পুজোয় কোথায় বেড়াতে যাবেন, তাই নিয়ে ধন্ধে? কালজয়ী সিনেমাতেই রয়েছে সমাধান

বাঙালি যতটা ভ্রমণপিপাসু, ততটা সিনেমারসিকও বটে। তাকে কি আর বেড়ানোর জায়গা খুঁজে বের করতে বেগ পেতে হবে?

'বাজল ছুটির ঘণ্টা'... সামনেই পুজো, মেরেকেটে হাতে ৫০-৫২ দিন বাকি! এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে নানা প্ল্যান। যাঁরা সারাবছর নিজেদের কর্মজীবনে বা আরও অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাঁদের জন্য পুজোর ছুটি হল সুবর্ণসুযোগ। শহুরে জীবন থেকে কিছুদিনের জন্য পেতে পারেন মুক্তি। কিন্তু পুজোর ছুটিতে কোথায় যাবেন, এই প্রশ্ন তো বারবার তাড়া করেই প্ল্যান করার সময়। কিন্তু বাঙালি যতটা ভ্রমণপিপাসু, ততটা সিনেমারসিকও বটে। তাকে কি আর বেড়ানোর জায়গা খুঁজে বের করতে বেগ পেতে হবে? বাংলা সিনেমা বহুবার এমন এমন জায়গার সন্ধান দিয়েছে, যা তার আগে ততটা আবিষ্কৃত ছিল না। একই সঙ্গে বলিউডের বিভিন্ন ছবি সন্ধান দিয়েছে বিদেশের নানা গন্তব্যের।

বছরের পর বছর বহু সিনেমা দর্শকদের মনোরঞ্জন করে আসছে। আউটডোর শ্যুটিংয়ের দৃশ্য মন ভরিয়ে দেয় দর্শকদের। অনেকের মনে আবার বেড়ানোর ইচ্ছেও প্রবল হয়ে ওঠে সিনেমার দৃশ্য দেখে। পাহাড়, ঝরনা, বরফ থেকে দেশ-বিদেশের নানা জায়গার হদিশ পাওয়া যায়। বলিউড-টলিউড মিলিয়ে এরকম বহু এভারগ্রিন সিনেমা রয়েছে, যেগুলো ভ্রমণপিয়াসী মানুষদের বেড়ানোর বাসনাকে প্রবল করে তোলে। এরকমই কিছু সিনেমার তালিকা রইল, যা হতে পারে আপনার ট্যুর গাইড।

'সোনার কেল্লা': রাজস্থান

Sonar Kella

সেই বিখ্যাত ট্রেন ও উটের দৃশ্য

প্রথমেই আসা যাক, বাংলা ট্রাভেল সিনেমার প্রসঙ্গে। অবশ্যই তালিকার একেবারে প্রথমেই থাকবে সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’-র নাম। পর্দায় ফেলুদাকে দেখার প্রশ্ন উঠলে অধিকাংশের যা প্রথম পছন্দ। জনপ্রিয়তার কারণ হিসেবে রহস্যের ঠাসবুনট, ফেলুদার মগজাস্ত্র বা লালমোহনবাবুর বেমক্কা রসিকতা যতটা কাজ করেছে, আবার পর্দায় রাজস্থান ভ্রমণের আনন্দ তার চেয়ে কম তো কাজ করেনি। উটের পিঠে ফেলুদার ‘চলিয়ে জি রামদেওরা’ যেন বেশি করে হয়ে উঠেছে, প্রতিটা বাঙালিরই সংলাপ। তাই বাঙালির রাজস্থান বেড়ানোর ইচ্ছেকে যে 'সোনার কেল্লা' প্রশ্রয় দেয়, সেকথা বলাই যায়। সর্বোপরি, জয়সালমির তার আগে মোটেও ট্যুরিস্ট স্পট ছিল না। আর জয়সালমিরের কেল্লাকে 'সোনার কেল্লা' ডাকনামটিও সত্যজিতেরই দেওয়া। তাই আজও জয়সালমিরে রয়েছে সত্যজিৎ রায়ের মূর্তি, কেল্লার মধ্যে দর্শনীয় হয়ে উঠেছে মুকুলের কাল্পনিক বাড়ি‌।

আরও পড়ুন: আজও রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বহন করে কুয়াশামাখা এই পাহাড়ি বাংলো

'নির্জন সৈকতে’: পুরী
সমরেশ বসুর কাহিনি অবলম্বনে তৈরি তপন সিংহ-র 'নির্জন সৈকতে'। এই সিনেমার কেন্দ্রে পাঁচ নারী এবং এক পুরুষ। গন্তব্য পুরী। সমুদ্রের প্রতি উচ্ছ্বাস, ভালবাসা যাঁদের আছে, তাঁদের এই সিনেমা আরও বেশি সমুদ্রের দিকে টানে। তবে এখনকার ভিড়ঠাসা পুরী নয়, গরুর গাড়ি-চলা পুরীকে দেখানো হয়েছে। যদিও সমুদ্র তার একই রূপ নিয়ে বিরাজমান, তাই এই সিনেমা যে সমুদ্রদর্শনের লোভ জাগায়, সেকথা বলাই যায়।

Movie Poster Nirjan Saikate

'নির্জন সৈকতে' ছবির পোস্টার

'অরণ্যের দিনরাত্রি': পালামৌ-এর জঙ্গল

Aranyer Dinratri

ছবির একটি দৃশ্যে (বাঁদিক থেকে) সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শমিত ভঞ্জ, রবি ঘোষ, শর্মিলা ঠাকুর, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় ও কাবেরী বসু

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'অরণ্যের দিনরাত্রি' অবলম্বনে সত্যজিৎ রায়ের এই ছবির আসল চরিত্র যেন ভ্রমণ। অসীম, শেখর, হরি ও সঞ্জয়, চার যুবকের ভবঘুরেপনা, বোহেমিয়ান জীবন ও অন্য কিছু পর্যটকদের সঙ্গে তাদের জড়িয়ে পড়া নিয়ে গল্প। পালামৌ-এর জঙ্গলের বন্য, সৌন্দর্য, রোমাঞ্চ- এই ছবির অন্যতম সম্পদ। পদে পদে পশ্চিমের জঙ্গলের রুক্ষতা ও সজীবতা যেন জেগে থাকে সিনেমার ফ্রেমে।

‘চলো লেটস গো’: উত্তরবঙ্গ
উত্তরবঙ্গ, দার্জিলিং, কালিম্পং- অঞ্জন দত্তর ছবি মানেই পাহাড়ের হাতছানি। কিছুটা 'অরণ্যের দিনরাত্রি'-র সিক্যুয়েলের ধাঁচে বানানো এই ছবি গরুমারায় সফর শুরু করে দার্জিলিংয়ে শেষ করে। ডুয়ার্সের অরণ্য এবং পাহাড়ি হিলস্টেশনের চিরন্তন ডাক এই ছবির পরতে পরতে মিশে।

Chalo-lets-go

'চলো লেটস গো' ছবির পোস্টার

‘ছ-এ ছুটি’, ‘বাই বাই ব্যাংকক’, ‘খাদ’, ‘ক্রস কানেকশন’-এর মতো ছবিতেও বেড়ানোর জায়গাগুলোকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যা দেখে দর্শকদেরও বেড়ানোর প্রতি আগ্রহ আরও তীব্র হয়।

'দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে': সুইজারল্যান্ড
সিনেমাপ্রেমী মানুষের কাছে এই সিনেমা মাইলস্টোনের মতো। কাজল আর শাহরুখের হিট জুটি যেমন রোমান্সের একটা নতুন চ্যাপ্টার খুলে দিয়েছে ফ্যানেদের কাছে, তেমনই বরফের চাদরে মোড়া সুইজারল্যান্ডে তাঁদের সিনেমার দৃশ্য মন কেড়েছে বহু মানুষের। অনেকেই এই সিনেমা দেখার পর নিজেদের হানিমুন ডেস্টিনেশন হিসেবেও বেছে নিয়েছেন সুইজারল্যান্ডকে।

DDLJ

ছবির দৃশ্যে শাহরুখ খান ও কাজল

'কুইন': দুর্দান্ত সোলো ট্রিপ

Queen

ছবির একটি দৃশ্যে কঙ্গনা রানাওয়াত

একটি মেয়ের একা একা বিদেশ বেড়ানোর অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে এখানে। 'কুইন' সিনেমাজগতে ল্যান্ডমার্ক তা বলা যায় কি না, তা তর্কসাপেক্ষ, তবে যেসব মেয়ে একা একা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান, এই সিনেমা তাঁদের সম্মান জানিয়েছে। 'কুইন'-এর রানি যে প্যারিস আর আমস্টারডামে একা ঘুরেছেন! এই সিনেমা অনেক মেয়েকে উৎসাহিত করেছে সোলো ট্রিপে যাওয়ার জন্য।

বাংলা, হিন্দি মিলিয়ে বহু সিনেমা রয়েছে যেগুলো দেখার পরে দর্শকরা চেয়েছেন সেই জায়গাগুলোতে ঘুরতে যেতে। যেমন হিন্দি সিনেমা 'জব ইউ মেট' দেখার পরে মানালি, কোটার মতো জায়গাতে বেড়ানোর ঝোঁক বেড়েছে। আবার 'ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি' সিনেমা দেখে অনেকেই কাশ্মীরের গুলমার্গ, শ্রীনগরে বেড়াতে যান। এই সিনেমাতেই রাজস্থানের দুর্গগুলোকেও দেখানো হয়েছে, যা দেখে রাজস্থানেও বেড়াতে যেতে চেয়েছেন অনেকেই। আবার 'জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা' নিয়ে যায় সুদূর স্পেনের সৌন্দর্যের ভেতর। এইভাবেই সিনেমা এবং বেড়ানো মিলেমিশে যায় বারবার।

More Articles