বেশি বয়সেই যৌনতা বেশি উপভোগ্য? বিস্ফোরক উত্তর গবেষণায়
Sexual Health of Aged People: যারা যৌনভাবে সক্রিয় নন সেভাবে তারাও দীর্ঘ সম্পর্কে থাকাকালীন স্পর্শ, আদর বা অন্যান্য ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে যৌন তৃপ্তি অর্জন করতে পারেন।
ওয়াইন যত পুরনো হয় তত বাড়ে স্বাদ। আর যত অভিজ্ঞতা বাড়ে ততই বাড়ে ধৈর্য ও যৌনতার গভীরতা। যৌনতা এক শিল্প, আর শরীরের ভাষা বোঝার অভিজ্ঞতা দেয় বয়স। কিন্তু শারীরিক বয়স বাড়া মানেই অনেকের ক্ষেত্রেই যৌনতার আকর্ষণ ফুরিয়ে যাওয়া। বয়সের শৈথিল্য শরীরে প্রভাব ফেলে বিপুল। ফলে একে অন্যের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করলেও তাকে বাস্তবায়িত করা অসম্ভবপর ঠেকে অনেকের ক্ষেত্রেই। অথচ বাস্তব নাকি একেবারেই অন্য। ৬০ বছর বয়সী প্রতি আটজন পুরুষের মধ্যে প্রায় সাতজন এবং প্রতি পাঁচজন মহিলার মধ্যে তিনজন নিয়মিত যৌনতা উপভোগ করেন। জানলে অবাক হতে হয়, গড়ে ১০ জন প্রৌঢ় মানুষের মধ্যে ৭ জনই যৌনতায় মত্ত থাকেন। ১৮-২৯ বছর বয়সী যৌনভাবে সক্রিয় যুবক-যুবতীর তুলনায় সংখ্যাটা নেহাত কম নয়।
অনেকেরই বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে, খুব কমজনই ৭০-এ পৌঁছেও যৌনমিলন চালিয়ে যান। অথচ সমীক্ষা বলছে, এমনকী আশি পেরনো প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন নিয়মিত যৌনতা করেন। মহিলাদের জন্যও এই পরিসংখ্যান প্রায় অর্ধেক। ক্লান্তি, বার্ধক্য এবং বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাড়া ওষুধের আধিক্য সত্ত্বেও একটা বড় অংশের মানুষ যৌনিতায় লিপ্ত, নিয়মিত। তাই স্পষ্টতই বলা যায়, যৌনতা এখনও আগের মতোই, অন্তত মধ্য বয়সের মতোই আকর্ষণীয়। কিন্তু যৌনতা কি বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আরও ভালো হতে শুরু করে?
আরও পড়ুন- জানেন যৌনতায় তৃপ্তি আপনার অধিকার! কিন্তু কতটা সুখী ভারতীয়রা?
হ্যাঁ, যত বয়স বাড়ে যৌনতা ততই সুন্দর হয়। "২০ বছর বয়সীরা প্রচুর যৌনমিলন করছে, কিন্তু আসলে এটি উপভোগ করছে ৪০ বছর বয়সী মানুষরা," জানাচ্ছে ব্রিটেনের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক খোঁজার একটি ওয়েবসাইট। ২০১৫ সালে একটি সমীক্ষা শুরু করেছিল এই ওয়েবসাইট। ৮০০ জনেরও বেশি মানুষের মধ্যে সমীক্ষা করে তারা খুঁজে বের করতে চান, যৌনতা কখন সবচেয়ে আনন্দদায়ক হয়।
২০১৫ সালের অন্য আরেক সমীক্ষায় ১৮ বছরের বেশি বয়সী ১,০০০ জনেরও বেশি মহিলার মধ্যে বেশিরভাগই জানিয়েছিলেন তাদের যৌন জীবন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত হয়েছে। কেবল ভালোই হয়নি, ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে যৌনতা আস্তে আস্তে যৌনক্রীড়া হয়ে উঠেছে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে যৌনতার গুণমান বাড়ার কারণ কী? এর বেশ কয়েকটি তত্ত্ব রয়েছে- যার মধ্যে অনেকগুলি মূলত আমাদের শরীরকে বোঝা আর আত্মবিশ্বাস বাড়ার সঙ্গে যুক্ত। ২০১৬ সালে পিটসবার্গ ইউনিভার্সিটির মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক হলি থমাস জানিয়েছেন, তারা যাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তারা নিজেদের সঙ্গীদের সঙ্গে নিজেদের মতো করে যৌনতায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছে।
এই মানুষরা নিজেদের শরীরের সঙ্গে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ ছিল। তারা অনুভব করতেন যে তারা নিজেদেরকে শরীরকে আরও ভালোভাবে জানেন, তাদের শরীরের কোন অংশ বেশি সংবেদী, কোন অংশ কখন কাজ করে, দেহ কীভাবে কী চায় তা তারা বুঝতে পেরেছেন। তাদের কম বয়সের তুলনায় বেশি বয়সে এসে আত্মবিশ্বাসও বেশি ছিল এবং এটি তাদের যৌন অভিব্যক্তির ক্ষেত্রে আরও স্বাধীন করে তুলেছে।
বয়স এবং অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি সচেতনতাও আসে। ২০১৭ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বয়সের সঙ্গে জীবনের যৌন গুণমান সাধারণত হ্রাস পায়, নিয়ন্ত্রণের মাত্রা, চিন্তাভাবনা, যৌনতার চেষ্টা এগুলি সবই তাতে প্রভাব ফেলে। একইসঙ্গে বার্ধক্য দক্ষতা এবং কৌশল বোঝার ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে তোলে যা যৌনজীবনের মানের সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থাৎ বয়স বাড়লে মানুষের যৌনজ্ঞান বাড়ে, যে জ্ঞান সঙ্গীর সঙ্গে তাঁকে আরও যত্নশীল, সংবেদনশীল ও আকর্ষণীয় করে তোলে।
যদি যে কোনও মানুষকে জিজ্ঞাসা করা যায় যে তারা তাদের যৌন জীবন নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট, দেখা যাবে অল্পবয়সীরাই বয়স্কদের তুলনায় বেশি সন্তুষ্ট। তার মানে কি এই পার্থক্যের জন্য বার্ধক্যই দায়ী? আসলে বিষয়টা এক্ষেত্রে খানিক আলাদা। ধরা যাক, যে মানুষটি ৩০ বা ৪০-এর দশকে জন্মগ্রহণ করেছেন তার কাছে যৌনতা এত সহজ ছিল না। যে মানুষ ৮০ বা ৯০ বা আরও পরে জন্মগ্রহণ করেছেন, তিনি ৭০-এর যৌন বিপ্লবের পরে বড় হওয়া মানুষ। তাই অন্যদের থেকে যৌনতার প্রতি তাঁর মনোভাব ভিন্ন হতে বাধ্য। বিভিন্ন প্রজন্মের অগ্রাধিকার বদলে যায়। তবে একথা অবশ্যই সত্য যে, যত বয়স বাড়ে মানুষের মধ্যে নিজেদের শরীর সম্বন্ধীয় ভরসা বাড়ে। যেহেতু যৌনতা বিশ্বাসের ও আরামের উপর নির্ভরশীল তাই পারস্পরিক ধৈর্য ও নির্ভরতা এক্ষেত্রে কাম্য। তাই বেশি বয়সে যৌনতা আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। স্থিরতা, ধৈর্য আর পারস্পরিক আদানপ্রদানে যৌনতা স্রেফ যৌনতা থাকে না, তা দৈহিক ছাপিয়ে মানসিক শান্তির দিকেই নিয়ে যায় দুইজনকে।
আরও পড়ুন- যৌনতা হোক বা যন্ত্রণা, দেহই ফকিরদের পরীক্ষাগার
যৌন তৃপ্তির জন্য যৌন কার্যকলাপ সবসময় জরুরি নয়। যারা যৌনভাবে সক্রিয় নন সেভাবে তারাও দীর্ঘ সম্পর্কে থাকাকালীন স্পর্শ, আদর বা অন্যান্য ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে যৌন তৃপ্তি অর্জন করতে পারেন। "অর্গাজম অনুভব করার চেয়ে সঙ্গীর সঙ্গে মানসিক এবং শারীরিক ঘনিষ্ঠতা আরও গুরুত্বপূর্ণ," বলছেন বিজ্ঞানীরা।
বেশি বয়সেও কীভাবে যৌন জীবন সুস্থ রাখবেন?
বৃদ্ধ বয়সেও দুর্দান্ত যৌনতা সম্ভব হতে পারে, তবে তার নিশ্চিত কোনও গ্যারান্টি নেই। কখনও কখনও অনিবার্য জৈবিক পরিবর্তনের কারণেও যৌন জীবন আকর্ষণীয় থাকে না, উদাহরণস্বরূপ, মেনোপজ লিবিডো, যোনির শুষ্কতা এবং যৌনতার সময় ব্যথা যৌনতায় খারাপ প্রভাব ফেলে। এবং গোটা বিষয়টা নির্ভর করে যৌনসঙ্গীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও। আসলে সুস্থ ও সক্রিয় যৌন জীবন চাইলে ইতিবাচক চিন্তা করা অত্যন্ত জরুরি। যৌনভাবে যারা আশাবাদী, সেই মহিলাদের মধ্যে বেশি বয়সেও সাপ্তাহিক যৌনতার চাহিদা দেখা গিয়েছে।
বাজারে যৌনতায় সহায়ক বিবিধ পণ্য রয়েছে, যা বয়সকালে কাজে আসে। মেনোপজ-পরবর্তী মহিলাদের জন্য লুব ব্যবহার করা এর মধ্যে অত্যন্ত জরুরি এক বিষয়। যৌনতায় যাওয়ার আগে বডি মাসাজ বা যৌনতা নিয়ে কথা বলা, স্পর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যৌনতা সময় দাবি করে, যে কোনও বয়সেই।