সম্পর্কের জলাজঙ্গলে উত্তরণের নিবিড় আলো ‘দোসর’

Rituparno Ghosh: কৌশিকের ঠোঁটে, ওর অঙ্গ-সহযোগে, কবিতাটির শব্দে শব্দে কাবেরী এই প্রথম মৃত মিতাকে দেখতে পাচ্ছে। তার স্বামীকে একজন অন্য নারী যেভাবে ভালোবাসে, সেই ভালোবাসার দিঘিতে আস্তে আস্তে নামতে শুরু করছে সে।

প্রথম যখন কাউকে ভালো লাগে, সেই ভালো লাগার ভেতরেই খুলে যায় একটি দরজা। আর আমরাও কখন অজান্তেই সেই দরজা দিয়ে নতুন এক জীবনের ভেতর ঢুকে পড়তে থাকি। আস্তে আস্তে সেই মানুষটি নিজের ব্যক্তিগত জানলাগুলি মেলতে থাকে। কখনও কখনও আমরাও তাকে সাহায্য করি। তার অন্তরমহল জাগতে থাকে চোখের সামনে।

জীবন নামক এই জাদুর মধ্যে আমরা যারা নতমস্তক হেঁটে চলেছি তারা কি জানে সেই ভালো লাগার শেষ কোথায়? আমরা কাকে খুঁজছি? কেন খুঁজছি? কী খুঁজছি?

এই এক মায়াপ্রশ্ন! এর উত্তর সঠিকভাবে জানা না থাকলেও, এটুকু বলতেই পারি, সেই প্রথম ভালো লাগার উৎস-মনকে দেখার ইচ্ছেই রচনা করে দেয় আমাদের উন্মাদভ্রমণ!

কোনও কোনও কবিতাও তো এমনই। সিনেমাও। তারা ধীরে ধীরে উন্মোচন করে নিজেকে। একবারে ধরা দেয় না। আর আমাদের মনও নেশা-প্রেমিকের মতো লেগে থাকে তার সঙ্গে। সেই অধরা শিল্পের পায়ে-পায়ে কুকুরের মতো ঘোরে, যদি একদিন আরও কিছু বিস্ময় ঝরে পড়ে এই মাথার ভেতর— সেই একক উচ্চাশায়!

আরও পড়ুন: ঋতুপর্ণের ‘আবহমান’: শিল্পীর মুহূর্ত, শিল্পের সত্য

উচ্চাশার সদর্থক এক স্বভাব এই যে, সে অন্ধকার কুয়োর ভেতর বসে থেকেও আকাশের দিক তাকাতে পারে। যেমন, 'দোসর'। ছবিটি আমি বহুবার দেখেছি। ক-দিন আগে আবার দেখলাম। উচ্চাশা যে কত অসহায়ভাবে বন্ধুত্বের সমার্থক-ইচ্ছায় প্রতিপন্ন হতে পারে, সে-কথাই এবার আমাকে জানাল 'দোসর'।

কেন এমন বলছি? যাঁরা 'দোসর' দেখেছেন তাঁরা জানেন, ছবিতে নিজের স্ত্রী কাবেরীকে (অভিনয় করেছিলেন কঙ্কনা সেনশর্মা) লুকিয়ে অফিস ট্যুরের নাম করে অন্য একজন নারীকে নিয়ে বেড়াতে যায় কাবেরীর স্বামী কৌশিক (অভিনয় করেছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়)। সেখানে তাদের অ্যাকসিডেন্ট হয় এবং ঘটনাস্থলে মারা যায় কৌশিকের সঙ্গে-থাকা মেয়েটি। গুরুতরভাবে আহত হয় কৌশিক-ও।

প্রকৃতপক্ষে, এরপরই শুরু হয় ছবিটি। কাবেরী জেনে যায় তার স্বামীর গোপন সম্পর্কের কথা। যাকে জীবদ্দশায় সে দ্যাখেনি, মৃত্যুর পর, তাকেই এখন সারাক্ষণ মনে মনে সহ্য করতে হয় কাবেরীকে। সহ্য করতে কেন হয়? কারণ, কৌশিককে দেখলেই কাবেরীর মনে পড়ে যায় তার প্রতারণার কথা। এতদিন ধরে তাকে আড়ালে রেখে চলতে থাকা গোপন সম্পর্কের কথা, এবং ওই মৃতা মেয়েটির কথাও!

এখানেই আমি 'উচ্চাশা' শব্দটিকে এনে দাঁড় করাব এবার। আমি যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে রয়েছি, সেই একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, বা কোনও না কোনওভাবে আমার অবস্থানকে সে বুঝবে— এমন মনের সহায় চায় মন। এও এক ধরনের উচ্চাশা বৈকি!

কিন্তু এই একাকী উচ্চাশার মধ্যে বাস করছে 'দোসর' কথাটির মহিমা! আমাদের জীবনে কে কখন কোন মুহূর্তে দোসর হিসেবে দেখা দেয়, তা কি কেউ বলতে পারে? পারে না। ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁর এই ছবিটিতে 'দোসর' শব্দটিকে নানাভাবে দেখতে চেয়েছিলেন। তাঁর সেই বিচিত্র দেখার মধ্যে থেকে যেটুকু ধরতে পারি, বুঝতে পারি, এখানে বলার চেষ্টা করছি।

ছবিতে আমরা দেখতে পাই, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানার পর থেকে কাবেরী চরিত্রটির মধ্যে এক ধরনের দমবন্ধকর আবহাওয়া তৈরি করে নিয়েছিলেন কঙ্কনা সেনশর্মা। স্বামীর দায়িত্ব থেকে অবশ্য সে এরপরও পিছু-পা হয়নি। কিন্তু সে যে প্রতারিত, সে-কথাও তার আচরণের কাঠিন্য ও দৃঢ়তার ভিতরে দেখতে পাওয়া যায় অবিরত। একটি দৃশ্যে, হাসপাতাল থেকে বিধবা মায়ের বাড়ি গিয়েছে কাবেরী। সেখানে মা-মেয়ের কথোপকথনের স্বল্প অংশ এখানে তুলে দিচ্ছি :

কাবেরীর মা।। আজ এখানে থেকে যা না!
কাবেরী।। না, আমি বাড়ি যাই। গোপালের মা একা থাকবে।
কাবেরীর মা।। তো, একটা ফোন করে জানিয়ে দে... বাড়ি গিয়ে তো সেই একাই!
কাবেরী।। থাক, অভ্যেস হওয়াটা ভালো।
কাবেরীর মা।। মানে?
কাবেরী।। তুমিও তো একাই আছো... প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হবে, তারপর অভ্যস্ত হয়ে যাবে।

এই প্রথম মায়ের একা থাকার সঙ্গে নিজের একাকিত্বকে যেন মিলিয়ে দেখতে চাইল কাবেরী চরিত্রটি। প্রশ্ন উঠতে পারে, দু'জনের একাকিত্ব কি এক? বাহ্যিক ভাবে এক নয়। কাবেরীর বাবা মারা গিয়েছেন, তাই তার মা একা। আর কৌশিকের অন্য প্রেম-সম্পর্কের কথা জানার পর থেকে তাদের দাম্পত্যও মৃতপ্রায়। সেই সমীকরণে স্বামীকে সামনে রেখেই প্রত্যেকদিন বৈধব্যের তাপ ভোগ করছে কাবেরী। ফলে এখানে মা-মেয়ের সম্পর্কের বাইরে গিয়ে, যার একদিন বিবাহজীবন ছিল, এখন নেই— এমন একজন নারীর একা থাকার সঙ্গে অভ্যস্ত হতে চাইছে সে। নিজের মা-কে নয়, মায়ের নিয়তিগত একাকী অবস্থানের সঙ্গে সংযোগ অনুভব করছে। এখানে 'দোসর' শব্দটি জ্বলে উঠতে চায়।

ছবিটি কিছুদূর এগোনোর পর, আবারও কাবেরী ও কাবেরীর মায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথনের সাক্ষী হই আমরা:

কাবেরীর মা। তুই কি সারাদিন ওই একই কথা নিয়ে ভাবছিস? মনে কর একটা অ্যাকসিডেন্ট হওয়ার ছিল, হয়ে গেছে।
কাবেরী।। তুমি কোনটাকে অ্যাকসিডেন্ট বলছ মা?
কাবেরীর মা। তুই জানিস না?
কাবেরী।। তুমি জানো না। তাহলে তুমি ওটাকে অ্যাকসিডেন্ট বলতে না। একটা মানুষ দিনের পর দিন, আগে থেকে গুছিয়ে মিথ্যে বলে... ইট্‌স হার্ডলি আ অ্যাকসিডেন্ট!
কাবেরীর মা।। মানুষমাত্রই তো ভুল হয়। আবার মানুষই সেটাকে শুধরোয়। শুধরোনোর সুযোগটা তো দিতে হবে!
কাবেরী।। এটা ভুল নয় মা, এটা অন্যায়।

এখানেই, নীরবে এক সূক্ষ্ম কারুকর্মের পরিচয় রেখে গেছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। এই সংলাপ অংশের আগে সংলাপে কাবেরীর মায়ের একাকিত্বের মধ্যে নিজের 'দোসর' খুঁজে পাওয়ার কথাটি উল্লেখ করেছিলাম। এই সংলাপে পৌঁছে ঋতুপর্ণ বুঝিয়ে দিলেন, মায়ের বৈধব্য অবস্থানের একাকিত্বকে নিজের একাকিত্বের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়ার বন্ধুত্ব-চেষ্টা কাবেরীর একার। 'দোসর' শব্দটি এখানে দু-জনের একাকী অবস্থানের পরিচায়ক হলেও, দু'জনের মনোগত অবস্থান কিন্তু এক নয়। যেখানে কাবেরীর মা তাকে এক প্রকার মেনে নিতে বলছে কৌশিকের প্রতারণাকে, সেখানে তার শাশুড়ি-মা, হাসপাতালে অসুস্থ ছেলেকে দেখে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় বলছে, 'তোমার যা ইচ্ছে করে, যে ডিসিশন নিতে ইচ্ছে করে, তা-ই নেবে। কারও কথা শুনবে না। আমি অন্যদের কথা বলতে পারছি না। তুমি যে ডিসিশন-ই নাও, আমার কিন্তু ফুল সাপোর্ট থাকবে।' আমরা অবাক হয়ে দেখি, যা কাবেরীর মা অনুভব করতে পারেনি, সেই প্রতারণার অনুভব কৌশিকের মা সহজেই বুঝতে পেরেছে। এবং সর্বতভাবে কাবেরীকে সমর্থন-ও করেছে। তাই তখন, ওই সংলাপ-মুহূর্তে, কাবেরীর শাশুড়ি আমাদের সামনে ওর দোসর হিসেবে দেখা দেন।

কাবেরীর মা অথবা তার শাশুড়ি— এদের কারওর মধ্যেই প্রতারণার দাহ হয়তো জেগে নেই। কাবেরীর প্রতি সমবেদনা, সহানুভূতি আছে। কাবেরীর সঙ্গে রয়েছে একাকী অনুভবের ঐক্য। কিন্তু আমরা যে পীড়া সহ্য করে চলি সেই একই পীড়ন-অভিজ্ঞতা যার আছে, তার সঙ্গে অজান্তেই আত্মীয়তা বোধ করতে শুরু করি একদিন।

'দোসর' ছবিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ববি (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়য়) ও বৃন্দা (পল্লবী চট্টোপাধ্যায়) একে-অপরের প্রতি প্রেমে আবদ্ধ। বৃন্দা বিবাহিত। স্বামীর নাম সুবীর। বৃন্দা ও ববি দু'জনেই কাবেরীর বন্ধু। ওদের সম্পর্কের কথা কাবেরীর অজানা নয়। সেই সম্পর্কের প্রতি সমর্থন-ও রয়েছে ওর। কিন্তু কৌশিকের ঘটনাটা ঘটার পর ববি ও বৃন্দার পাশাপাশি সুবীরকেও যেন অনুভব করতে শুরু করে কাবেরী। ছবিতে, তাদের তিনজনের কথা-মুহূর্তের অংশ এখানে রইল:

কাবেরী।। আচ্ছা, তোদের একবার মনে হচ্ছে না তোরা আফটারঅল একটা লোককে ঠকাচ্ছিস? বৃন্দা ঠকাচ্ছে। তুই ঠকাচ্ছিস।
ববি।। এটা কিন্তু একদম ফাটিয়ে দিয়েছিস গুরু, কোনও কথা হবে না। অ্যাদ্দিন বাদে আজ সন্ধেবেলা তোর আচমকা মনে হল এ-কথাটা!
কাবেরী।। ধর তাই।
ববি।। এই তুই কি সিরিয়াসলি বলছিস বাবু?
কাবেরী।। আমি সিরিয়াসলি বলছি ববি। দ্যাখ, তোরা একসঙ্গে থাকতে চাইছিস সেটা ভালো কথা। সেটা তো সুবীরদা (বৃন্দার স্বামী) জানতে পারছে না। ইটস্‌ নট ফেয়ার।
ববি।। জানলে পরে কি হবে? কষ্টটা কমবে?
কাবেরী।। বাড়তেও পারে। কিন্তু রোজ রোজ বউয়ের সঙ্গে চোর-পুলিশ খেলার অপমানটা তো থাকবে না।

এই সংলাপ থেকে কাবেরীর বলা দুটি বাক্যকে আলাদাভাবে উল্লেখ করতে চাইব। কাবেরী বলছে, 'তোদের একবার মনে হচ্ছে না তোরা আফটারঅল একটা লোককে ঠকাচ্ছিস? বৃন্দা ঠকাচ্ছে। তুই ঠকাচ্ছিস।' ববি ও বৃন্দার সম্পর্কের কথা জানার পর সুবীরের যদি কষ্ট বাড়ে বাড়ুক, না-জেনে ঠকতে থাকার অপমানটা তার থাকবে না। এই দু'টি বাক্যই সুবীর চরিত্রটির হয়ে বললেও, এ তো কাবেরীর নিজের জীবনের কথা। কৌশিক-ও তো তাকে ঠিক এভাবেই আড়াল করেছিল সব। 'দোসর'-এ সুবীর চরিত্রটির সঙ্গে কাবেরীর কোনও কথোপকথন নেই। কিন্তু দূর থেকেও সুবীরকে অনুভব করতে পারে কাবেরী। তার যন্ত্রণা ও অপমানকে নিজের মনে হয়। এখানে, আরেকবার দর্শকের অদেখা অচেনা এক 'দোসর'-কে উপস্থিত করেন ঋতুপর্ণ, যা সত্যিই অভাবনীয়!

কৌশিকের পরকীয়া সম্পর্ক, মিতা। অ্যাকসিডেন্টে মিতা মারা যায়। কাবেরী যেমন প্রতারিত হয়, আরও একজন সেই একই প্রতারণাভাগ্যের দায়ভার বহন করে চলে— সে হল, মিতার স্বামী। ছবিতে, পরিস্থিতিগতভাবে সত্যিকারের দোসর এই দু'টি চরিত্র, তা আমরা সহজেই বুঝতে পারি। পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া, মিতার জন্য কৌশিকের কেনা গলার হার যখন কাবেরী মিতার স্বামীকে ফেরত দেয়, তখন যে আঘাত সে মিতাকে করতে পারেনি, তা যেন তার স্বামীকে করে বসে। ঠিক যেন প্রত্যুত্তরে, একই ভাবে পুলিশের কাছ প্রাপ্ত, কৌশিকের জিনিস ভেবে কাবেরীকে কৌশিকের কনডোমের প্যাকেটটা দিয়ে দেয় মিতার স্বামী।

এখানে একটি বিষয় মনে রাখা উচিত, যে দৃশ্যে এই ঘটনাটি ঘটছে, সেখানেই প্রথম দেখা হচ্ছে চরিত্র দু'টির। নিজের স্ত্রী-র জন্য অন্য পুরুষের কেনা গয়না ও ভিন্ন এক নারীর সঙ্গে সংযুক্ত নিজের স্বামীর কনডোমের প্যাকেট সেই অন্য নারীর স্বামীর কাছ থেকে হাত পেতে নেওয়া— এই আদান-প্রদানের মধ্যে এক দমবন্ধ ভায়োলেন্স বাস করছে। কিন্তু সেটা কতক্ষণ?

ছবিতে কিছু পরেই, আমরা বুঝতে দুটি চরিত্রই একে-অপরের প্রতি বন্ধুত্ব অনুভব করছে। মিতার স্বামী কাবেরীকে বলছে, 'একটা মানুষ বেঁচে থাকলে তার সঙ্গে ঝগড়া করা যায়, রাগ করা যায়, কৈফিয়ত চাওয়া যায়। মরা মানুষের সঙ্গে কী ঝগড়া করবেন বলুন?'
কাবেরীর উত্তর, 'আর একটা মানুষ যদি বেঁচে থাকে? আর চব্বিশ ঘণ্টা অন্য আরেকটা মানুষের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকে? তাহলে?' দু'জনের জিজ্ঞাসাই সংগত, অবস্থানেও সম্পূর্ণ এক। সম্পূর্ণ ছবিতে, নানাভাবে নানা মুহূর্তে নানা সম্পর্কের ফাঁকফোকরের মধ্যে দিয়ে 'দোসর' কথাটি নিজের মাহাত্ম্য বুঝিয়ে দিলেও, প্রত্যক্ষভাবে এবং প্রতি মুহূর্তে একমাত্র মিতার স্বামীকে কাবেরীর দোসর হিসেবে দেখতে পাই আমরা!

এই এত এত 'দোসর'-এর মধ্যে দিয়ে ছবিটি এসে পৌঁছয় তার সমাপ্তির কাছে। তার আগে বলে নেওয়া প্রয়োজন, কৌশিকের অ্যাকসিডেন্টের পর, ওর মোবাইলে মিতার পাঠানো একটি কবিতা খুঁজে পায় কাবেরী। কবিতাটি এমন—

তোমার ঠোঁট আমার ঠোঁট ছুঁলো
যদিও এ প্রথমবার নয়
চুম্বন তো আগেও বহুবার
এবার ঠোঁটে মিলেছে আশ্রয়

কবিতাটি সহজেই বলে দেয় কৌশিক আর মিতার নিবিড় সম্পর্কের কথা। কিন্তু ছবিটির একেবারে শেষে কৌশিকের কাছে গিয়ে যখন কাবেরী শোয়, আমরা এতক্ষণে প্রথম কাঁদতে দেখি তাকে, ভাঙতে দেখি, কৌশিককে ক্ষমা করতে দেখি, তখন ওই কাছাকাছি অবস্থায় কৌশিক জিজ্ঞেস করে, 'ও (মিতা) যদি মারা না গিয়ে বেঁচে থাকত? এত সহজে ক্ষমা করতে আমায়?' কাবেরী কোনও উত্তরশব্দ না বলে, উপরে উল্লেখিত কবিতাটি বলতে শুরু করে। খাট থেকে উঠে বসে, বলতেই থাকে কবিতাটি।

আরও পড়ুন: দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে নিয়ে যায় যে ছবির মুহূর্তরা

তখন আমাদের মনে হয়, কৌশিকের ঠোঁটে, ওর অঙ্গ-সহযোগে, কবিতাটির শব্দে শব্দে কাবেরী এই প্রথম মৃত মিতাকে দেখতে পাচ্ছে। তার স্বামীকে একজন অন্য নারী যেভাবে ভালোবাসে, সেই ভালোবাসার দিঘিতে আস্তে আস্তে নামতে শুরু করছে সে। কাবেরী কৌশিকের কাছে ফিরে আসছে, মিতাকে নিয়েই।

তাই যখন কাবেরী শয্যা থেকে সামান্য উঠে বলতে শুরু করে 'তোমার ঠোঁট আমার ঠোঁট ছুঁলো', তখন মনে হয়, কাবেরীর ওই মায়াময় আলিঙ্গন যেন তাঁর স্বামীর মৃত প্রেমিকা, মিতার প্রতিই! কারণ, কৌশিক একা তার নয়, মিতারও। কৌশিকের প্রতি তার চুম্বন, মিতারও। 'এবার ঠোঁটে মিলেছে আশ্রয়'— এখানেই 'আশ্রয়' ও 'দোসর' একাকার হয়ে যায়! সিনেমার এই নাম-শব্দটিকে চেনা সামাজিকতার বাইরে নিয়ে গিয়ে আকাশে মুক্তি দিয়ে দেন ঋতুপর্ণ!

More Articles