হেঁটেছি এতটা দূর

Discourse of Walking: যে হাঁটে, সে কেন হাঁটে? স্বাস্থ্যের জন্যে হাঁটার সুঅভ্যাসের কথা বলছি না। বলছি, নিরবধিকাল হেঁটে চলার কথা। হাজার বছর পথ হাঁটা, তার নিগূঢ় দর্শন অনুসন্ধানের কথা।

ভারতজোড়ো যাত্রার প্রথম পর্বে কন্যাকুমারিকা থেকে কাশ্মীর— চার হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটেছিলেন রাহুল গান্ধি। দ্বিতীয় পর্বে তিনি নানা গাড়িতে ঘুরছেন। কখনও জিপে, কখনও বাসে। সেই যাত্রার শরিক বহু মানুষ। কেউ প্রত্যক্ষ ভাবে নানা গাড়িতে তাঁর সঙ্গ করছেন। কেউ রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছেন। রাহুল চেষ্টা করছেন পথের ধারে দাঁড়ানো প্রতিটি মানুষের সঙ্গে একবার হলেও দৃষ্টিবিনিময় করতে। এ ঘটনা আমি দেখেছি খুব কাছ থেকে। আর আমার প্রশ্নাকীর্ণ মন তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে পড়েছে সেখান থেকে। সে ভাবতে বসেছে, যে হাঁটে, সে কেন হাঁটে? স্বাস্থ্যের জন্যে হাঁটার সুঅভ্যাসের কথা বলছি না। বলছি, নিরবধিকাল হেঁটে চলার কথা। হাজার বছর পথ হাঁটা, তার নিগূঢ় দর্শন অনুসন্ধানের কথা।

আঠারো শতক জুড়ে পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে যারা এসেছেন, তাদের মূল অভিসন্ধি ছিল বাণিজ্যবিস্তার। ভাস্কো ডা গামা-র মতো ব্যক্তিত্বরা সকলেই ছিলেন রাজার বণিক প্রতিনিধি। বহু সংঘর্ষ, ঝড়জল, বিচ্ছেদ পেরিয়ে ভাস্কো ডা গামা যখন ভারত আবিষ্কারের সুসংবাদ নিয়ে দেশে ফিরলেন, ততদিনে ২৪ হাজার মাইল পথ পেরোনো হয়ে গিয়েছে। সমুদ্রে কেটেছে তিনশোর বেশি দিন। সব মিলে দু'বছর অতিক্রান্ত। তারপর সেই সমুদ্রপথে গোপন শোষণযন্ত্র হাতে বহুজন এসেছে। বহু রাজ অনুগত ভৃত্য পা রেখেছে এই দেশে। কিন্তু পরিব্রাজনের ইতিহাস বিবেচনায় তাদের রাখা যায় না। এর ঠিক বিপ্রতীপে আছেন প্রাচ্যের বহু পীর ফকির আউলিয়া দরবেশ পরিব্রাজকরা। যারা দেশে দেশান্তরে হেঁটেছেন, আত্মবীক্ষণের টানে।

জীবনের বড় সময় সংসারকে দিয়েছেন জালালুদ্দিন মুহাম্মদ রুমি। মাদ্রাসাতে মৌলবীর কাজ করেছেন। আইনের পাঠ দিয়েছেন নাগরিকদের। সেই রুমিই শেষ জীবনে বেরিয়ে পড়লেন। বহুপথ ঘুরে এলেন দামেস্ক নগরে। চারবছর থাকলেন সেখান। সেখানে তাঁর দেখা হলো দরবেশ শামস তাবরিজির সঙ্গে। শামস গোটা মধ্যপ্রাচ্য পায়ে হেঁটে ঘুরেছেন, আর খুঁজেছেন এমন একজন মানুষকে যে তাঁর সঙ্গ সহ্য করবে। কথিত আছে, একটি অলৌকিক স্বর নাকি তাকে বলেছিল, সেই ব্যক্তির নাম জালালুদ্দিন। অর্থাৎ দুই পথিক একে অন্যেকে খুঁজছিলেন। পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি। চারবছর দু'জনে একসঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। নিরন্তর কথাবার্তা চালিয়েছেন। ১২৪৮ সালের এক শীতের রাতে শামসকে তার ঘরের পিছন দরজা থেকে কেউ ডাকে। শামস সেই যে বেরিয়ে যান আর ফেরেননি। দূরদেশ থেকে পায়ে হেঁটে এসে, পথে খুঁজে পাওয়া বন্ধুত্বের মূল্য দিতে হলো তাঁকে। শোনা যায়, রুমির পুত্রর সম্মতিতেই শামসকে হত্যা করা হয়।

৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে, ৬৪ বছর বয়সে পায়ে হেঁটে ভারতে আসেন ফা হিয়েন। চিনের রাজধানী থেকে পায়ে হেঁটে ভারতে পৌঁছতে তাঁর ছ'বছর সময় লেগেছিল। বরফসঙ্কুল শুষ্ক মরুভূমি, বন্ধুর পর্বত, প্রকৃতির সবরকম বাধাবিপত্তি পার হতে হয়েছে তাঁকে। ফা হিয়েন পথে যা দেখেছেন তা নিয়েই লিখেছেন। বহু নগরবন্দর ঘুরে, নালন্দায়, পাটলিপুত্রে দীর্ঘসময় কাটিয়ে এসেছেন বাংলায়। ফা হিয়েন না লিখলে, জানার উপায় থাকত না বাংলার মেদিনীপুর জেলার তমলুকে সেই সময়ে চব্বিশটি বৌদ্ধবিহার ছিল। ফা হিয়েনই প্রথম চৈনিক যাঁর বর্ণনায় সিংহল তথা শ্রীলঙ্কার কথা উঠে আসে। শ্রীলঙ্কায় দু'বছর ছিলেন তিনি । ৪১২ সালে তিনি ফিরবেন নানকিং। ব্রিটিশরা এদেশ থেকে নিয়ে গিয়েছিল বস্ত্র, শিল্পবিপ্লবের কাঁচামাল। ফা হিয়েন নিলেন এবং দিলেন জ্ঞান। পায়ে হেঁটে ঘুরে ঘুরে মানুষের সঙ্গে মিশলেন তাদেরই একজন হয়ে। সিল্করুট থেকে কনৌজ, যে জায়গায় থেকেছেন তা নিয়েই লিখেছন তিনি। সেই লেখা পড়ে এই দেশকে চিনেছে দূরের লোক। এসেছেন আরও অসংখ্য পরিব্রাজক। স্বাভাবিক সাংস্কৃতিক বিনিময় ঘটেছে। আর ফা হিয়েন, তাঁর সারাজীবন অতিবাহিত করেছেন বৌদ্ধপুঁথির অর্থ অনুসন্ধানে, অনুবাদে।

ফা হিয়েন কিংবা তিনশো বছর পর ভারতে আসা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙয়ের জীবন প্রভাবিত হয়েই কিনা জানি না, ষোড়শ শতকে চিনে লেখা হয় জার্নি ট্যু দ্য ওয়েস্ট, পশ্চিমে যাত্রা। উ চেঙ্গেনের লেখা এই উপন্যাস চিনের সর্বজনপূজ্য ধ্রুপদী সাহিত্য। এই সাহিত্যের কেন্দ্রীয় চরিত্র সানজ্যাং আদতে জুয়াংজ্যাং নামক সাধকের জীবন অবলম্বনে নির্মিত। কাহিনিতে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে তিনি পদব্রজে ভারত এবং মধ্য এশিয়া ঘুরে বেড়ান। এবং বহু দুঃখের ঋতু পার করে দেশে ফেরেন। রাজগীর থেকে তিনি বহু বৌদ্ধ পুঁথি সংগ্রহ করেন। গ্রন্থভুক্ত একশো অধ্যায়ের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে জল হাওয়ার বর্ণনা। উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের সাররিয়েল, অতিলৌকিক বিবরণ। ছত্রে ছত্রে বিপদ। সেই বিপদের তোয়াক্কা না করেই এগিয়ে চলেছেন সানজ্যাং। এই প্লটের উত্তরাধিকার আজও বহন করছে গোটা প্রাচ্য, নানা ভাবে। ভেবে দেখুন, প্রথম কম্পিওটার ভিডিওগেম সুপার মারিওতে মারিও কিন্তু কেবল হাঁটে। বড়জোর একটু জোরে হাঁটে। কখনও অন্য কোনো গাড়িতে চড়ে না। ক্রমে সে প্রকৃতিদত্ত বিপদ অতিক্রম করে শক্তিশালী হয়।  জাপানের জনপ্রিয় মাঙ্গা কমিক্সেও এই উপন্যাসের অনুরণন ফিরে ফিরে আসে। ২০১৪ সালে মালয়েশিয়ার খ্যতনামা পরিচালক সাই মিং লিয়াং জার্নি ট্যু দ্য ওয়েস্ট নামে একটি দীর্ঘ ছবি বানান। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে সেই ছবিটি এসেছিল। দীর্ঘ, মিনিমালিস্ট ছবিটি জুড়ে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে ভিড়ের মধ্যে হাঁটতে দেখা যায়। নগরীর প্রাণকেন্দ্রে তাঁর দীর্ঘ, একমনা পথ হাঁটা নকল করতে শুরু করে এক সাধারণ পথচারী। গোটা ছবিজুড়ে এই একটি ঘটনাই আবর্তিত হয় নানা ফ্রেমে, সিকোয়েন্সে। আসলে হাঁটা বৌদ্ধবিশ্বাসীদের কাছে এক ধরনের ধ্যান। একে তারা কিনহিন বলেন। একজায়গায় বসে দু'বার ধ্যানের অন্তবর্তী সময়ে হাঁটেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। একেকটি পদক্ষেপ করা হয় একটি পূর্ণ-শ্বাসের পরে।

                                                              পায়ে হাঁটা ব্য়তীত অন্য পথ খোলা নেই মারিও-র জন্যে।

একদিকে অচেনা, অদেখাকে জানা, জ্ঞান আহরণ, অন্যদিকে নিজের অন্তরকে জানা, অন্তরতমের সন্ধান, হাঁটার কারণ যেন ছিল এই। পথহাঁটাকে মুক্তির ধারণার সঙ্গে জুড়ে দিলেন মহাত্মা গান্ধী। যেখানেই অন্যায় সেখানেই পৌঁছে গিয়ে পদব্রজে ঘুরতে লাগলেন তিনি। ১৯৩০ সালে লবণ সত্যাগ্রহের ডাক দিলেন। ১২ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল। প্রতিদিন পায়ে হেঁটে পার করলেন ২৪১ মাইল। অসহযোগ, আইন অমান্য, ভারত ছাড়ো— প্রতিটি আন্দোলনে গান্ধিজি পদযাত্রাকে প্রতিবাদের পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। প্রতিবার দেখা গিয়েছে, যে পথ দিয়েই তিনি যাচ্ছেন নতুন মানুষ জুটে যাচ্ছে তাঁর সঙ্গে। হাঁটা সবচেয়ে ধীরগতির চলমানতা। পৃথিবী বীক্ষণের সবচেয়ে মহৎ উপায়। যেন পরমতসহিষ্ণুতার একটি মূর্ত উদাহরণ। যে হাঁটছে সে স্রেফ নিজের ইন্দ্রিয়নিষ্ঠ নয়। সে অন্যেকে দেখছে, শুনছে, চিনছে। গণতন্ত্রের ধারণার সঙ্গে তাই নিবিড় ভাবে যুক্ত নিরন্তর হেঁটেচলা।

গান্ধির হাঁটায় কী দেখছি? দেখছি একদিকে জনবল সংগ্রহ হচ্ছে, অন্যদিকে জনতাও তাঁর শূন্য মনে নেতার বিগ্রহ তৈরি করতে পারছে। সেই নেতা কান্নার সেতু পার হয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন। নোয়াখালিতে গান্ধি প্রায় তিনমাস থেকেছেন। প্রতিদিন পায়ে হেঁটে দাঙ্গাবিধ্বস্ত অঞ্চলে ঘুরে বেরিয়েছেন। যে কাঁদছে, যে স্থির, স্থানু, যার পায়ে শেকল, তাদের সবাইকে মুক্ত করার ভার যেন যে হাঁটছে তাঁর কাঁধে। গান্ধির জন্যেই হাঁটা তাই বন্ধনমুক্তির দ্যোতনা বয়ে আনে। হিসেব করলে দেখা যাবে গোটা জীবনে গান্ধী যা হেঁটেছেন তাতে পায়ে হেঁটেই দু'বার পৃথিবী ঘোরা সম্ভব। প্রতিদিন গড়ে ১৮ কিলোমিটার পথ হেঁটেছেন গান্ধি। ভারত তো বটেই। বিশ্বে কোনো নেতা এর ধারেকাছেও নেই। এই কারণেই গান্ধি অমর। আজও ফিলিস্তিনি সমাজের একাংশ গান্ধির পথে চলতে চাইছে। যে বন্ধন ছিন্ন করার কথা বলছি তা বোঝা যাবে রামকিংকর বেইজের তৈরি গান্ধিমূর্তিটির দিকে তাকালে। মূর্তিটি স্থির কিন্তু বেগবান। গান্ধি যেন সব গ্রন্থি ছিন্ন করে হেঁটে চলেছেন তাঁর আদর্শপথে। থমকে যেতে হয় তাঁর পায়ের কাছে রাখা সারসার কঙ্কাল দেখে। ঋত্বিক ঘটক তাঁর তথ্যচিত্রে (রামকিংকর বেইজ-এ পার্সোনালিটি স্টাডি) রামকিংকরকে জিজ্ঞেস করেন, এই কঙ্কালগুলি কেন? রামকিংকরের উত্তর,

"যুগযুগান্ত ধরে ওই লোকগুলা পায়ের তলায় পড়ে আছে। আজকে সেই বুড়োর পায়ের তলায় সেই স্কাল দেখানো হয়েছে।"

পথে পড়ে আছে মানুষ। মৃত মানুষ। মানুষের দুঃখ। পায়ে এসে লাগছে সেই দুঃখের রক্তাভ ছিটে। গান্ধীর রক্তাক্ত পা দুটো এগিয়ে যাচ্ছে। হাঁটা যেন দুঃখহরা।

হাঁটা প্রত্যাঘাতও। প্রমাণ চিনের লং মার্চ। দু'বছরে হেঁটে ৬ হাজার কিলোমিটার পথ, ১৮টি পর্বতশ্রেণি, ২৪টি নদী অতিক্রম করেছিলেন চিনা কমিউনিস্টরা। বামপন্থীরা এই ঐতিহাসিকতা থেকেই হাঁটার শিক্ষা নিয়েছে। যে প্রতিদিন দুঃখে থাকে, বিপদে থাকে সে হাঁটবে, সমব্যথীদের সঙ্গে দীর্ঘপথ হাঁটবে। হাঁটতে হাঁটতে পা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাবে। যে হাঁটছে সে জানবে এই যন্ত্রণাই তার প্রত্যাঘাত। শত শত মানুষের রক্তাক্ত পায়ের পাতা শাসককে ভয় দেখাবে।

মনে পড়ে যাচ্ছে শেকুবাই ওয়াগলের কথা। এই তো কয়েক বছর আগে কৃষিঋণ মকুব, ভূমিহীন আদিবাসীদের জঙ্গলের জমির পাট্টা, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য, সেচের সুবিধা এবং কৃষকদের পেনশনের দাবিতে নাসিক থেকে মুম্বই— মহারাষ্ট্রের কৃষকদের ‘লং মার্চে’ হেঁটেছিলেন শেকুভাই। প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ। চটি ছিঁড়ে গিয়েছিল। পায়ে ফোসকা পড়ে দু’পায়ের তলার পুরো চামড়াটাই প্রায় উঠে এসেছিল। তবু তিনি থামেননি।

                                                                                     শেকুবাইয়ের রক্তাক্ত পা।

হাঁটার দার্শনিক দিক ভাবিয়েছে পাশ্চাত্যের চিন্তকদেরও। মাইগ্রেনের যন্ত্রনায় বসতে শুতে পারছেন না, কিছু লিখতে পারছেন না। ফ্রেডরিক নিটশে এই অবস্থায় শান্তি খুঁজেছেন দুদণ্ড হাঁটার মধ্যেই। প্রতিদিন চার ঘণ্টা, এমনকী সময় বিশেষে ছয়-আট ঘণ্টাও হেঁটেছেন নিটশে। বলেছেন, যারা স্রেফ বইয়েই বাঁচে আমি তাদের দলে নই। বাইরে তাকিয়ে দেখাটা একটা অভ্যেস। আমাদের ভাবনা লুকিয়ে আছে হাঁটায়, পাহাড় চড়ায়, নাচায়, একা সমুদ্রে যাওয়ায়। নিটশে লেখেন,

যত কম বসবে ততই ভালো। যে চিন্তা খোলা হওয়ায়, হাঁটা-চলার মধ্যে জন্মায়নি, প্রতিটি পেশি যে ভাবনার জন্মের সঙ্গে জড়িত নয়, তাকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনও কারণ নেই।

নিটশের মতে, একটি ভালো বইয়ের প্রধান গুণ বইটির হাঁটতে চলেফিরে বেরানোর ক্ষমতা। হাতফেরতা বই যাকে বলে আরকি। নিটশের বিশ্বাসে হাত নয়, আসলে পা-ই লেখে। যার পা যত সঞ্চারণশীল, তার লেখা ত সুরেলা।

পা লেখে, একথাটি লিখেই মনে পড়ল জীবনানন্দ দাশের কথা। রাতবিরেতে পায়ে হাঁটাই ছিল তাঁর নেশা। সিগনেট প্রেস কর্তৃক প্রকাশিত, জীবনানন্দ দাশ রচিত বহুচর্চিত বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থের নামকবিতা শুরু হয় এইভাব-

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে

আর এই গ্রন্থটির শেষ কবিতার নাম পথ হাঁটা। তার শেষ পঙক্তি-

উড়ে গেছে; বেবিলনে এক-একা এমনই হেঁটেছি আমি রাতের ভিতর
কেন যেন; আজো আমি জানিনাকো হাজার-হাজার ব্যস্ত বছরের পর।

একা মানুষ কেন হাঁটে? কতদূর হাঁটতে হবে তাকে! কতদিন হাঁটছে সে? উত্তরটা আছে, রবীন্দ্রনাথের গানে।

মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল-মাঝে

আমি মানব একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে, ভ্রমি বিস্ময়ে ॥

একটাই শব্দবন্ধ-ভ্রমি বিস্ময়ে। দু'বার ব্যবহার করলেন রবীন্দ্রনাথ। আমরা দু'কদম হাঁটি। দু'বার পা ফেললে আসলে একটি পদক্ষেপ সম্পূর্ণ হয়। প্রকৃতপ্রস্তাবে এগোনো যায়। যত এগোবো তত বিস্ময়। যতদূর বিস্ময় ততদূর পথ হাঁটা।

More Articles