দেশজুড়ে ভয়াবহ দুর্নীতি! বন্ডের বিনিময়ে কাদের কী কী সুবিধা দিয়েছে বিজেপি?
Electoral Bond Donation Scam: এমন অনেক কোম্পানি আছে যারা ইলেক্টোরাল বন্ডে অর্থ দান করেছে এবং এর পরপরই সরকারের কাছ থেকে বিশাল সুবিধা পেয়েছে।
নির্বাচনী বন্ডের সমস্ত তথ্য প্রকাশ করতে এসবিআইকে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কে কাকে টাকা দিয়েছে তা প্রকাশ্যে না এলেও কে কতটা অঙ্কের অনুদান দিয়েছে তা স্পষ্ট। লোকসভা নির্বাচনের পর পর্যন্ত গোটা বিষয়টা স্থগিত করার চেষ্টা করা হলেও, ভোটের আগেই ঝুলির বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। ২০১৯ সাল থেকে ১,৩০০ টিরও বেশি কোম্পানি এবং ব্যক্তি নির্বাচনী বন্ডে দান করেছে। এর ফলে ৬,০০০ কোটিরও বেশি টাকা পেয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। এখনও অবধি, নির্বাচনী বন্ডের এই তথ্যে বিজেপির অন্তত চারটি দুর্নীতি প্রকাশ পেয়েছে।
১) দেনা পাওনা: এমন অনেক কোম্পানি আছে যারা ইলেক্টোরাল বন্ডে অর্থ দান করেছে এবং এর পরপরই সরকারের কাছ থেকে বিশাল সুবিধা পেয়েছে।
মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রা নির্বাচনী বন্ডে ৮০০ কোটি টাকা দিয়েছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে তারা অনুদান দিয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। এর ঠিক এক মাস পরেই ১৪,৪০০ কোটি টাকার থানে-বরিভালি টুইন টানেল প্রকল্পের বরাত পায় তারা।
জিন্দাল স্টিল অ্যান্ড পাওয়ারও অনুদান দিয়েছে। ২০২২ সালের ৭ অক্টোবর তারা ২৫ কোটি টাকা দিয়েছে। টাকা দেওয়া মাত্র ৩ দিন পরেই, ১০ অক্টোবর গারে পালমা IV/৬ কয়লা খনি পায় তারা।
২) তোলাবাজি: বিজেপির তোলাবাজির কৌশল এখন দেশবাসী সহজেই আন্দাজ করতে পারে। বিশ্লেষকরা বলেন, ইডি/সিবিআই/আইটি হচ্ছে সেই তোলা তোলার অন্যতম মাধ্যম। এই কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির মাধ্যমে বিজেপি আসলে কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থাকে লক্ষ্য করে অভিযান চালায় এবং তারপর কোম্পানিকে এই ইডি-সিবিআই জুজুর থেকে সুরক্ষা দিতে তোলা চায়৷ ইলেক্টোরাল বন্ডে সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়েছে এমন ৩০ জন দাতার মধ্যে অন্তত ১৪ জনের বিরুদ্ধেই ইডি-সিবিআই অভিযান চালানো হয়েছে।
এই বছরের শুরুর দিকে একটি তদন্তে জানা যায়, ইডি-সিবিআই ও আয়কর দফতরের অভিযানের পরে, কোম্পানিগুলি নির্বাচনী ট্রাস্টের মাধ্যমে বিজেপিকে অনুদান দিতে বাধ্য হয়েছিল৷ হেটেরো ফার্মা এবং যশোদা হাসপাতালের মতো বহু কোম্পানি বন্ডের মাধ্যমে অনুদান দিয়েছে।
আয়কর বিভাগ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শিরডি সাই ইলেক্ট্রিক্যালসে অভিযান চালায়। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শিরডি সাই ইলেক্ট্রিক্যালস নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ৪০ কোটি টাকা অনুদান দেয়।
ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেলস সার্ভিসেন ১৩৬৮ কোটি টাকা দান করেছে৷ এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে তারাই সবচেয়ে বেশি অনুদান দিয়েছে। ফিউচার গেমিংয়ের বিষয়টি সত্যিই খুব আকর্ষণীয়। ২০২২ সালের ২ এপ্রিল ইডি ফিউচার গেমিংয়ের অফিসে অভিযান চালায়। এর ঠিক ৫ দিন পরে, ৭ এপ্রিল ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা দান করে তারা।
২০২৩ সালের অক্টোবরে আয়কর বিভাগ ফের ফিউচার গেমিংয়ে অভিযান চালায় এবং সেই একই মাসে ফিউচার গ্রুপ বন্ডে ৬৫ কোটি টাকা দান করে।
৩) কৃতজ্ঞতা: এই টাকার তথ্য থেকে একটি নির্দিষ্ট ছক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে কিছু সুবিধা পাওয়ার পরপরই কোম্পানিগুলি নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে সেই রাজানুগ্রহ পরিশোধ করেছে।
২০২১ সালের ৩ মার্চ বেদান্ত রাধিকাপুর পশ্চিমের ব্যক্তিগত কয়লা খনির মালিকানা পায়। তার পরের মাসে, এপ্রিলেই তারা নির্বাচনী বন্ডে ২৫ কোটি টাকা দান করেছে৷
২০২০ সালের অগাস্টে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রা ৪,৫০০ কোটি টাকার জোজিলা টানেল প্রকল্প পায়। তারপরেই অক্টোবর মাসে তারা নির্বাচনী বন্ডে ২০ কোটি টাকা দিয়েছে।
এই মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিকেসি বুলেট ট্রেন স্টেশনের চুক্তি পায় এবং সেই মাসেই বন্ডে ৫৬ কোটি টাকা অনুদান দেয়।
৪) শেল কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ তছরুপ: ইলেক্টোরাল বন্ড প্রকল্পের একটি বিশাল সমস্যা হচ্ছে, কোনও কোম্পানির তাদের লাভের অল্প শতাংশ দান করতে পারে এমন কোনও সীমা নেই। ফলে এই শেল কোম্পানিগুলি যথেচ্ছ কালো টাকা অনুদান দিয়েছে। এরকম বহু সন্দেহজনক অনুদানই এসেছে। যেমন, ৪১০ কোটি দান করেছে ক্যুইক সাপ্লাই চেইন লিমিটেড। এটি এমন একটি কোম্পানি যার সম্পূর্ণ শেয়ার মূলধনের পরিমাণটাই মাত্র ১৩০ কোটি টাকা। অথচ তারা অনুদান দিচ্ছে ৪১০ কোটি!
এসবিআই যে তথ্য দিয়েছে তাতে শুধুমাত্র ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে তথ্য আছে কিন্তু এসবিআই ২০১৮ সালের মার্চ মাসে বন্ডের প্রথম ধাপ বিক্রি করে। এই তথ্য থেকে নির্বাচনী বন্ডের ২,৫০০ কোটি টাকার কোনও হিসেব নেই। ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বন্ডগুলির তথ্য কোথায়? নির্বাচনী বন্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করতে থাকলে বিজেপির দুর্নীতির এমন আরও অনেক ঘটনাই স্পষ্ট হয়ে উঠবে। বিজেপি ঠিক কাকে কী কী পাইয়ে দিয়েছে, একটি রাজনৈতিক দল কীভাবে হাজার কোটি টাকার লেনদেন চালাচ্ছে দেশজুড়ে তা স্পষ্ট হবে এই তথ্য থেকেই।