২৫ বছর পর নতুন ভূমিকায়, ওড়িশায় ঝড় তুলতে পারবেন নবীন পট্টনায়েক?

Naveen Patnaik: ওড়িশায় পতন হয়েছে নবীন-সাম্রাজ্যের। আপাতত রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলনেতার পদে নবীন। বুধবার তেমনটাই জানিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।

সেই ২০০০ থেকে শুরু করে একটানা ২০২৪ সাল পর্যন্ত, প্রায় পঁচিশ বছর ওড়িশার মসনদের দায়িত্ব সুচারু ভাবে সামলেছেন তিনি। ২০২৪ সালে এসে বিজেপি হাওয়ার মুখে মুখ্যমন্ত্রীত্ব খোয়ালেন সেই নবীন পট্টনায়ক। ওড়িশায় পতন হল নবীন-সাম্রাজ্যের। আপাতত রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলনেতার পদে নবীন। বুধবার তেমনটাই জানিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।

ওড়িশার জোড়া ভোটে এবার চমকপ্রদ জয় এসেছে বিজেপির ঝুলিতে। মোট ২১টি আসনের ২০টিতে নিরঙ্কুশ জয়। নবীনের বিজু জনতা দলের প্রাপ্তি শূন্য। কংগ্রেস জিতেছে অন্য আসনটি। এ তো গেল লোকসভার কথা। বিধানসভায় ৭৮টি আসনের মধ্যে ৭৮টি বিজেপির। বিজেডির হাতে রয়েছে ৫১টি আসন আর কংগ্রেসের জয় এসেছে ১৪টিতে। সেই হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সে রাজ্যে সরকার গড়েছে বিজেপি। প্রধান বিরোধিতার জায়গাটি রয়েছে বিজু জনতা দলের হাতেই। আর সেই প্রধান বিরোধী নেতার জায়গাটি যে নিজের কাছেই রাখতে চান ওড়িশার পোড় খাওয়া নেতা নবীন পট্টনায়ক।

আরও পড়ুন: হাতছাড়া হল বড় রেকর্ড! কেন ওড়িশার মসনদ হারালেন নবীন পট্টনায়ক?

এবার বিধানসভা ভোটে দু'টি আসনে লড়েছিলেন নবীন পট্টনায়ক। গঞ্জাম জেলার হিঞ্জলিতে টানা ষষ্ঠ বার জয়ী হয়েছেন তিনি। কিন্তু এ বারই প্রথম বলাঙ্গির জেলার কাঁটাবঞ্জিতে দাঁড়িয়ে বিজেপির লক্ষ্মণ বাগের কাছে হেরে গিয়েছেন তিনি। ওড়িশার নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিজেপি বেছে নিয়েছে কেওনঝড়ের চার বারের বিধায়ক তথা আদিবাসী নেতা মোহনচরণ মাঝিকে। উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন পার্বতী পরীদা এবং কণকবর্ধন সিংহদেও। যে লক্ষ্ণন বাগের কাছে নবীন হেরেছেন, বুধবার তার সঙ্গেই এদিন বিধানসভায় মুখোমুখি দেখা হয়ে যায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। প্রবীণ প্রাজ্ঞ নবীন করজোড়ে নমস্কার করেই সৌজন্যটুকু সারতে চেয়েছেন। কিন্তু বিজেপি নেতা লক্ষ্মণ বাগ পাল্টা নবীনকে জিজ্ঞেস করে বসেন, কেমন আছেন নবীন।

তবে সেই প্রশ্নের বিনিময়ে যে উত্তর পেলেন লক্ষ্মণ, তা বোধহয় আদৌ প্রত্যাশিত ছিল না তাঁর কাছে। কুশল বিনিময়ের বগলে স্মিত হেসে নবীন একটাই কথা বলেন, ‘‌ওহ, আপনি আমায় পরাজিত করেছেন।‌’‌ স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে তখন পিন পড়ার নিস্তব্ধতা। স্বাভাবিক ভাবেই নবীনের কাছ থেকে এ হেন উত্তর পেয়ে খানিকটা চমকেই যান লক্ষ্মণ। সম্বিত ফিরে পেয়ে পাল্টা দেন তিনিও। ভোটাররা গোটা নির্বাচনের প্রচার–পর্বে একেবারে নিশ্চুপ ছিলেন। কিন্তু তাঁরা আমাকেই ভোট দিয়েছেন।’‌ তবে যতই উত্তর দিন না কেন লক্ষ্মণ, নবীন ততক্ষণে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আসলে লক্ষ্মণ বাগ নয়, তিনি হেরেছেন বিজেপি হাওয়ার মুখে। নাহলে ৪৮ বছরের লক্ষ্মণ বাগের পক্ষে নবীনের মতো পোড় খাওয়া রাজনৈতিককে হারানো সম্ভব ছিল না এত সহজে।

আরও পড়ুন:মমতায় না, নবীনে হ্যাঁ! কেন এই দুমুখো নীতি বিজেপির?

সেই নবীন মুখ্যমন্ত্রীত্বের পদ ছেড়ে বিরোধী দলনেতার চেয়ারে? কেমন হতে চলেছে সেই নতুন সফর? মুখ্যমন্ত্রীত্বের মতোই একই রকম দক্ষতায় নতুন এই দায়িত্বও সামলাবেন নবীন? বুধবার নবীন নিজেই জানিয়েছেন,‘‘আমরা বিজেডির সব বিধায়ক মিলে একটি বৈঠক করেছি। আমি তাঁদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই। তাঁরা আমাকে পরিষদীয় দলনেতা নির্বাচিত করেছেন।’’ ওড়িশায় নয়া বিজেপি সরকারের পথে কতটা কাঁটা বিছোতে পারেন পোড় খাওয়া এই রাজনীতিক? সেটাই এখন দেখার।

More Articles