এক বছরে দেশ জুড়ে হু হু করে বেড়েছে বিক্রি! হঠাৎ কেন এত রমরমা দু'চাকার গাড়ির?

Electric 2 Wheeler Sale: এই ইলেকট্রিক গাড়ি চার্জ দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত স্টেশনে বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদান করতে গিয়ে কি ফের দূষণ বাড়বে না?

সারা দেশে যত বায়ুদূষণ, তার ২৫ শতাংশই ঘটে যানবাহনের কারণে। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটিই রয়েছে ভারতে। যানবাহনের প্রতি নির্ভরশীলতা আর ব্যক্তিগত গাড়ির পরিমাণ ক্রমে বাড়ছে এরই মধ্যে। বিশেষ করে দু'চাকার গাড়ির বিক্রি হু হু করে বেড়েছে দেশ জুড়ে এবং তাও খুব অল্প সময়ের মধ্যেই। কেন এমন চাহিদা বেড়ে গেল দু' চাকার গাড়ির? আসলে এই দু' চাকার গাড়ি যে কোনও সাধারণ ডিজেল-পেট্রোল চালিত গাড়ি নয়। ভারত জুড়ে বাড়ছে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা। কাইনেটিক গ্রিন এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার সলিউশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুলজ্জা ফিরোদিয়া মোতওয়ানি জানাচ্ছেন, দেশব্যাপী ইভি ইকোসিস্টেম তৈরি হচ্ছে। জনসাধারণ কি তবে সচেতন হয়ে নেমে পড়েছে কার্বন কমিয়ে সবুজ পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে? এই ইলেকট্রিক গাড়ি চার্জ দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত স্টেশনে বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদান করতে গিয়ে কি ফের দূষণ বাড়বে না?

২০২১ সালের ১ নভেম্বর, গ্লাসগোতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন COP26-এ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছিলেন, ভারত ২০৭০ সালের মধ্যে বায়ুমণ্ডলে কোনওপ্রকার গ্রিনহাউস গ্যাস যোগ করবে না। ভারত এই শূন্য কার্বন নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে এক বৈদ্যুতিক কর্মযজ্ঞের আহ্বান জানায়। এখানে উল্লেখ্য, ভারত ২০২০ সালে আয়তনের দিক থেকে তৃতীয় বৃহত্তম কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনকারী দেশ ছিল, যদিও এর মাথাপিছু কার্বন নির্গমন জাতিসংঘের এমিশনস গ্যাপ রিপোর্ট (ইজিআর) অনুসারে বিশ্বের গড় মাথাপিছু কার্বন নির্গমনের থেকে কমই ছিল।

আরও পড়ুন- বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনে পৃথিবীকে বাঁচাবেন? জানেন, কীভাবে উপজাতি নিধন করে চলছে ব্যবসা?

এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য টেকসই গতিশীলতা কাম্য এবং এই টেকসই গতিশীলতার মধ্যেই সবচেয়ে নতুন এবং আকর্ষণীয় হচ্ছে বৈদ্যুতিক যানবাহন (EV)। চিরাচরিত জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত যানবাহনের উপর নির্ভরতা কমাতে ব্যাটারিচালিত ইভি বিশ্বব্যাপী পরিবেশ-বান্ধব, কম খরচের বাহন রূপে উঠে আসছে।

ওয়েল-টু-ট্যাঙ্ক এবং ট্যাঙ্ক-টু-হুইল-এই জ্বালানি দক্ষতার তুলনা করার সময় দেখা গেছে, EV-এর সামগ্রিক দক্ষতা ৭৭%, উল্টোদিকে ICE-এর দক্ষতা ১৩% মাত্র। সবুজ পরিবহনের লক্ষ্যে ভারত বৈদ্যুতিক দু'চাকার গাড়ি, তিন চাকার গাড়ি এবং বাসের প্রচারের দিকে জোর দিচ্ছে৷ এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভারতের জনগণের পরিবহনের ৮৫%-ই হচ্ছে এই ধরনের যানবাহন। ভারতের জনগণের মাত্র ১৫%-ই পরিবহনের মাধ্যম হিসাবে নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করে।

সোসাইটি অব ম্যানুফ্যাকচারার্স অব ইলেকট্রিক ভেহিকেলস (SMEV) জানাচ্ছে ভারতে ইভি বিক্রয় ২০২১ সালে তিনগুণ বেড়ে ১৪,৮০০ ইউনিটে পৌঁছেছে। ভারতের EV বিক্রয় ২০২১-২০২২ অর্থবর্ষে ৩৪০,০০০ ইউনিট থেকে তিনগুণ বেড়ে প্রায় ৮০০,৯০০-৯০০,০০০ ইউনিটে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ যেহেতু ভারতে দ্রুত ইভি জনপ্রিয় ও বিক্রিত হয়ে চলেছে তাই পাল্লা দিয়ে দু' চাকার গাড়ি, তিন চাকার গাড়ি এবং বাসের চাহিদা বাড়ছে। মধ্যবিত্ত নাগরিকরা পরিবহনের মাধ্যম হিসাবে বাস বা তিন চাকার যানের উপরই নির্ভর করে। আর রোজের অফিস, কলেজ, দৈনন্দিন যাতায়াতের মাধ্যম হিসাবে দু' চাকার যান ব্যবহার করে বিপুল সংখ্যক মানুষ।

“ভারত বিশ্বের বৃহত্তম তিন চাকার যানের বাজার এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম দু’ চাকার যানের বাজার। এবং, আরও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এগুলি সমস্তই হালকা গাড়ি এবং আন্তঃনগর পণ্য, যার অর্থ এগুলি শহরের মধ্যে চলাচল করে,” জানান সুলজ্জা ফিরোদিয়া মোতওয়ানি।

আরও পড়ুন- ন্যানোর থেকেও আকারে ছোট, স্বপ্নপূরণ করতে বাজারে আসছে নয়া ইলেকট্রিক গাড়ি, দেখতে কেমন?

শুরুর দিকে তিন চাকার যান হিসেবে, কাইনেটিক গ্রিন ২০১৬ সালে ইলেকট্রিক ভেহিকেলের বাজারে আসে। ফিরোদিয়া গ্রুপ কোম্পানি ২০২১ সালে দু'টি ই-স্কুটার জিং এবং জুম নিয়ে দু’ চাকার-যানের বাজারে এনেছে। ২০২২ সালে, কাইনেটিকও জিং হাই-স্পিড স্কুটার বাজারে এনে বৈদ্যুতিক দু’চাকার গাড়ির বাজার ধরতে চাইছে।

মোতওয়ানির কথায়, কোম্পানি বৈদ্যুতিক স্কুটার, বৈদ্যুতিক তিন চাকার গাড়ি (কার্গো এবং প্যাসেঞ্জার) এবং বৈদ্যুতিক গল্ফ-কার্ট এবং বগিগুলির মতো বিবিধ ব্যাটারি-চালিত যানবাহন উত্পাদন করছে তাঁদের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা দ্রুত বাড়ছে। ই-লুনা উৎপাদন শুরু হয়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন পণ্য, যা সাশ্রয়ী, সুবিধার ক্ষেত্র বিবিধ এবং মূল লুনা ব্র্যান্ডের গুরুত্ব ও মর্যাদা দুই বাড়বে এই ই-লুনার হাত ধরে। ২০৩০-এর মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার ৫০% এরও বেশি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। পরবর্তী আরও প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছরে ৭০% এরও বেশি হবে এর ব্যবহার।

গত অর্থবর্ষের তুলনায় ২০২২-২৩ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি আড়াই গুণ বেড়ে ৮,৪৬,৯৭৬ ইউনিটে দাঁড়ানোই এর সাপেক্ষে প্রমাণ। ২০২১-২২ সালে বৈদ্যুতিক দু’ চাকার গাড়ির (E2W) মোট বিক্রয় ছিল ৩,২৭,৯০০ ইউনিট। ইলেকট্রিক টু-হুইলার বিভাগে ২০২৩ সালে ৭,২৬,৯৭৬ উচ্চ-গতির E2W বিক্রি হয়েছে৷ ২০২১-২২ সালে, কম গতির ই-স্কুটারের বিক্রয় ছিল ৭৫,৪৫৭ ইউনিট, বেশি গতির ই-স্কুটারগুলির বিক্রি ছিল ২,৫২,৪৪৩ ইউনিট।

More Articles