের নির্মলচন্দ্র রায়। পোস্টাল ব্যালট এবং প্রথম কয়েক রাউন্ডের গণনায় বিজেপি এগিয়ে থাকলেও ধীরে ধীরে ব্যবধান কমতে থাকে তৃণমূলের।

আরও পড়ুন- ‘ইন্ডিয়া’ বদলে ‘ভারত’! কেন দেশের নাম বদলাতে মরিয়া বিজেপি?

 

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই ধূপগুড়ি আসনে জয়ী হন বিজেপির বিষ্ণুপদ রায়। তাঁর মৃত্যু হওয়ায় উপনির্বাচনের প্রয়োজন পড়ে। এই আসনের ভোটারদের বড় অংশই রাজবংশী। তাই তিন রাজবংশী প্রার্থী নামেন সরাসরি লড়াইয়ে। তৃণমূলের প্রার্থী হন অধ্যাপক নির্মলচন্দ্র রায়। কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী হন ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী তথা প্রাক্তন শিক্ষক ঈশ্বরচন্দ্র। আর বিজেপির প্রার্থী হন কাশ্মীরে নিহত জওয়ানের স্ত্রী তাপসী রায়।

গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে একটি উপনির্বাচনেও জিততে পারেনি বিজেপি। বিধানসভা ভোটে দিনহাটা এবং শান্তিপুর আসন জিতলেও উপনির্বাচনে হার হয়। রাজ্যে একের পর এক উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয়ই হয়েছিল। একমাত্র সাগরদিঘিতে জিতেছিল কংগ্রেস। তবে সেই জয়ের আনন্দ কংগ্রেস পুরোপুরি উপভোগ করার আগেই বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস তৃণমূলে যোগ দিয়ে ফেলেন।

সপ্তম রাউন্ডের শেষে দেখা যায় ধূপগুড়ির তৃণমূলের প্রার্থী পেয়েছেন ৭২ হাজার ৪৪০ ভোট। আর বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৫০৯ ভোট। সিপিএম প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ১০ হাজারের সামান্য বেশি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ন্ত রায় জলপাইগুড়ি আসনে ১,৮৪,০০৪ ভোটে জেতেন। ধূপগুড়ি বিধানসভাতেও বিজেপিই এগিয়ে ছিল। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জেতে ৪,৩৫৫ ভোটে। তৃণমূল পেয়েছিল ৪৩.৭৫ % ভোট। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সমীকরণ বদলে গেছে বেশ। তৃণমূলের ভোট আর সিপিএমের ভোট বাড়ার ঘটনা ঘটেছে।

তবে উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর বিধানসভা উপনির্বাচনে জিতেছেন বিজেপির পার্বতী দাস। বিজেপির পার্বতী দাস কংগ্রেসের বসন্ত কুমারকে ২,৪০০ ভোটে হারিয়েছেন। পার্বতী দাস পেয়েছেন ৩৩,২৪৭ ভোট পেয়েছেন এবং বসন্ত কুমার পেয়েছেন ৩০,৮৪২ ভোট।

আরও পড়ুন- এনডিএ বনাম ইন্ডিয়া, দেশের নামে বিজেপির আসন টলাতে পারবে কি বিরোধী মহাজোট?

ঝাড়খণ্ডের ডুমরি উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রার্থী বেবি দেবী। জেএমএম প্রার্থী বেবি দেবী AJSU-P-এর যশোদা দেবীকে হারিয়ে ঝাড়খণ্ডের ডুমরি আসনটি ১৭০০০ ভোটে জিতেছেন। গণনা শেষ হওয়ার পরে দেখা যায়, বেবি পেয়েছেন ১,৩৫,৪৮০ টি ভোট। যশোদা পেয়েছেন ১,১৮,৩৮০ টি ভোট। বেবি ছিলেন জেএমএম-কং-আরজেডি, ইন্ডিয়া ব্লকের প্রার্থী। তাঁর স্বামী জগন্নাথ মাহতো ছিলেন হেমন্ত সোরেনের মন্ত্রিসভার মন্ত্রী। তাঁর মৃত্যুর পরেই আসনটি শূন্য হয়।

ত্রিপুরায় কমিউনিস্টদের রাস্তা শেষ। উপনির্বাচনে জয়ের পর সদর্পে ঘোষণা করেছে বিজেপি। ত্রিপুরার ধনপুর এবং বক্সানগর বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে বিজেপি জিতেছে, এককালে বামদুর্গ ছিল এই এলাকাগুলি। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) তফাজ্জল হোসেন বক্সনগর আসনে ৩০,২৩৭ ভোটে জয়ী হয়েছেন, যেখানে প্রায় ৬৬ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন। তাফাজ্জল হোসেন পেয়েছেন ৩৪,১৪৬ ভোট এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) মিজান হোসেন পেয়েছেন ৩,৯০৯ ভোট।

পুথুপ্পল্লী উপনির্বাচনে ইউডিএফ-এর চান্ডি ওমেন জয়ী হয়েছেন। বিরোধী কংগ্রেস-ইউডিএফের প্রার্থী চান্ডি ওমেন উপনির্বাচনে ৩৬,০০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। সিপিআই(এম)-এর নেতৃত্বাধীন এলডিএফ প্রার্থী জ্যাক সি থমাস ছিলেন বেশ পিছিয়ে। আর গোটা ছবিতেই ছিলেন না বিজেপি প্রার্থী লিজিন লাল।

 

More Articles