লাভের অঙ্ক দ্বিগুণ করতে সোনায় বিনিয়োগের সেরা সময় এটাই
সঞ্চয় করতে কে না ভালোবাসে? সঞ্চয়ের নানা রকমফের রয়েছে। কেউ ব্যাংকে টাকা জমায়, কেউ পোস্ট অফিসে, কেউ সুদে টাকা খাটায়, কেউ বিনিয়োগ করে শেয়ারবাজারে, কেউ কেউ মিউচুয়াল ফান্ড বা পিপিএফ-এ বিনিয়োগ করতে ভালোবাসে। কেউ কেউ আবার বিনিয়োগ করেন জমিতে। তেমনই ভারতীয়দের ক্ষেত্রে একটি বড় বিনিয়োগের মাধ্যম হল সোনা। সোনা ভারতীয়দের কাছে যেমন নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগের মাধ্যম তেমনই এটি একটি শুভ ধাতু রূপেও পরিচিত। যারা নিয়মিত সোনায় বিনিয়োগ করেন তাদের জন্য এই সময়টা স্বর্ণসুযোগ সোনায় বিনিয়োগ করার। কিন্তু কেন বলছি এরকম কথা? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
বর্তমান বাজারে ২৪ ক্যারট সোনার দাম ৪৯৩৬০ টাকা প্রতি ১০ গ্রামের। গতবছর কোরোনাকালীন সময়ে যা ছুঁয়েছিলো ৬৩৪৪৭ টাকার অঙ্ক। অর্থাৎ হিসাব করে দেখতে গেলে বর্তমানে সোনার দাম অনেকটাই কম। এই সময় অনেকেই ভাবেন সোনার দাম কমছে মানে, সোনায় বিনিয়োগ করা লোকসান। অথচ পাকা বিনিয়োগকারীরা জানেন এটাই স্বর্ণে বিনিয়োগের স্বর্ণসুযোগ। কিন্তু কেন?
২০২০ সালের অগাস্ট মাসের পর থেকে ক্রমাগত এক নাগাড়ে দাম বেড়ে চলেছে সোনার। চলতি মাসে প্রতি আউন্স (২৮.৩৫ গ্রাম) সোনার দাম হয়েছে প্রায় ২,০০০ ডলার। এর থেকেই পরিষ্কার যে এই মুল্যবান সোনালি ধাতুর ওপরে এখনই বিনিয়োগ করা উচিত। ২০২১ সালে তৃতীয় কোয়ার্টারে সোনার গড় ভ্যালু ছিল প্রতি আউন্স ১,৮০০ ডলার। যা বেড়ে পৌঁছে গিয়েছে ২,০০০ ডলারে। এর ফলে এখনই উপযুক্ত সময় সোনার ওপরে বিনিয়োগ করার, যা ভবিষ্যতে ভালো রিটার্ন দেবে।
তাছাড়াও বর্তমানে করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টের বাড়াবাড়ি নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অর্থনীতিবিদরাও৷ অনেকেই মনে করছেন অতিমারির প্রথম পর্যায়ে যে পরিমাণ আতঙ্ক কোভিড নিয়ে এসেছিল, ওমিক্রনেও সেই একই জিনিস ফিরত আসার সম্ভাবনা রয়েছে৷ এখানেই শেষ নয়৷ অনেকেই মনে করছেন, কোভিড অতিমারির প্রাথমিক পর্যায়ে যে ভাবে ব্যহত হয়েছিল অর্থনীতি, ওমিক্রনের সময়ও ঠিক একই জিনিস ঘটে থাকতে পারে। অর্থাৎ ওমিক্রনের কারণে ফের গোটা বিশ্বজুড়ে সোনার দাম কমতে পারে আরও। এবং এই অতিমারীর শেষে ফের আকাশ ছোঁবে সোনার দর। তখন আজকের দিনে কম টাকায় কেনা সোনা বিনিয়োগকারীদের ফেরত দিতে পারে প্রায় দ্বিগুণ অঙ্ক।
সোনায় বিনিয়োগ করার আগে কী কী জেনে রাখতে হবে?
১. সোনায় বিনিয়োগ তখনই করবেন যখন ভরির দাম অনেকটা কমবে বা নিয়মিত কমছে এরকম সময়ই সোনায় বিনিয়োগ করার জন্য আদর্শ।
২. সোনায় বিনিয়োগ করলে তাড়াহুড়ো করবেন না। ৫-১০ বছর পর্যন্ত বিনিয়োগের সময় দিতে পারলে তবেই বিনিয়োগ করবেন। সোনা শেয়ার বাজারের মতো ফাটকা বাজার নয় যে রাতারাতি ভাগ্য বদলে দিতে পারে। অর্থনীতির ওঠা এবং পড়ার ওপর নির্ভর করে সোনার দামের ওঠাপড়া। সোনা সেই সমস্ত বিনিয়োগের মধ্যে পড়ে না যা স্বল্প সময়ে অধিক রিটার্ন দেয়। সোনা অল্প ঝুঁকিতে নিশ্চিত রিটার্ন দেওয়ার মতো নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ পন্থা।
৩. সোনায় বিনিয়োগ করার বিভিন্ন রাস্তা আছে। আপনি স্বর্ণ অলংকার কিনে বাড়িতে রেখে দিতে পারেন। দাম বাড়লে তা বিক্রি করে দিতে পারেন।
আবার আপনি ব্যাংকের গোল্ড বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। গোল্ড বন্ডের একটি উদাহরণ হলো SGB বা সভেরিয়ান গোল্ড বন্ড। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) এই বণ্ড বাজারে ছাড়ে। চলতি অর্থবর্ষে ইতিমধ্যেই সাতটি ভাগে এই বণ্ড বাজারে এসেছে। গোল্ড বন্ড কিনে তা ব্যাঙ্কেই সুরক্ষিত রেখে, দাম বাড়লে বিক্রি করে দিতে পারেন।
আরও পড়ুন-মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগে আগ্রহী? জানুন এ বছর কোথায় বিনিয়োগ করলে সর্বাধিক লাভ
এছাড়াও বিভিন্ন গোল্ড লোনে বিনিয়োগ করারও সুযোগ থাকে বাজারে। এক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক আপনাকে তাদের মাধ্যমে সোনায় বিনিয়োগ করায় এবং সেই সোনা নিজেদের কাছে সুরক্ষিত রাখে। ভবিষ্যতে সোনার দাম যত বাড়তে থাকে ব্যাঙ্ক তত বাড়াতে থাকে ফেরতযোগ্য ধার নেওয়ার পরিমান।
৪. সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে সোনায় বিনিয়োগ করবেন কি না? যদি আপনি বিনিয়োগ করার পর অন্তত পক্ষে ২-৫ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন, তবে সোনা সবসময় মা লক্ষ্মী রূপে আপনার সম্মুখে প্রকট হবেন। ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে সোনার চাহিদা বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। এই ২০ বছরে সোনার বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওপর নিচ হলেও, সোনার চাহিদা ক্রমাগত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সোনার দাম সমান তালে বেড়ে গেলেও সেই চাহিদায় কোনও ভাটা পরেনি। এর ফলে ২০ বছরের মূল্যবৃদ্ধির দিকে খেয়াল রেখে সোনার ওপরে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
বিশ্বাস না হলে আজ থেকে ৫ বছর আগের সোনার দাম গুগল করে দেখে নিন। দেখবেন ৩০০০০ টাকা প্রতি ভরি সোনা কেমন আজ ৫০০০০ ছুঁয়ে বসে আছে আর জুলুজুলু চোখে আপনার দিকে তাকিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করছেন, 'অপেক্ষা কীসের?'
তথ্যসূত্র :
১. ফিন এক্সট্রা ব্লগস্পট।
২. মানি কন্ট্রোল।