কেন চিন্ময় দাসের আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন অর্জুন সিং, কার্তিক মহারাজরা?

Chinmoy Das Lawyer Rabindra Ghosh: রবীন্দ্র ঘোষ জানিয়েছেন, তিনি কোনও ভিসানীতি লঙ্ঘন করেননি। চিকিৎসা করানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন।

দেশদ্রোহিতার মামলায় চট্টগ্রামের জেলে বন্দি রয়েছেন বাংলাদেশের ধর্মীয় গুরু চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। ২ জানুয়ারি তাঁর হয়ে মামলা লড়তে বাংলাদেশে হাজির হবেন চিন্ময়ের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ। এই মুহূর্তে অবশ্য ভারতেই আছেন তিনি। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষকে ভারতে থাকাকালীন দেখা গিয়েছে এই বঙ্গের বেশ কিছু বিজেপি নেতার সঙ্গে। চিকিৎসার প্রয়োজনে ব্যারাকপুরে নিজের ফ্ল্যাটে এসে উঠেছেন রবীন্দ্র ঘোষ। গত মঙ্গলবার ওই বাড়িতে গিয়ে তাঁকে সংবর্ধনা জানান বিজেপির নেতা অর্জুন সিংহ, কৌস্তভ বাগচী, প্রদীপ্তানন্দ (কার্তিক) মহারাজও। কেন বিজেপির নেতাদের সঙ্গে এত সখ্য রবীন্দ্র ঘোষের? চিন্ময় দাসের হয়ে লড়ার জন্য কি পরোক্ষে বিজেপির মদত পাচ্ছেন তিনি?

রবীন্দ্র ঘোষকে বাংলাদেশের যমুনা টিভির এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এমন উত্তাল সময়ে তিনি ভারতে কেন? রবীন্দ্র ঘোষ জানিয়েছেন, তিনি কোনও ভিসানীতি লঙ্ঘন করেননি। চিকিৎসা করানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন। যদিও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে তিনি ষড়যন্ত্র করছে ভারতে এসেছেন! রবীন্দ্র বলছেন, “হিন্দু নয় শুধু, সকলের জন্য আন্তরিকতা আছে আমার। আমি তো একজন মানবাধিকার কর্মী। আমি তো রাজনীতি করি না। আমি দল করি না। আমি আওয়ামী লীগও করি না, বিএনপিও করি না, জাতীয় পার্টিও করি না, ওই আরেকটা দল আছে যারা সবসময়ই টেররিজমের কথা বলে- সেটাও তো করি না।" বাংলাদেশে তাঁর কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতি তাহলে আনুগত্য নেই। তাহলে ভারতে শাসকদল বিজেপি নেতারাই কেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন?

আরও পড়ুন- বাংলাদেশ ইস্যুতে অতি সক্রিয় বিজেপি কি তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাবে?

বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, ২০২৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতেই বাংলাদেশ কার্ড খেলছে গেরুয়া শিবির। ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং বলেছেন, "বাংলাদেশের হিন্দুদের অধিকারের জন্য মাথা উঁচু রেখে লড়াই করার জন্য আমি তাঁকে স্যালুট জানাই।" চিন্ময় দাসের আইনজীবীর সঙ্গে বহুক্ষণ কথা বলেছেন সেবাশ্রম সংঘের সন্ন্যাসী কার্তিক মহারাজও। এমনকী ব্যারাকপুরে রবীন্দ্র ঘোষ যতদিন থাকবেন, ততদিন রাজ্য যাতে তাঁকে নিরাপত্তা দেয়, সেই আর্জি জানিয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন। রাজ্য তা না-দিলে কেন্দ্র এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়েছেন অর্জুন। ওই সাক্ষাৎকারেই উঠে এসেছে আরেকটি তথ্যও। রবীন্দ্র ঘোষ বাংলাদেশের নাগরিক হলেও, তাঁর পুত্ররা ভারতের নাগরিক।

যমুনা টিভিকে সাক্ষাৎকারে রবীন্দ্র জানিয়েছেন, “ওদের যখন পাঁচ-দশ বছর বয়স তখনই আমি ওদের এখানে (ভারতে) পাঠিয়েছি লেখাপড়া করার জন্য। তারা এখানের নাগরিক হয়ে গেছে। কিন্তু আমি তো সেইটা ভেবে পাঠাই নাই।" যখন ছেলেদের রবীন্দ্র ঘোষ ভারতে পাঠান সেই সময় বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগই। যদি আওয়ামী লীগের সময় বাংলাদেশে হিন্দুরা নিরাপদেই ছিলেন, কেন তবে ছেলেদের ভারতে পাঠালেন তিনি? রবীন্দ্র ঘোষ স্পষ্ট জানিয়েছেন, “না, তখনও 'সেফ' ছিল না। এরশাদের আমলেও সেফ ছিল না। যখন বাবরি মসজিদ ভাঙে তখন এরশাদ বাংলাদেশে এক হাজার মন্দির ভেঙেছে।" নিজের ছেলেদের ভারতে পাঠানোর বিষয়ে রবীন্দ্র ঘোষ বলছেন, “ছোটবেলা থেকেই ওদের চিন্তা ছিল। আমার ছেলেদের ভয় ছিল। আমাকে বলেছিল, নিরাপত্তার জন্য তুমি আমাদের এখানে রাখবে না।" প্রশ্ন হচ্ছে, পাঁচ বা দশ বছরের শিশুর কি এই নিরাপত্তার চিন্তা থাকতে পারে? উত্তরে অবশ্য স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি তিনি, স্রেফ বলেছেন, “ওরা ছোটবেলা থেকেই বলেছে বাইরে লেখাপড়া করব।"

আরও পড়ুন- ভিডিওতে ভাইরাল! অস্ত্র হাতে সত্যিই বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থান? জানুন আসল সত্য

আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে। গত পাঁচ অগাস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর কি তাহলে দুর্গাপুজোয় বাংলাদেশে আগের মতোই অশান্তি হয়েছে? রবীন্দ্র ঘোষের দাবি, আগের তুলনায় কম হলেও তা হয়েছে। তাহলে তাঁরা কি বাংলাদেশে সুরক্ষিত নন? স্পষ্ট জবাবে রবীন্দ্র ঘোষ বলেছেন, “আমি মনে করি সুরক্ষা অপ্রতুল।"

রবীন্দ্র ঘোষকে প্রশ্ন করা হয়, যে মানবাধিকারের লড়াইয়ের কথা তিনি বলছেন, সেই লড়াইয়ে ভারতের কোনও সংগঠনের সমর্থন কি তিনি পেয়েছেন? রবীন্দ্র বলছেন, “না পাইনি। আমি সিম্পোজিয়মে আসতাম। সেখানে ডঃ মোহিত রায়, প্রফেসর তথাগত রায় (ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল) ওঁরা ডেকেছেন। আমি সেমিনারে গেছি- এতটুকুই।" কোনও সমর্থন যদি না-ই পেয়ে থাকেন তাহলে বঙ্গ বিজেপির এই প্রথমসারির মুখেরা কেন সম্বর্ধনা দিল তাঁকে? কেনই বা তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে অর্জুন সিং চিন্তিত?

বরাবরই বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে যে বিজেপি সীমান্ত অঞ্চলে বিশেষ করে এই বাংলাদেশ ইস্যুতে হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করতে চাইছে। চিন্ময় দাসের গ্রেফতারি একটি মোক্ষম অস্ত্রমাত্র। চিন্ময় দাসের বিরুদ্ধে যখন ২০২৩ সালে শিশু নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে তখনই ইসকন ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ড প্রোটেকশন অফিস তাঁকে ১৮ বছরের কম বয়সি যেকোনও শিশুর থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছিল। চিন্ময়কে সাময়িকভাবে সংগঠন থেকে বরখাস্তও করা হয়েছিল। ফলে, এই সমস্ত ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে হিন্দুদের নেতা হিসেবে চিন্ময় দাসকে তুলে ধরা এবং তাঁর আইনজীবীকে বিজেপির প্রচ্ছন্ন সমর্থন প্রমাণ করে দিচ্ছে এই ঘটনায় ভারতের কেন্দ্রীয় শাসকদল লাভের গুড় তুলতেই চাইছে নিজের ঘরে।

More Articles