চিকিৎসার নামে খুন হয়েছে শ'য়ে শ'য়ে মুরগি! সাপের কামড়ের এই টোটকা শুনে শিউরে উঠবেন
Chicken Anus in Snake Bite Treatment: মুরগিগুলিকে ধরে একের পর এক তাদের মলদ্বারগুলিকে ভালোভাবে প্রসারিত করে সাপে কাটার জায়গাগুলিতে প্রয়োগ করা হয়েছিল।
ধরুন সাপে কামড়েছে আপনাকে। বিষ যাতে দ্রুত ছড়িয়ে না পড়ে, কী করবেন? ডাক্তারের কাছে ছুটবেন, হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। সেখানে গিয়ে চিকিৎসক আপনার বন্দোবস্ত করবেন, বিষ বের করে ফেলবেন। কাটাছেঁড়া করবেন। ধরুন, এসব কিছু না করে চিকিৎসক চিৎকার করে নার্সদের বললেন, "জলদি যাও, খান ৭৫ বা ১০০ টা মুরগির মলদ্বার নিয়ে এসো!” বিষের জ্বালাতে না হলেও অন্তত এমন নির্দেশ শুনেই প্রাণপাখি বেরিয়ে যেতে পারে! মুরগির মলদ্বার! কেন! বিষয়টা খুব হাস্যকর বা অবাস্তব মনে হলেও এমনটাই ঘটত আগে। খুব বেশি না, এই শ' খানেক বছর আগেও। ১৯২৮ সালে দ্য ইন্ডিয়ান মেডিকেল গেজেটে নথিভুক্ত হওয়া সাপের কামড়ের পুরনো চিকিত্সা পদ্ধতি বলছে, সাপে কামড়ালে মুরগির মলদ্বারই ছিল চিকিৎসা! কেমন সেই বিষয়টি?
ওই গেজেটের প্রতিবেদন অনুসারে, ৩৬ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি একটি কোবরা সাপের উপর দাঁড়িয়ে পড়েন। সাপটি তাকে পায়ের পিছনে কামড়ে দিয়েছিল। তিনি যখন চিকিৎসকের কাছে যান, ক্ষতগুলির চারপাশে অসাড়তা ছাড়া আর কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না তার দেহে। চিকিৎসকের কাছে কোনও অ্যান্টিভেনম ছিল না। তবে ডাক্তার কুবাবের মুরগির অঢেল সরবরাহ ছিল! বলা ভালো, মুরগির মলদ্বারের বিস্তর সরবরাহ ছিল। আর তিনি জানতেন, স্থানীয় টোটকার ব্যবস্থা কীভাবে করতে হয়।
আরও পড়ুন- চিৎকার করলে সাপেরা কি সত্যিই শুনতে পায়? যে সত্যি সামনে আনল সাম্প্রতিক গবেষণা
ডাক্তার কুবাব যে টোটকাটির কথা জানতেন, সেটি অনেকেই বলেন, ভারতে নাকি খুব জনপ্রিয় সাপে কামড়ানোর টোটকা ছিল। তবে এর শিকড় মিলতে পারে ১৩ শতকের ইউরোপে। জ্যান্ত মুরগির মলদ্বার সাপে কামড়ানো ক্ষতস্থানে ঘষেই নাকি চিকিৎসা করা হতো।
ডাক্তার কুবাব জানিয়েছিলেন, তিনি যে দেশিয় চিকিত্সাটি প্রয়োগ করেছিলেন তা রত্নগিরি জেলায় বেশ প্রচলিত। মুরগিগুলিকে ধরে একের পর এক তাদের মলদ্বারগুলিকে ভালোভাবে প্রসারিত করে সাপে কাটার জায়গাগুলিতে প্রয়োগ করা হয়েছিল। প্রথম কয়েকটি মুরগি কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা পড়ে। মুরগি মারা পড়ার সংখ্যা হু হু করে বাড়তেই থাকে, কুবাবও চিকিৎসা চালিয়ে যেতে থাকেন। ৪২ নম্বর মুরগি মারা পড়তে রোগী জানান, তিনি টের পাচ্ছেন মুরগির মলদ্বার দিয়ে বিষ শুষে নেওয়া হচ্ছে।
কুবাব দাবি করেছেন, সাড়ে তিন ঘণ্টার চিকিৎসায়, ৯৬টির মধ্যে ৭৪টি মুরগি তাদের মলদ্বার দিয়ে বিষ শুয়ে নিয়ে মারা যায়। আরও ১২ টি মুরগি ছিল অর্ধ-মৃত! পরে অবশ্য ওরা বেঁচে যায়, ৬ টি মুরগি চেতনা হারায়। বেশিরভাগ মুরগি তিন মিনিটের মধ্যে মারা যায়, জানিয়েছিলেন কুবাব। পরিণত মুরগিরাই সবচেয়ে ভালো বিষ চুষে নিতে পারত। যে মুরগিরা ডিম পেড়েছিল তারা একেবারেই বিষ শুষে নিতে পারেনি, আর ছোট মোরগরা একেবারেই বিষ শুষে নিতে পারে না।
আরও পড়ুন- পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম দ্বীপ এটিই! ১১ হাজার বছর ধরে এখানে কেবল বাস বিষাক্ত সাপেদের
কুবাবের মতে, ভারতের রত্নগিরি জেলায় সাধারণত এইরকমভাবেই সাপের কামড় চিকিৎসা করা হতো। মধ্যযুগীয় শল্যচিকিৎসক হেনরি ডি মন্ডেভিলের অসমাপ্ত পাঠ্য 'লা চিরুরগি’-তেও খানিক এমন ধরনের চিকিৎসার উল্লেখ পাওয়া যায়। সেইখানে লেখা যাছে, "কাউকে কামড় চুষতে বলুন; যিনি বিষ চুষে নেবেন তাঁকে তেল বা তেল এবং উষ্ণ ওয়াইন দিয়ে তার মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে এবং ঠোঁটে বেগুনি ফুলের তেল ঘষতে হবে এবং রসুন আর বাদাম খেতে হবে প্রচুর।"
"যদি ক্ষত চুষে নেওয়ার জন্য কাউকে না পাওয়া যায়, তাহলে মোরগ বা মুরগির মলদ্বার থেকে পালক ছিঁড়ে নিন এবং সাপের কামড়ের ক্ষতর উপর রাখুন যতক্ষণ না মুরগিটি মারা যায়। তারপর আরও অনেক ক'টা মুরগির মলদ্বার সেখানে প্রয়োগ করুন," লেখা আছে সেখানে। একই সময়ের অন্যান্য গ্রন্থেও লেখা হয়েছে যে, পায়রাদের এই একই পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই টোটকাতে হাজারে হাজারে পাখিদের মৃত্যু হয়েছে অকারণে। সাপের বিষ চুষে নেওয়া বিষয়টি আসলে বেশ ভয়ানক ধারণা। যদিও এই পুরনো টোটকাগুলি এখনও অনেকেই ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেন। মেরিল্যান্ড স্কুল অব মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক রবার্ট এ. বারিশ এই বিষয়ে ২০০২ সালের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিলেন, এই মুরগির মলদ্বার দিয়ে সাপের বিষ চোষানোর বিষয়টি আখেরে ভালোর চেয়ে বেশি ক্ষতিই করতে পারে। এসব টোটকা তাৎক্ষণিক জরুরি চিকিৎসা থেকে রোগীকে দূরে সরিয়ে রাখে। বিষ ক্ষতকে দূষিত করে, স্নায়ু ও রক্তনালীকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।