ইরানপুষ্ট হাউথিদের সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ নিয়ে কথাবার্তা! তলে তলে কী ফন্দি আঁটছে রাশিয়া?
Russia: তবে কি নতুন কোনও বিশ্বযুদ্ধ এখন সময়ের অপেক্ষা। যেভাবে তলায় তলায় জোট বাঁধছে বিভিন্ন শক্তি, তাতে সেই সম্ভাবনাই উস্কে উঠছে বলে মনে করা হচ্ছে।
একদিকে ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ, অন্যদিকে লেবাননের জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লাহ-ইজরায়েল সংঘাত ক্রমে ঘনিয়ে ওঠা। প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস হোক বা লেবাননের হিজবুল্লাহ, এই দুটি সংস্থাকে সমস্ত দিক থেকে সমর্থন জোগায় ইরান। এছাড়াও ইরানের মদতপুষ্টদের তালিকায় রয়েছে ইয়েমেনের জঙ্গি সংগঠন হাউথিরা। যারা গত এক বছর ধরে লাগাতার হামলা চালিয়ে গিয়েছে লোহিত সাগরে। কার্যত বিশ্ববাণিজ্যের রাস্তাকে ব্য়হত করতে চেষ্টার ত্রুটি করেনি তারা।
এবার এই হাউথিদের সঙ্গেই নাকি ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ নিয়ে মধ্যস্থতার পথে হাঁটছে রাশিয়া। হাউথিদের কাছে তাঁদের ভয়ঙ্কর শক্তিধর ক্ষেপণাস্ত্র তুলে দেওয়াই উদ্দেশ্য মস্কোর। ইজরায়েল যেভাবে লেবাননে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করছে ক্রেমলিন। তাদের তরফে লেবাননে বসবাসকারী রুশ নাগরিকদের তড়িঘড়ি লেবানন ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, ইউক্রেনে দীর্ঘদিন ধরে আগ্রাসন দেখাচ্ছে রাশিয়া। প্রায় বছর তিনেক ধরে চলছে তাদের যুদ্ধ। বাদবাকি সমস্ত দেশের প্রবল আপত্তি, বিধিনিষেধ, কোনও কিছুই সরিয়ে আনতে পারেনি রাশিয়াকে। দীর্ঘ এতগুলো বছরের যুদ্ধে ফুরোতে বসেছে রুশ সামরিক শক্তি। প্রয়োজনে অন্য দেশ থেকে সৈনিক জোগার করে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছে রাশিয়া।
সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনেস্কি জানিয়েছিলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের একেবারে শেষ লগ্নে এসে উপস্থিত হয়েছেন তাঁরা। এরই মধ্যে কেন হাউথি জঙ্গিদের সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ নিয়ে মধ্যস্থতা করতে চাইছে ক্রেমলিন? উঠেছে প্রশ্ন। পশ্চিমা এক গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, হাউথিদের সঙ্গে ইয়াখন্ট সুপারসনিক অ্যান্টি শিপ মিসাইল হস্তান্তরের আলোচনা চলছে রাশিয়ার। হিজবুল্লাহ বা হামাসের মতোই, হাউথিদের পিছনেও দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে ইরান। এই দ্বিপাক্ষিক মধ্যস্থতায় তেহরান রয়েছে বলেই খবর। যদিও খুব খোলাখুলি তাতে জড়াতে চাইছে না তারা।
আরও পড়ুন: মোসাদের দফতরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হিজবুল্লাহের, যে ভয়ঙ্কর পরিণতির আশঙ্কায় কাঁপছে বিশ্ব
এর আগেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, পশ্চিমের দেশগুলি যদি ইউক্রেনকে দূরপাল্লার অস্ত্র জুগিয়ে কোনও রকম সাহায্য করে, তাহলে রাশিয়াও পিছনে থাকবে না। তারাও অন্য দেশকে এই সব অস্ত্রে সাজিয়ে তুলবে। এই পরিস্থিতিতে জেলেনেস্কির যুদ্ধের শেষপর্ব নিয়ে কথা বলাকে বিশেষ প্রাসঙ্গিক বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। বেশ কিছু দিন ধরেই জেলেনেস্কি পশ্চিমের দেশগুলির কাছে আবেদন জানিয়ে আসছে, যাতে রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানার জন্য দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার নিয়ে বিধিনিষেধ শিথিল করার জন্য ইউক্রেনকে অনুমতি দেয়। এই বিষয়ে আমেরিকার সঙ্গে কথাবার্তারও সম্ভাবনা ছিল জেলেনেস্কির। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ বিষয়ে কী ভাবছেন, তা নিয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি। সামনেই আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ফলে ভবিষ্য়তের কথা মাথায় রেখে আমেরিকার দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের সঙ্গেও দেখা করার কথা ছিল জেলেনেস্কির।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কি তবে আগেভাগেই কোমর বাঁধছে রাশিয়া? সে কারণেই হাউথিদের সঙ্গে সাম্প্রতিক এই মধ্যস্থতার পথ? উঠেছে প্রশ্ন। এই ইয়াখন্ট ক্ষেপণাস্ত্র নাকি শব্দের চেয়েও দ্বিগুণ গতিতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উপর দিয়ে উড়তে পারে। শোনা যায়, এই ক্ষেপণাস্ত্রই একাধিক বার লোহিত সাগরের উপরে ব্যবহার করেছে হাউথিরা। চলতি বছরেই তেহরানে হাউথিদের সঙ্গে অন্তত দু'টি বৈঠক করেছে রাশিয়া অস্ত্র বিক্রির জন্য, জানা গিয়েছে তেমনটাই। যদিও সেই আলোচনার কথা অস্বীকার করেছে হাউথিদের মুখপাত্র আব্দেল সালেম।
আরও পড়ুন:লেবাননে ইজরায়েলের হামলায় মৃত অন্তত ৫৫০, ফিরে দেখা হিজবুল্লাহ-ইজরায়েল সংঘর্ষের ইতিহাস
একদিকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, অন্যদিকে ইজরায়েল-হামাস, তার উপর হিজবুল্লাহের সঙ্গে নতুন করে সংঘাতে জড়িয়েছে ইজরায়েল। লাগাতার লেবাননে হামলা, যার পাল্টা উত্তর ফিরিয়ে দিচ্ছে হিজবুল্লাহও। ইজরায়েলি হানায় একের পর এক হিজবুল্লাহ নেতার মৃত্যু ঘিরে ক্ষোভে ফেটেছে ইরান। এই পরিস্থিতিতে মাথায় রাখা জরুরি, এই তিন জঙ্গি সংগঠনেরই মূল চালিকাশক্তি কিন্তু ইরান। যাদের সঙ্গে ইজরায়েলের সম্পর্কও সাপে-নেউলের। সরাসরি ইরানের সঙ্গে লড়াইয়ে জড়াতে না চাইলেও ইজরায়েলের মিত্র দেশ আমেরিকা। এদিকে ইরান এবং হাউথিদের সঙ্গে তলে তলে জোট বাধার পরিকল্পনায় রয়েছে রাশিয়া। এদিকে ইউক্রেন রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে মুক্তি পেতে সব দিক থেকে সমর্থন চাইছে আমেরিকার। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতবস্থা ঘাঁটার যেমন সমূহ সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে, অন্যদিকে দু'টি স্পষ্ট অক্ষশক্তি তৈরি হওয়ার প্রবল আশঙ্কাও কিন্তু উস্কে উঠেছে। তার একদিকে রয়েছে রাশিয়া, ইরান এবং ইরানপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন ও তাদের সমর্থনে থাকা দেশগুলি। অন্যদিকে, ইজরায়েল, আমেরিকা তো বটেই, তার পাশাপাশি তাদের সমর্থনে থাকা ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো একাধিক দেশ। তবে কি নতুন কোনও বিশ্বযুদ্ধ এখন সময়ের অপেক্ষা। যেভাবে তলায় তলায় জোট বাঁধছে বিভিন্ন শক্তি, তাতে সেই সম্ভাবনাই উস্কে উঠছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কী অবস্থান নিতে চলেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ বা শান্তিকামী দেশগুলি? কোন দিকে যেতে চলেছে এই ভয়াবহ কূটনীতির খেলা? উদ্বেগ কিন্তু রয়েই যাচ্ছে।