সকালে ইস্তফা, বিকেলে নিয়োগ! আরজি করের সন্দীপ ঘোষকে বাঁচাতেই উদ্যোগী সরকার?
RG Kar Sandip Ghosh: আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের পর সন্দীপ কেন বলেননি, ওই যুবতীর ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ হয়েছে, আত্মহত্যার বিষয়টি কেন উত্থাপন করতে চেয়েছিলেন তিনি?
সোমবার সকালেই বলেছিলেন, তিনি অপমানিত। এতই অপমানিত যে তিনি আরজি করের অধ্যক্ষ পদে তো ইস্তফা দিয়েইছেন, চাকরিও নাকি ছেড়ে দেবেন। তিনি এও বলেছিলেন, ‘স্বেচ্ছায়’ ইস্তফা দিচ্ছেন। কোনও রাজনৈতিক চাপে নয়। কয়েক ঘণ্টা পরেই দেখা গেল, যে শহরের কলেজে ধর্ষণ ও খুনের মতো ঘটনা ঘটেছে, সেই কলকাতা শহরেরই অন্য একটি কলেজে তাঁকে সরকার বদলি করে দিল! অর্থাৎ তিনি থাকছেন। তাঁর উপর সরকারের ভরসাও থাকছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে তাই স্বাভাবিক প্রশ্ন ওঠে, তৃণমূল সরকার কি এই ইস্তফার আড়ালে রক্ষা কবচ দিল আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে? আন্দোলন বাড়তে থাকায়, সরকার নিজের ভাবমূর্তি বজায় রাখতেই কি সন্দীপকে একটি কলেজ থেকে সরিয়ে অন্যত্র পাকাপাকি বন্দোবস্ত করে দিল?
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজেরই প্রাক্তনী ছিলেন সন্দীপ ঘোষ! তারই অধ্যক্ষ থাকাকালীন আরজি কর হাসপাতালে নারকীয় ধর্ষণ ও হত্যা ঘটে যায়। তাঁরই বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তিনি এই ধর্ষণকাণ্ডে মৃতার দিকেই অভিযোগ তোলেন, এক মেয়ে অত রাতে ঘুরছিলেন কেন! অভিযোগ, সন্দীপ ঘোষই মৃতার বাড়িতে ফোন করে বলেন চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন। বহুকাল থেকেই অভিযোগ রয়েছে, খোদ অধ্যক্ষ হাসপাতালের বহু দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। বহুবার তাঁর বদলি হলেও তিনি বহাল থেকে যান আরজি করেই। কার নির্দেশে? কার বরাভয়ে?
আরও পড়ুন- মৃতকেই দুষেছিলেন, আরজি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ আসলে কে?
আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের পর সন্দীপ কেন বলেননি, ওই যুবতীর ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ হয়েছে, আত্মহত্যার বিষয়টি কেন উত্থাপন করতে চেয়েছিলেন তিনি? নিজের গদি বাঁচাতে? যদিও সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন সন্দীপ। তিনি বলেছেন, একা মেয়ের রাতে ঘোরা নিয়ে কিছুই বলেননি তিনি। তাঁর মুখে কথা বসানো হয়েছে। আত্মহত্যার কথাও নাকি তিনি বলেননি। চিকিৎসক সংগঠনের সদস্যেরা বলছেন, বদলি নয়। সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত করতে হবে কারণ তিনি এই ঘটনার তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করেছেন।
সন্দীপ ঘোষ প্রভাবশালী এই নিয়ে সন্দেহ নেই। সরকারি নিরাপত্তা পেতেন সন্দীপ। তৃণমূলের প্রতি তাঁর আর তাঁর প্রতি তৃণমূলের সমাদর গভীরপ্রোথিত। লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের দিন তৃণমূলের জয়ের পর সবুজ আবির মেখে আঙুলে 'ভিক্ট্রি' চিহ্ন দেখিয়ে তাঁর ছবিও সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে। অর্থাৎ সন্দীপ ঘোষ যে শাসকদলের আস্থাভাজন তা স্পষ্টই। তাই তাঁর ইস্তফাকে ‘লোকদেখানো’ বলেই মনে করছেন একাংশের নাগরিক। আসলে ইস্তফা দিয়ে নিজে নিরাপদে অন্যত্র চলে গেলেন তিনি, বলা ভালো তাঁকে এই নিরাপত্তার গ্রিন করিডোর করে দিল খোদ সরকারই।
আরও পড়ুন- আন্দোলনের জের না উপরমহলের চাপ? কেন পদত্যাগ আরজি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের?
আগেও তো একাধিক বার বদলি হয়েছিল। প্রতিবারই তিনি ফিরে আসেন আরজি করের অধ্যক্ষ পদে। এক বার সন্দীপের পরিবর্তে উলুবেড়িয়ার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সনৎ ঘোষকে আরজি করে আনা হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ফের সন্দীপ ওই পদে ফিরে আসেন। গত সেপ্টেম্বরে সন্দীপকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অস্থি বিভাগে বদলি করা হয়েছিল। ২১ দিনের মাথায় আবার তিনি আরজি করে আসেন। আরজি করের অন্দরের খবর, সন্দীপ ঘোষ ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ তথা চিকিৎসক শান্তনু সেনের বিরোধী গোষ্ঠীর। শোনা যায়, শান্তনু সেনকে রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরানোর নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছিলেন সন্দীপই।
সোমবার সকালে আরজি করের অধ্যক্ষের পর থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরে বিকেলেই তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষের পদে। আর তারপরেই সন্দীপের বিরুদ্ধে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পডুয়াদের একাংশও আন্দোলনে নামেন। সোমবার সন্ধ্যা থেকেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তাঁরা। তালা ঝুলিয়ে দেন অধ্যক্ষের ঘরে। তাদে দাবি, কোনও অবস্থাতেই কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের নতুন অধ্যক্ষ হিসাবে সন্দীপকে মেনে নেবেন না পড়ুয়ারা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ন্যাশনাল মেডিক্যালেও বাড়ছে আন্দোলনের আঁচ! যে অধ্যক্ষ পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও সরকারের বদলির নির্দেশিকাকে নিজের মতো বদলে বদলে আরজি করেই ফিরতে পারেন, এমন নারকীয় ঘটনার পরেও সরকার যে অধ্যক্ষকে অন্য কলেজে বদলি করে 'বাঁচাতে' চায় সেই অসীম ক্ষমতাধর সন্দীপ ঘোষকে তালা বন্ধ করে কি আটকাতে পারবেন পড়ুয়ারা?