মাত্র ১০ হাজারের বিনিময়ে এক দিনের রোল! যে ভাবে 'বনরাকস' হয়ে উঠেছিলেন দুর্গেশ কুমার

Banrakas in Panchayat: কিন্তু মজার বিষয় প্রথমে কিন্তু পঞ্চায়েত সিরিজে ভূষণের চরিত্রটি অফারই করা হয়নি দুর্গেশ কুমারকে। বরং ওই গল্পের এক ফটোগ্রাফারের চরিত্রের প্রস্তাব পেয়েছিলেন দুর্গেশ।

গোটা গ্রামের কাছে তিনি 'বনরাকস'। গ্রামের আনাচে-কানাচে তীক্ষ্ণ তাঁর নজর, কোথায় কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে। আর এ সবের মধ্যে গ্রামের প্রধানের যদি একরত্তি খুঁতও বের করে ফেলা যায়, তাহলে আর তাঁকে পায় কে! এতক্ষণে নিশ্চয়ই সকলেই বুঝে গিয়েছেন, কথা হচ্ছে ভূষণকে নিয়ে। পঞ্চায়েত সিরিজের ভূষণ। 'দেখ রহা হ্যায় বিনোদ' থেকে শুরু করে 'আলুয়া হোগা মিটিং মিটিং'— তাঁর একাধিক সংলাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই সব মিমের মোহ ও মায়ায় ডুবে নেটদুনিয়া। সেই বনরাকসকে যিনি রক্তমাংসের করে তুলেছেন তিনি দুর্গেশ কুমার। পঞ্চায়েত ছাড়াও একাধিক সিনেমা-সিরিজে তাঁকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েতের দৌলতে ভূষণ পৌঁছে গিয়েছেন যেন দেশের প্রতিটি কোণায়।

দেখতে দেখতে তৃতীয় সিজনে এসে পৌঁছেছে পঞ্চায়েত। এই সিজনে এসে বনরাকস ওরফে ভূষণ যেন আরও স্পষ্ট, আরও প্রকট। কথায় কথায় তিনি আন্দোলন করেন। পরবর্তী পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার জন্য কূটনীতি চালাতে থাকেন প্রতি মুহূর্তে। কার্যত দর্শকদের জন্য বিনোদনের অন্য নাম হয়ে উঠেছে ভূষণ। যতক্ষণ তিনি পর্দায়, ততক্ষণ দর্শক চোখ ফেরাতে পারছে না বনরাকসের থেকে।

আরও পড়ুন: কেমন আছেন ‘পথের পাঁচালী’-র অপু ও দুর্গার অভিনেতারা?

কিন্তু মজার বিষয় প্রথমে কিন্তু পঞ্চায়েত সিরিজে ভূষণের চরিত্রটি অফারই করা হয়নি দুর্গেশ কুমারকে। বরং ওই গল্পের এক ফটোগ্রাফারের চরিত্রের প্রস্তাব পেয়েছিলেন দুর্গেশ। কিন্তু পরবর্তীতে সেই চরিত্রটি যায় টিভিএফ-এরই অ্যাসপিরেন্ট নামক অন্য একটি ওয়েব সিরিজের লেখত দীপেশ জগদীশের কাছে। আর দুর্গেশকে পঞ্চায়েতের পরিচালক পছন্দ করেন বনরাকস তথা ভূষণের চরিত্রে। ব্য়াস, বাকিটা ইতিহাস।

গ্রাম্য দোহারা চেহারা, হাঁটা-চলা থেকে ওঠাবসায় মাটির স্পর্শ, দেখলে মনে হবে এই চরিত্রটা যেন তৈরিই করা হয়েছে দুর্গেশকে ভেবে। এ ছাড়াও একাধিক ছবি, ওয়েবসিরিজে দেখা গিয়েছে অভিনেতাকে। লাপাতা লেডিস, ভক্ষক, হাইওয়ে, সুলতানের মতো বহু ছবিতেই দেখা গিয়েছে দুর্গেশকে। কিন্তু পঞ্চায়েতের চরিত্রটি যেন তাঁকে অন্যমাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু জানলে অবাক হতে হয়, পঞ্চায়েত সিজন ওয়ানে অভিনয় করার জন্য মাত্র দশ হাজার টাকা পেয়েছিলেন ভূষণ ওরফে দুর্গেশ। পঞ্চায়েত গল্পের লেখক দীপেশ কুমার দুর্গেশকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, একদিনের একটা ছোটো রোল রয়েছে, তিনি করবেন কিনা। কিছু না ভেবেই দুর্গেশ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি করবেন।

ভাগ্যিস সেদিন হ্যাঁ বলেছিলেন দুর্গেশ। নাহলে এমন একটা মজাদার চরিত্র দর্শকেরা উপহার পেতেন না পঞ্চায়েত থেকে। কারণ দুর্গেশের থেকে আর কেউ এই চরিত্রটির সঙ্গে এ হেন সুবিচার করতে পারতেন কিনা সংশয় রয়েছে। তবে দুর্গেশের অভিনেতা হিসেবে শুরুর দিন গুলো সহজ ছিল না। একটি সাক্ষাৎকারে দুর্গেশ জানান, এমনকী সফট পর্ন ছবিতে অভিনয় করতে পর্যন্ত বাধ্য করা হয়েছিল তাঁকে। অভিনেতা হওয়ার কাজ সহজ নয়। শারীরিক, মানসিক বহু রকম যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় অভিনেতাদের প্রায়শই। দু'দুবার দুর্গেশ কুমারকে চেপে ধরেছিল ডিপ্রেশনের ব্যামো। তবে সেই সমস্ত প্রতিকূলতা ঠেলে নিজেকে অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দুর্গেশ।

আরও পড়ুন:৬৬-তেই থামল জীবন, কেন এমন না বলে চলে গেলেন অভিনেতা সতীশ কৌশিক?

মধ্যপ্রদেশের ড্রামা স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন দুর্গেশ। সেখান থেকেই কয়েক জন বন্ধুবান্ধব মিলে বলিউডে ভাগ্য পরীক্ষা করতে চলে আসেন। শেষপর্যন্ত সেই পরিশ্রমের ফলাফল হাতেনাতেই পেয়েছেন দুর্গেশ। তাঁর অভিনীত বনরাকস পৌঁছে গিয়েছে প্রতিটি ঘরে ঘরে। বনরাকসের মিম, ভিডিও হাতে হাতে ঘুরেছে দেশবাসীর। সাম্প্রতিক কালে আর কোনও ওয়েব সিরিজ বা তার চরিত্র এই মাপের জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলে মনে হয় না। মাত্র দশ হাজার টাকার বিনিময়ে একদিন যে চরিত্রের জন্য রাজি হয়েছিলেন দুর্গেশ, সেই চরিত্রই আজ দেশজোড়া সম্মান এনে দিয়েছে পর্দার ভূষণকে।

More Articles