বিকাশের বদলে বিলকিসের আইনজীবীতেই ভরসা নির্যাতিতার পরিবারের, কে এই বৃন্দা গ্রোভার?
Brinda Grover: এত দিন আরজি করের নির্যাতিতার তরফে মামলাটি লড়ছিলেন সিপিএম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। এবার সেই মামলার দায়ভার কাঁধে তুলে নিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার।
আরজি কর মামলার কেটে গিয়েছে প্রায় ৫৫ দিন। এখনও সুবিচার পাননি আরজি করের নির্যাতিতা। সুপ্রিম কোর্টে মামলা চললেও এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও অগ্রগতি দেখা যায়নি। তিলোত্তমার হয়ে এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন জোরালো কোনও কণ্ঠ। তেমনটাই মনে করছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। সেই জায়গা থেকেই আইনজীবী বদলের সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁরা। আর বিকাশ নন, এবার নির্যাতিতার হয়ে সুপ্রিম কোর্টে গলা ফাটাবেন অন্য কেউ।
সুপ্রিম শুনানিতে বিরাট রদবদল। আরজি কর মামলায় শুনানির তারিখ পিছিয়েছে আগেই। এবার বদলে গেল আরও এক আইনজীবী। কদিন আগেই বদল হয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী। গীতা লুথরার বদলে এসেছেন ইন্দিরা জয়সিং। কার্যত জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে রাজ্যের আইনজীবীকে জোর টক্করও দিয়েছেন তিনি। এবার আইনজীবী বদল করলেন নির্যাতিতার পরিবার।
এত দিন আরজি করের নির্যাতিতার তরফে মামলাটি লড়ছিলেন সিপিএম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। এবার সেই মামলার দায়ভার কাঁধে তুলে নিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার। সবচেয়ে বড় কথা, এই মামলাটি লড়ার জন্য নির্যাতিতার পরিবারের কাছ থেকেও একটি টাকাও নেবেন না তিনি। গোটা মামলাটাই তিনি লড়বেন বিনা পারিশ্রমিকে।
আরও পড়ুন: চিকিৎসকদের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে ঝোড়ো ইনিংস! চেনেন আইনজীবী করুণা নন্দীকে?
তিলোত্তমার পরিবার সূত্রের খবর, এই সময়ে তাঁরা চাইছেন ওজনদার কোনও আইনজীবী তাঁদের মেয়ের সুবিচারের লড়াই লড়ুক। জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে জোর লড়াই লড়ছেন ইন্দিরা জয়সিং। অন্যদিকে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গলের তরফে মামলা লড়ছেন আইনজীবী করুণা নন্দী। তাঁদের দুজনকেই কার্যত সুপ্রিম কোর্টে দাপুটে ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। তিলোত্তমার পরিবার চাইছেন, তাঁর মেয়ের হয়ে তেমন ভাবেই লড়ুন আইনজীবী। সে কারণেই এরকম সময়ে আইনজীবী বদলের সিদ্ধান্ত পরিবারের। তাছাড়া মামলা লড়তে দিল্লি যেতে কিছুটা অসুবিধাও হচ্ছিল আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের। আইনজীবী বদল প্রসঙ্গে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “এই বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব ছিল, আমি করেছি। বাকিটা ওঁদের সিদ্ধান্ত। সুপ্রিম কোর্টে নির্যাতিতার হয়ে সওয়াল করার কোনও বিষয়ই নেই। মামলা হচ্ছে তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে।” আদৌ কি এর ফলে কোনও উন্নতি হবে মামলার? সেই প্রশ্নের উত্তরে বিকাশবাবু জানান, এ ব্যাপারে মন্তব্য করা তাঁর অশোভন।
আগামী সোমবার সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে আইনজীবী বদলের প্রভাব কি পড়তে চলেছে মামলায়? স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে। তবে এই মামলায় আইনজীবী বদল তো এই প্রথম নয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে প্রথম বার মামলায় অংশ নেন ইন্দিরা জয়সিং। তাঁর একের পর এক জোরালো প্রশ্নে ভালোই অস্বস্তিতে পড়েন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল। নির্যাতিতার হয়ে যিনি লড়তে চলেছেন, সেই বৃন্দা গ্রোভারও কিন্তু আইনজীবী মহলে বিশেষ প্রসিদ্ধ।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট স্টেফেনস কলেজ থেকে আইনের ডিগ্রি লাভের পর নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন বৃন্দা। দেশে ফিরে এসে ১৯৮৯ সালে তিনি ট্রায়াল কোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন, যা পরে তাঁকে নিয়ে যায় হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের দিকে। বিভিন্ন মানবাধিকার ও নির্যাতনবিরোধী মামলায় তিনি দেশের শীর্ষ আইনজীবীদের মধ্যে স্থান করে নিয়েছেন।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য বৃন্দা ইতিমধ্যেই একাধিক মানবাধিকার ও মহিলা-শিশুদের বিরুদ্ধে হওয়া নির্যাতনের মামলায় লড়েছেন। মহিলা এবং শিশুদের উপর নির্যাতনের মামলাতেও বিশেষ পরিচিতি রয়েছে তাঁর। আবার দেশের ধর্ষণ আইন লিঙ্গনিরপেক্ষ নয় দাবি করে লড়াই জারি রেখেছেন ওই আইনজীবী। ২০১২ সালে একটি আইনের প্রেক্ষিতে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, কেন ধর্ষণ আইন লিঙ্গনিরপেক্ষ হওয়া উচিত। বাস্তবে পুরুষও যে ধর্ষিত হন এমন বেশ কিছু উদাহরণ দেন তিনি।
আরও পড়ুন: নির্ভয়ার মাকে বলেন, ‘ধর্ষকদের ক্ষমা করে দিন’! জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে লড়া ইন্দিরা জয়সিং কে?
বৃন্দার ঝুলিতে রয়েছে একাধিক ঈর্ষণীয় মামলা। বৃন্দা গ্রোভারের সবচেয়ে আলোচিত মামলাগুলোর মধ্যে একটি হলো বিলকিস বানো ধর্ষণ মামলা। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় ধর্ষিত বিলকিস বানোর হয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টে লড়েছিলেন, যেখানে তিনি গুজরাট সরকারের ১১ জন অপরাধীর মুক্তির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। তাঁর দৃঢ় ও সাহসী পদক্ষেপ এই মামলায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। এছাড়া ১৯৮৭ সালের হাসিমপুরা পুলিশ হত্যা মামলা থেকে শুরু করে ২০০৪ সালের ইসরাত জাহান মামলা, ২০০৮ সালে কান্দামালে খ্রিস্টান বিরোধী দাঙ্গা মামলাতে লড়েছেন তিনি। শিশুদের যৌন হেনস্থা থেকে সুরক্ষা, নির্যাতন প্রতিরোধ বিলের সংশোধনীর খসড়া তৈরিতেও তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে।
এ হেন দুদে আইনজীবীর হাতেই এবার আরজি করের নির্যাতিতার হয়ে সওয়াল জবাবের ভার। ঠিক কতখানি কাজে আসবে এমন সময় আইনজীবী বদলের সিদ্ধান্ত? সেই উত্তর মিলবে আগামী সোমবারেই।