৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ! যে ভয়াবহ অভিযোগ উঠছে হাসিনা ও পরিবারের বিরুদ্ধে

Sheikh Hasina Corruption: অভিযোগ, শেখ হাসিনা, পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগ্নী টিউলিপ সিদ্দিক তাঁদের মালয়েশিয়ার ব্যাঙ্কের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার লোপাট করেছেন।

ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকেই বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ এনেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি বিষয়ে তদন্ত করতে মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটিও গড়েছিল। অভিযোগ ছিল, ১৫ বছরের শাসনামলে সরকারের নানা কাজে যেসব পণ্য ও পরিষেবা কেনা হয়েছে তাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকা। আর এই টাকার মধ্যে কেবল ঘুষ দিতেই নাকি ব্যবহার হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা! অভিযোগ, ঘুষ নিয়েছেন আওয়ামী লীগেরই রাজনৈতিক নেতা, আমলা ও তাঁদের সহযোগীরা। এবার হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধেও ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও তাঁর বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগ্নী টিউলিপ সিদ্দিক-সহ পরিবারের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিপুল অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতাচ্যুতির পরে গত ১৯ অগাস্ট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে শেখ হাসিনার পরিবারের দুর্নীতি নিয়ে সেদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় নানা প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, শেখ হাসিনা, পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগ্নী টিউলিপ সিদ্দিক তাঁদের মালয়েশিয়ার ব্যাঙ্কের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা) লোপাট করেছেন। প্রতিবেদনগুলিতে দাবি করা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাটম মালয়েশিয়ার একটি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এই বিপুল টাকা আত্মসাতের সুযোগ করে দিয়েছে আর এর মধ্যস্থতা করেছেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগ্নী টিউলিপ সিদ্দিক।

আরও পড়ুন- ভিডিওতে ভাইরাল! অস্ত্র হাতে সত্যিই বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থান? জানুন আসল সত্য

একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার সহযোগিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণে খরচ হয়েছিল এক হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। প্রয়োজনের তুলনায় এই টাকা অনেকটাই বেশি। মালয়েশিয়ার একটি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এই বিশাল বাজেট থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের সুযোগ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাটম। নিজের ভাগ্নী টিউলিপ সিদ্দিকের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তি করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মধ্যস্থতার বিনিময়ে পাচার করা অর্থের ৩০ শতাংশ পেয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ রেহানা ও পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য।

২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের সময় সঙ্গী ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের দাবি, সেই সময় ঢাকা-মস্কোর বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রচুক্তির মধ্যস্থতাও করেন তিনি। অভিযোগ, ২০০৯ সালে ‘প্রচ্ছায়া লিমিটেড’ নামে একটি ভুয়ো কোম্পানি চালু করেন টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ রেহানা ও কাকা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক। যুক্তরাষ্ট্রেও ‘জুমানা ইনভেস্টমেন্ট’ নামে একটি কোম্পানি রয়েছে তাদের।

গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের অভিযোগ, এ কোম্পানির মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে টাকা পাচার করতেন শেখ হাসিনা। এই কোম্পানিটি ডেস্টিনি গ্রুপ নামে একটি চিটিং ফান্ড কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার পাচার করে বলে অভিযোগ।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ঘুষের টাকার মধ্যে ৭৭ হাজার থেকে ৯৮ হাজার কোটি টাকা গেছে আমলাদের কাছে। রাজনৈতিক নেতা ও তাঁদের সহযোগীরা পেয়েছেন ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রকের হিসাব বলছে, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর আমলে জমতে থাকা ঋণের পরিমাণ এখন ১৫৫ বিলিয়ন ডলার!

আরও পড়ুন- কেন চিন্ময় দাসের আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন অর্জুন সিং, কার্তিক মহারাজরা?

শ্বেতপত্রে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে নাকি গড়ে প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে বিদেশে ২৪০ বিলিয়ন বা ২ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে যে যে উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল সেই ২৯টি বৃহদাকার প্রকল্পের মধ্যে বড় প্রকল্পের প্রতিটিতে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে বলে অভিযোগ। ২৯টি বড় প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৭ বিলিয়ন ডলার বা ৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭টি প্রকল্পের আনুমানিক প্রাথমিক ব্যয় ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা।

শ্বেতপত্র জানিয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে ব্যাঙ্কখাতে ব্যাপক তছরুপ হয়েছে। ব্যাঙ্কে খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের জন্য ঋণ কেলেঙ্কারি, প্রতারণা, ভুয়ো ঋণ ও ঋণের অপব্যবহারের বিভিন্ন ঘটনা ফাঁস করেছে ওই প্রতিবেদন। দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, আশ্রয়ণ প্রকল্প, বেজা এবং বেপজার মতো ৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ২১ হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় থাকা প্রভাবশালী–সহ প্রায় ২৫০ জনের বিরুদ্ধেই অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

More Articles