হিজবুল্লাহ খুনের বদলা নিতেই তেল আভিভে আক্রমণ হাউথির? কোন পথে এগোবে এখন ইজরায়েল?
Isreal Hezbullah War: বৃহস্পতিবার ফের নতুন করে বেইরুটে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। যে হামলায় হিজবুল্লাহের ড্রোন ইউনিটের প্রধানের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর।
একদিন আগেই লেবাননের বিরুদ্ধে পুরোদমে যুদ্ধের কথা বলেছিলেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এমনকী লেবাননে স্থল আক্রমণের কথাও শোনা গিয়েছিল ইজরায়েলের মুখে। বৃহস্পতিবার ফের নতুন করে বেইরুটে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। যে হামলায় হিজবুল্লাহের ড্রোন ইউনিটের প্রধানের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। আর তার পরেই ইজরায়েলকে নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইয়েমেনের জঙ্গিগোষ্ঠী হাউথি।
বৃহস্পতিবার রাতে হাউথি জঙ্গিদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইজরায়েলের দিকে ধেয়ে আসতেই তেল আভিভ জুড়ে সাইরেন বেজে ওঠে। যদিও হাউথি জঙ্গিদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে মাঝ আকাশেই গুলি করে নামিয়েছে ইজরায়েলি বাহিনী। জানা গিয়েছে, ইজরায়েলকে নিশানা করে সারফেস-টু-সারফেস ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োগ করেছে হাউথিরা। হাউথি আক্রমণ রুখতে এর আগেও একাধিক অ্যারো ডিফেন্স সিস্টেম মোতায়েন করেছে ইজরায়েলি সেনা। গত ফেব্রুয়ারিতেই ইলাতকে নিশানা করে এবং গত ১৪ সেপ্টেম্বর তেল আভিভকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল হাউথিরা। হামাসের সঙ্গে ইজরায়েল সংঘাতের মধ্যে একাধিক বার ইজরায়েলে হামলা চালিয়েছে এরা। এবার হিজবুল্লাহের সঙ্গে যুদ্ধ লাগতেই ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইয়েমেনের এই জঙ্গি সংগঠন।
আরও পড়ুন: আমেরিকার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ, লেবাননে স্থল আক্রমণের প্রস্তুতি নেতানিয়াহু-সেনার
প্রসঙ্গত, হামাস, হিজবুল্লাহ বা হাউথি, এই তিনটি জঙ্গিসংগঠনকেই সব রকম ভাবে সমর্থন করে আসছে ইরান। ফলে এই তিনটি জঙ্গিগোষ্ঠীর মধ্যেই যে একটি আভ্যন্তরীণ সম্পর্ক রয়েছে, তা আঁচ করাই যায়। টাইমস অব ইজরায়েলের খবর অনুযায়ী, সাম্প্রতিক ইজরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহের ড্রোন ইউনিটের প্রধান মহম্মদ সারুর মৃত্যুর ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবেই হাউথিরা এই হামলার পরিকল্পনা করে। ইয়েমেনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম সাবার চেয়ারম্যান নাসরুদ্দিন আমেরও সোশ্যাল মিডিয়ায় সে কথা জানিয়েছেন। জানা গিয়েছে, ইজরায়েলে হাউথি হামলার সাইরেন বেজে ওঠার কিছুক্ষণ আগেই সারুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
গত নভেম্বর মাস থেকেই হাউথিরা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে লোহিত সাগরে একাধিক হামলা চালিয়ে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য রুখতে সর্বৈব চেষ্টা তারা করে গিয়েছে। ইজরায়েলের গাজা আক্রমণের পর ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রদর্শন ইজরায়েলে একাধিক হামলা চালিয়েছিল তারা। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি নিয়ে হাউথিদের সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছে রাশিয়া। এদিকে, ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োগ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে ইউক্রেন।
বুধবার ইজরায়েল ও হিজবুল্লাহের মধ্যে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতি দাবি করে রাষ্ট্রসঙ্ঘে প্রস্তাব তুলেছিল আমেরিকা-সহ একাধিক দেশ। সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেয় ইজরায়েল। বরং পুরোদমে যুদ্ধ জারি রাখার কথা ঘোষণা করেছিলেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এদিকে এই যুদ্ধের আবহেই রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে জোরালো আবেদন জাবান প্যালেস্টাইনের প্রেসিডেন্ট মাহুমুদ আব্বাস। সেই বক্তৃতায় তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন,প্যালেস্টাইন তাঁরা কিছুতেই ছাড়বেন না। তাঁর কথায়, "প্যালেস্টাইন আমাদের মাতৃভূমি, আমাদের বাপদাদাদের দেশ। সেখানে কেউ যদি থাকে, তাহলে আমরাই থাকব। কাউকে যদি যেতে হয়, তাহলে যাবে দখলদারের দখলদার।" কার্যত তাঁর ইঙ্গিত যে ছিল ইজরায়েলের দিকেই, তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গাজার মানুষের সঙ্গে যা ঘটছে, তার জন্য সমগ্র বিশ্ব দায়ী।
আরও পড়ুন:ইরানপুষ্ট হাউথিদের সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ নিয়ে কথাবার্তা! তলে তলে কী ফন্দি আঁটছে রাশিয়া?
বৃহস্পতিবার লেবাননে ইজরায়েলের হামলায় শুধু হিজবুল কম্যান্ডার নয়, শিশু ও মহিলা-সহ অন্তত ৬০ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। গত কয়েকদিনের লাগাতার হামলায় অন্তত সাতশো পেরিয়েছে লেবাননে মৃতের সংখ্যা। তবে হামাসের মতোই হিজবুল্লাহকেও খতম করার লক্ষ্যে সর্বশক্তি লাগিয়ে দিয়েছে ইজরায়েল। আর এই যুদ্ধে মেঘের আড়াল থেকে যে সমস্ত রকম মদত জুগিয়ে চলেছে ইরান, তা স্পষ্ট হাউথিদের সাম্প্রতিক হামলা থেকেই। ক্রমশ কি আরও বড় যুদ্ধের দিকে মোড় নিতে চলেছে এই সংঘাত? কোথায় যেতে চলেছে এই ভয়াবহ যুদ্ধ? উদ্বেগ ছড়িয়েছে সব মহলে।