বন্ধ স্কুলের ভেতর থেকে ভেসে আসে অশরীরী হাসিকান্না, কুয়াশাঘেরা পাহাড়ে অলৌকিকের হাতছানি
ডাও হিলে যাঁরা ভ্রমণে যান, তাঁদের আগে থেকেই সতর্ক করে দেওয়া হয় ডেথ রোড সম্পর্কে। কিন্তু কী এই ডেথ রোড?
বর্ষাকাল মানেই ভূতের গল্প, আর ভূতের গল্প পড়ার আর শোনার সঠিক সময়ও সেই বর্ষা। বাইরে মেঘলা আকাশ, ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি, হাতে গরম চা বা কফি, সঙ্গে গল্পের বই বা ভূতের গল্প বলার লোক থাকলেই আর কী চাই! সব জমে বর্ষার পকোড়া হয়ে যাবে। ভূতের গল্প শুনতে কে না ভালবাসে, যতই ভয় লাগুক আর রাতে ঘুম না আসুক, জমজমাট ভূতের গল্প শোনার সুযোগ কেউ ছাড়বে না। ভারতে, আমাদের বাংলায় ভৌতিক স্থানের অভাব নেই আর তাদের সকলকে নিয়েই রয়েছে নানা গা ছমছমে কিংবদন্তি। কেউ সেসব গল্প শুনে ভিরমি খায়, নয়তো কেউ কানে হাত চাপা দিয়ে রামনাম জপ করতে থাকে। আবার অনেকে এমনও আছে, যারা সেইসব কিংবদন্তির টানে ‘তেনা’-দের স্থানে পৌঁছে যান সত্য যাচাই করতে।
ভারতের আনাচকানাচে এইভাবেই নানা রহস্য, কিংবদন্তি আর অদ্ভুত গল্প ছড়িয়েছিটিয়ে আছে। বিশ্বাস করা না-করা ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু সেইসব জায়গার গল্প শোনার পর সেই জায়গাটা দেখার আগ্রহ কিন্তু বাড়তে থাকে। কোনও স্থানে সূর্য ডোবার পর যাওয়া বারণ তো কোথাও সরকারের নিষেধাজ্ঞা বোর্ড ঝুলছে। সেরকমই একটি স্থান রয়েছে আমাদের খাস বাংলায়। ভরা বর্ষায় গা-ছমছম করা অনুভূতি পেতে চাইলে কার্শিয়াং এর ডাও হিল চলে যান। সুন্দর পাহাড়ি রাস্তা, সঙ্গে অর্কিডের বন, ঘন অরণ্য, আর চা-বাগান। সেই সঙ্গে হাতছানি মৃত্যুময় রাস্তা, মুন্ডুহীন ভূত, ভুতুড়ে স্কুলের অলৌকিক আবহ-র।
দার্জিলিং থেকে ৩২ কিমি দূরে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় হিলস্টেশন কার্শিয়াং। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতির ভান্ডার এই পাহাড়ি শহর পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। সবুজঘেরা পাহাড় আর কুয়াশার সাদা চাদরে মোড়া ঝাউবন– সব মিলিয়ে কার্শিয়াং। লেপচা ভাষায় কার্শিয়াং শব্দের অর্থ ‘সাদা অর্কিডের স্থান’। পাহাড়ের কোলের এই এলাকায় আছে মনমাতানো প্রাকৃতিক রূপ আর মায়াবী রহস্যময়তা। বলা হয়, কার্শিয়াং এর ডাও হিলের কিছু ঘটনা এই জায়গাকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।
আরও পড়ুন: রহস্যমৃত্যুর ডিপো! ডাকবাংলো মানেই অলৌকিকের হাতছানি
ডাও হিলে যাঁরা ভ্রমণে যান, তাঁদের আগে থেকেই সতর্ক করে দেওয়া হয় ডেথ রোড সম্পর্কে। কিন্তু কী এই ডেথ রোড? ডাও হিল এবং বনদফতরের এই মাঝের রাস্তা অত্যন্ত ভয়ানক। স্থানীয় কাঠুরেদের মতে, তাঁরা অনেকেই এই রাস্তায় অনেকবার ভূতুড়ে ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন। তাদের দাবি, দেখা দিয়েই অদৃশ্য হয়ে যায় একটি ছেলের মস্তকহীন দেহ। তবে একবার নয়, একাধিকবার একই ঘটনা ঘটেছে। ঘন কুয়াশার মধ্যে হঠাৎ করে দেখা দিয়েই সে জঙ্গলে মিলিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, সাদা শাড়ি পড়া এক বৃদ্ধাকেও নাকি প্রায়ই দেখা যায় ঘুরে বেড়াতে। অনেকে আবার লক্ষ করেছেন, একজোড়া লাল চোখ যেন তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে, যেন তাঁদের গতিবিধি নজরে রাখছে। এইসব দেখার পর অনেকেই নাকি সেই পথে মারা যান বা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
এখানেই শেষ নয়, অনেকে মনে করেন, অতীতে এই জায়গায় বহু মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। আর সেইসব মানুষের অতৃপ্ত আত্মা রাস্তার চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। ডাও হিলের ভূতুড়ে কাণ্ডকারখানার আরেকটি স্থান হলো ভিক্টোরিয়া বয়েজ এবং গার্লস হাই স্কুল। ১৮৭৯ সালে ব্রিটিশ উদ্যোগে স্থাপিত হয় এই স্কুল। শীতকালে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকে এখানকার স্কুল। কিন্তু স্থানীয় কিছু মানুষের মতে, স্কুল বন্ধ থাকাকালীনও স্কুলের ভেতর থেকে বাচ্চাদের হাসিকান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়। সন্ধেবেলাতেও কারও পায়ের চলাফেরার শব্দ শোনা যায়। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এইসব কথা নেহাৎ মনগড়া কাহিনি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
দিনের বেলাতেও এই স্থান জনমানবহীন এবং নির্জন থাকে। সর্বদাই যেন এক গা-ছমছম করা বাতাসের আনাগোনা। ভূতুড়ে কাহিনিতে ভরা এই হিলস্টেশনে মানুষ আসে এক অনন্য অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে। তবে সব সময়ই যে সফল হয়, তা নয়। এইসব অশরীরী আবার পাহাড় ছেড়ে শহরে আসে না। পাহাড়েই তাদের বাস। ভারতের অন্যতম ভয়ংকর হিলস্টেশনের তকমা পেয়েছে এই শহর। যদি নিজে রোমাঞ্চ ভালবাসেন, তাহলে তো কথাই নেই, এই বর্ষায় বাক্সপ্যাঁটরা নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। আর যদি ভয় পেয়ে গিয়ে থাকেন, তাহলে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান ক্যানসেল করবেন না। ভুতুড়ে জায়গার অভিজ্ঞতার গল্প শুনতে তো পাবেনই, তাছাড়াও এই ছোট্ট গ্রামের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই।