স্বর্ণপদক জয়, সেরা হাসপাতালের তালিকা, আরজি করের মৃতার ডায়রিতে যা যা লেখা...
RG Kar Rape and Murder: গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই ডায়েরির কয়েকটি পাতা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। যে পাতাগুলি অবশিষ্ট আছে তাতে মৃতার স্বপ্ন, পছন্দ-অপছন্দই লেখা আছে।
১৭ দিন পেরিয়ে গেল। আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও মৃত্যু নিয়ে যে যে অন্ধকার প্রশ্নগুলি থেকে গেছিল, তা রয়েই গেছে এখনও! কেন এই ধর্ষণ, প্রকৃতই কারা জড়িত, কাদের গাফিলতি- কোনও উত্তরই জানা নেই মানুষের। আন্দোলন থামেনি এখনও। প্রতিদিন নতুন নতুন কর্মসূচি, প্রতিদিন নতুন নতুন পথে নামা অব্যাহত। শেষ কবে এমন সর্বস্তরের মানুষ বিচার চেয়ে পথে নেমেছিল মনেও পড়ে না এই বাংলার। আরজি করের তরুণীর ধর্ষণ ও হত্যার আড়ালে বড় কোনও চক্রান্ত রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। পুলিশ ও প্রশাসনের দিকে তাই বারবার উঠছে আঙুল। একজন স্বপ্নদর্শী, সম্ভাবনাময়ী চিকিৎসকের এমন মর্মান্তিক পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না কেউই। স্বপ্নই তো দেখতেন ওই তরুণী, স্বপ্নকে বাস্তব করতেই তো আরজি কর হাসপাতালে সারাদিন-রাত পরিশ্রম। তাঁর দেহের কাছে যে ডায়রি পাওয়া গেছে, তাতে ছত্রে ছত্রে এমন স্বপ্নের ছড়াছড়ি।
চিকিৎসায় স্বর্ণপদক অর্জন করার স্বপ্ন দেখতেন এই তরুণী। চিকিৎসক হিসেবেই মানুষের সম্মান জেতার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। এমনকী কোন কোন হাসপাতালে ভবিষ্যতে কাজ করতে চান তার তালিকাও রেখেছিলেন মৃতা। সেমিনার রুমে তাঁর নিথর দেহের পাশ থেকে যে ছেঁড়া ডায়রি পাওয়া গেছে, সেখান থেকেই এই তথ্যগুলি পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) হেফাজতে রয়েছে ওই ডায়রি। আদৌ ওই চিকিৎসকই ডায়রি লিখেছিলেন কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য হাতের লেখা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলছে সিবিআই।
আরও পড়ুন- “মিমিকে আমার ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হলে…”, ধর্ষণের হুমকি থেকে রেহাই নেই মিমিরও!
তবে মৃতার বাবা-মা নিশ্চিত করেছেন, মেয়ের ডায়েরি রাখার অভ্যাস ছিল। গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই ডায়েরির কয়েকটি পাতা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। যে পাতাগুলি অবশিষ্ট আছে তাতে মৃতার স্বপ্ন, পছন্দ-অপছন্দ, বাবা-মায়ের প্রতি ভালোবাসার কথাই লেখা আছে, লেখা আছে এমডি-র জন্য পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন তিনি। সমস্তটাই অপূর্ণ রয়ে গেল। ৯ অগাস্ট দিনটি এসে সমস্ত তছনছ করে চলে গেল একজন স্বপ্নদর্শীর জীবনে।
ওই ডায়রির পাতায় কিছু হাসপাতালের নাম উল্লেখ করা ছিল, যেখানে একদিন কাজ করার স্বপ্ন দেখেছিলেন মৃতা। বাবা-মাকে খুশি রাখার ইচ্ছার কথাও উল্লেখ রয়েছে বিভিন্ন পাতায়। মৃতার বাবা-মা জানিয়েছেন, কাজ এবং পড়াশোনার পরিস্থিতি নিয়ে কিছুকাল যাবৎ হতাশ ছিলেন তরুণী। সন্দীপ ঘোষের ভূরি ভূরি দুর্নীতি-তছরুপ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তাঁকে আদৌ পরীক্ষায় পাস করানো হবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন তরুণী। সন্দীপ ঘোষকে লাগাতার জেরা করছে সিবিআই। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগগুলি নিয়ে রাজ্য পুলিশও পৃথক তদন্ত করছে।
চিকিৎসকরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত তারা পিছু হটবেন না, সাধারণ মানুষও বিচার না পাওয়া অবধি আন্দোলন থামাবে না। সুপ্রিম কোর্ট স্বতোপ্রণোদিত হয়ে এই মামলা গ্রহণ করেছে। বিচার হবে কিনা সেই প্রশ্ন প্রশাসনের হাতেই কিন্তু একজন সাধারণ স্বপ্ন দেখা মেয়ে কি এই পরিণতির জন্যই বড় হলো? পড়াশোনা করল? চিকিৎসক হলো? স্রেফ একদিন লাশ হয়ে যেতে চেয়েই কি ডায়রির পাতায় পাতায় স্বপ্ন খোদাই করে গেল সে? এই স্বপ্নহত্যার বিচার কোন আদালতই বা করবে!