মুম্বই হল দিঘা! কাঁথি অবধি নতুন মেরিন ড্রাইভে কতটা সহজ হল সৈকত পর্যটন?
Digha Marine Drive: ২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় যশের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দিঘার মেরিন ড্রাইভের একাংশ। সেই সময় সেচ দপ্তরের কাজে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
সমুদ্রের ফুরফুরে হাওয়াকে সঙ্গে করেই এবার সরাসরি রাজ্যের মানুষ পৌঁছে যেতে পারবেন দিঘা থেকে তাজপুর কিংবা মন্দারমণি, শংকরপুর। সৌজন্যে দিঘার নতুন মেরিন ড্রাইভ। এখন আর সমুদ্র দেখতে দেখতে গাড়ি চালাতে মুম্বই যেতে হবে না। এক টুকরো মুম্বই এখন এই রাজ্যেও। ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘাকে আন্তর্জাতিক মানের সমুদ্র সৈকত হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। মুখ্যমন্ত্রীর সেই স্বপ্নকে বাস্তবের রূপ দিতে ঢেলে সাজানো হয় পুরোনো দিঘা, নতুন দিঘার সমুদ্র সৈকতকে। শুধু তাই নয়, পর্যটক টানার লক্ষ্যে শংকরপুর, মন্দারমণি, তাজপুর সহ একাধিক জায়গায় সমুদ্র সৈকত নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়।
বছর আটেক আগে ২০১৫ সালে দিঘা থেকে কাঁথি মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই এই ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার নাম দিয়েছিলেন ‘সৈকত সুন্দরী’। পুজোর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর তমলুকের প্রশাসনিক ভবন থেকে এই মেরিন ড্রাইভের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
কী থাকছে দিঘার মেরিন ড্রাইভে?
একেবারে সমুদ্রের ধার ঘেঁষে তৈরি হওয়া ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেরিন ড্রাইভ এক সুতোয় জুড়বে কাঁথি থেকে দিঘা, তাজপুর, মন্দারমণি ও শংকরপুরকে। এই রাস্তা ধরে গোটা দিঘা ভ্রমণ আগের থেকেও অনেক বেশি সুবিধেজনক হয়ে উঠবে পর্যটকদের কাছে।
২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেরিন ড্রাইভে থাকছে তিনটি সেতু। একটি সেতু থাকছে ন্যায়কালিতে, অন্য দু’টি জলদা এবং সৌলায়। বরাদ্দ ১৭৩ কোটির বাজেটের মধ্যে ১৬৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে তিনটি সেতু নির্মাণ করতে। বাকি ১০ কোটি টাকা অর্থ ব্যয় করে তৈরি করা হয়েছে রাস্তা।
আরও পড়ুন-শুকোচ্ছে ফুসফুস, আয়ু কমছে কলকাতার! অতিবৃষ্টিতে জল জমা নিয়ে ভয়াবহ তথ্য
এমনিতেই পূর্ব মেদিনীপুরকে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। মেরিন ড্রাইভের উদ্বোধন করার পাশাপাশি আরও ৯৫ টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন তিনি। এই প্রকল্পগুলির মোট অর্থমূল্য ৮৭৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুরের উন্নয়নে নয়াচর হাব ও তাজপুর সমুদ্র সৈকতে বন্দর নির্মাণ মেদিনীপুরের ক্ষেত্রে নতুন কর্ম সংস্থান তৈরি করবে বলেই জানিয়েছে রাজ্য সরকার।
যদিও নয়াচরে রাজ্য সরকারের প্রকল্প পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরে আটকে ছিল জমি সমস্যার কারণে। পরে সেই সমস্যার সমাধান হওয়ায় দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে ইকো পার্ক, সোলার পার্ক নির্মাণের কাজ।
এই ধরনের সমস্ত প্রকল্প বা উন্নয়নের ক্ষেত্রেই এই ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা যাতায়াতের ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধে দেবে বলে মত সরকারের। এই রাস্তার ফলে দূরত্ব কমছে দিঘা ও শংকরপুরের মধ্যে। অনেক কম সময়েই এখন কাঁথি থেকে দিঘা হয়ে তাজপুর বা শংকরপুর পৌঁছনো সম্ভব হয়ে উঠবে।
ভারতের অন্যান্য সমুদ্র শহরগুলিতে মেরিন ড্রাইভ থাকলেও দিঘায় এতদিন কোনও সমুদ্র সংলগ্ন রাস্তা ছিল না। যার ফলে দিঘায় রাজ্যের পর্যটকদের আনাগোনা থাকলেও মুম্বই, চেন্নাই বা পুরীর মতো বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারেনি দিঘা। এই নতুন মেরিন ড্রাইভ দিঘাকে গোটা ভারতের পর্যটকদের কাছেই আকর্ষণীয় করে তুলবে বলে দাবি সরকারের।
আরও পড়ুন- ঘরের কাছেই নির্জন প্রকৃতির হাতছানি! সপ্তাহান্তে বাঙালির নতুন গন্তব্য বেনাপুর
শুধু রাস্তা নির্মাণ নয়, তার পাশাপাশি বেড়াতে আসা পর্যটকদের সুবিধের জন্য আরও নানান পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের। প্রশাসনের বক্তব্য, নতুন রাস্তাকে মনোগ্রাহী করে তোলার যাবতীয় উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সমুদ্র ঘেঁষে যাওয়ায় সমুদ্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও প্রাণভরে উপভোগ করতে পারবেন সাধারণ মানুষ। যা নিঃসন্দেহে দিঘার পর্যটন শিল্পকে আরও উন্নত করে তুলবে।
২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় যশের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দিঘার মেরিন ড্রাইভের একাংশ। সেই সময় সেচ দপ্তরের কাজে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই ক্ষতি হয়েছিল সদ্য নির্মিত অংশটির। এই ঘটনার পরেই মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রত্যেক বছর ঘূর্ণিঝড়ের সময়েই যদি এভাবে রাস্তা নষ্ট হয় তাহলে সেচ দপ্তরের কাজ নিয়েই সমস্যা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশের পরেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামত করা হয় মেরিন ড্রাইভের ওই অংশটুকু। তাই যাবতীয় ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি নিয়েই তৈরি হয়েছে এই ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ। যে কোনও ঘূর্ণিঝড়ে সহজেই আর ক্ষতি হবে না এই রাস্তার। পুজোর ছুটিতে দু’দিন বা তারও বেশি সময় সমুদ্রের সঙ্গে কাটানোর জন্য এবং পর্যটকদের সুবিধা বাড়িয়ে তুলতে সৌন্দর্যায়ন এখন সরকারের অন্যতম হাতিয়ার।