অস্তিত্ব সঙ্কট থেকে এখন শীর্ষ স্তরে! HAL-এর সঙ্গে যা যা করেছিল মোদি সরকার
HAL and Modi Govt: হ্যাল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। রাফাল যুদ্ধবিমানের জন্য কাজ করার চুক্তি হয়েছিল হ্যাল-এর সঙ্গে।
হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হ্যাল) 'নবরত্ন' থেকে 'মহারত্ন' পদমর্যাদা পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় অর্থসচিব টি ভি সোমনাথন সোমবার হ্যাল-এর এই উন্নতি নিয়ে সভা করেন। হ্যাল-কে ভারতের শীর্ষ স্তরের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির (PSU) তালিকায় রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সংস্থাটির বাজার খ্যাতি এবং সংস্থাটির প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বাড়বে। সম্প্রতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক হ্যাল-এর Su-30MKI এবং 240AL-31FP বিমানের ইঞ্জিনের জন্য ২৬,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করার একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এরই মধ্যে সোমবার বিকেলে হ্যাল-এর শেয়ার ২.২৩% বেড়েও গিয়েছে। একটা সময় 'হ্যাল'-এর অস্তিত্ব সঙ্কটের কথা শোনা গিয়েছিল। চর্চা শুরু হয়েছিল সংস্থার কর্মীদের বেতন দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। সেখান থেকে হ্যাল-এর আজ এই উন্নতি। কিন্তু একটা সময় হ্যাল-এর সঙ্গে বৈমাত্রেয় আচরণ করেছিল এই মোদি সরকার। কেন এমন আচরণ?
হ্যাল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। রাফাল যুদ্ধবিমানের জন্য কাজ করার চুক্তি হয়েছিল হ্যাল-এর সঙ্গে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনিল আম্বানিকে সেই বরাত পাইয়ে দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি অভিযোগ তুলেছিলেন, মোদি সরকারের নির্দেশেই হ্যাল-কে বঞ্চিত করে অনিল আম্বানির সংস্থার সঙ্গে অফসেট চুক্তি হয়েছিল দাসো-র। তাঁর দাবি ছিল, হ্যাল-কে এই বরাত দিলে আয় হতো। কয়েক হাজার কোটি টাকার বরাত বিনা টেন্ডারে অনিল আম্বানির সংস্থাকে দিয়েছিল কেন্দ্র। রাহুলের অভিযোগ ছিল, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ৫২৬ কোটি টাকায় রাফাল কিনবে কিন্তু তা ১,৬০০ কোটি টাকায় কেনা হয়েছে। যুদ্ধবিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতির কোনও অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও কেন ফরাসি সংস্থাটি অনিলের সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করল, সেই প্রশ্ন উঠছিলই। 'আনন্দবাজার অনলাইন'-এ লেখা হয়েছে, প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, মোদিই নাকি দাবি তুলেছিলেন, রাফাল চুক্তির অংশীদারিত্ব অনিলের সংস্থাকে দিতে হবে।
আরও পড়ুন-বাংলাদেশের রদবদল কি আদানিদের বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সুখবর?
হ্যাল-এর প্রাক্তন প্রধান সুবর্ণ রাজু বলেছিলেন, হ্যাল রাফাল বানাতে পুরোপুরি সক্ষম ছিল কিন্তু নির্মলা সীতারমণ যুক্তি দিয়েছিলেন, হ্যাল নাকি এই যুদ্ধ বিমান গড়ে তুলতে অনেক সময় নিত। তার জন্যই চুক্তি মানা সম্ভব হয়নি। কংগ্রেসের রাফাল কমিটির প্রধান জয়পাল রেড্ডির দাবি ছিল, "রাফাল নিয়ে যা দুর্নীতি হয়েছে তাতে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে হ্যাল-এর। কর্মীরা রোজগার হারাচ্ছেন। ইউপিএ-র সময়ের চুক্তি মেনে চললে কর্মীদের রোজগার হত।"
ফরাসি সংবাদমাধ্যমের দাবি, দাসো ও ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণকারী সংস্থা এমবিডি-এ ভারত এবং ফ্রান্সের মধ্যে যে রাফাল চুক্তি হয়েছিল সেখানে দুর্নীতি-বিরোধী শর্ত বাদ দিতে চাপ দিয়েছিল। ওই সংবাদমাধ্যমেই লেখা হয়েছে, ফরাসি প্রতিনিধিরা জানিয়েছিলেন, ২০১৫ সালের ওই চুক্তিতে দুর্নীতি-বিরোধী শর্ত কার্যকর হবে না কিন্তু ভারতীয় প্রতিনিধিরা এই সিদ্ধান্তে রাজি হননি। শেষে ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকরের নেতৃত্বে এক বৈঠকে ওই শর্ত মেনে নেয় কেন্দ্র। কংগ্রেস তখন প্রশ্ন তুলেছিল, প্রথমে 'না' বলে পরে কেন রাজি হয়েছিল বিজেপি সরকার? কী আড়াল করার উদ্দেশ্য ছিল দিল্লির?
উল্লেখ্য, অনিল আম্বানির তিনটি সংস্থা রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স, রিলায়েন্স ক্যাপিটাল, রিলায়েন্স ইনফাস্ট্রাকচার এখন দেউলিয়ার পথে। রিলায়েন্স হোম ফাইনান্সকে ৬ মাসের জন্য শেয়ারবাজারে থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং জরিমানা করা হয়েছে ৬ লক্ষ টাকা। সেবি নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ৫ বছর সেবির তালিকাভুক্ত কোনও সংস্থার ডিরেক্টর বা পরিচালনা সংক্রান্ত পদে থাকতে পারবেন না অনিল। সেবি-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, অনিল ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম করেছেন। যখন রাফাল বিতর্কে কোণঠাসা ছিলেন অনিল, ঠিক সেই সময়ই মোদির রাজ্যে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ৬৪৮ কোটি টাকার বরাত পেয়েছিল তাঁর সংস্থা। অন্যদিকে, সেই সময় শীর্ষ আদালতেরও নির্দেশে ছিল, এরিকসনকে ১ মাসের মধ্যে ৪০০ কোটি টাকা দিতে হবে। আদালতের নির্দেশের পরও পাওনা মেটায়নি সংস্থা। ফের আদালত অবমাননার মামলা করেছিল এরিকসন। এই পরিস্থিতির মধ্যেই গুজরাতে বিমানবন্দর তৈরির বরাত পেয়েছিল রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার।
আরও পড়ুন- এক্সিট পোল ও শেয়ার বাজার: যে মহা কেলেঙ্কারি ঘটালেন মোদি-শাহ
হ্যাল-এর তৈরি 'অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার' ভারতীয় বায়ুসেনা ছাড়াও ইজরায়েল, নেপাল, মলদ্বীপ এবং মরিশাসের বিমাবাহিনী ব্যাবহার করে। 'দ্য প্রিন্ট' সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, চলতি মাসেই আফ্রিকার প্রতিরক্ষা দফতরের একটি দল ভারতে আসছে। তারা এই কেন্দ্রীয় সংস্থার দফতর এবং কারখানায় যাবেন। হ্যাল-এর থেকে ১৮টি তেজস মার্ক ১ যুদ্ধবিমান কিনতে পারে মিশর। চলতি বছরে মিশর হ্যাল-এর তৈরি হেলিকপ্টার ধ্রুব কিনতে পারে। মিশরের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ভারতে এলেই চুক্তি চূড়ান্ত হবে। দাবি করা হয়, তেজস যুদ্ধবিমানটি হালকা হলেও বিভিন্ন শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র বয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম এবং শত্রুপক্ষের নজর এড়িয়েও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে তা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে। প্রয়োজনে আকাশপথে যুদ্ধ করার মতোও ক্ষমতা রয়েছে এই যুদ্ধবিমানটির।
বর্তমানে ভারতে 'মহারত্ন' পদমর্যাদায় ১৩টি পাবলিক সেক্টর ফার্ম রয়েছে। সেগুলি হল - BHEL, BPCL, Coal India, GAIL, HPCL, Indian oil, NTPC, ONGC, Power Grid SAIL, Oil India, REC এবং PFC। এই পদমর্যাদা অর্জনের জন্য একটি কোম্পানির বার্ষিক গড় লাভ ৫,০০০ কোটির বেশি থাকতে হয়। প্রশ্ন উঠছে, কেন্দ্র কেন 'হ্যাল'-এর দিকে নতুন করে তাকিয়েছে? তারা কি বুঝতে পেরেছে 'হ্যাল' লাভ দিতে সক্ষম? নাকি ড্যামেজ কন্ট্রোল করতেই নেমেছে মোদি সরকার?