এই প্রথমবার শীতকালে আয়োজিত হচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপ, নেপথ্যে কোন কারণ
FIFA World Cup 2022 Qatar: ইকুয়েডর-চিলি দ্বন্দ্ব থেকে সবচেয়ে কম সংখ্যক স্টেডিয়াম- ফিফা বিশ্বকাপের নানা তথ্য।
আর একমাসের মধ্যেই শুরু হতে চলেছে কাতার বিশ্বকাপ ২০২২। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে বিশ্বকাপে নিজের জায়গা নির্ধারণ করতে যোগ্যতা অর্জনের খেলা, আগত টিমগুলির মধ্যে। এমতাবস্থায় ইকুয়েডরের হয়ে খেলছে কলম্বিয়ার এক ফুটবলার, এই অভিযোগ এনে ইকুয়েডরকে কাতার বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কারের করার দাবি জানাল চিলি। যদিও ইকুয়েডর সমস্ত অভিযোগটাই অস্বীকার করেছে।
তবে ইকুয়েডরকে ঘিরে তৈরি হওয়া এই বিতর্কের কেন্দ্রে আছেন বায়রন ক্যাস্টিলো। এর আগেও স্বয়ং লিওনেল মেসির প্রাক্তন জন্মের শংসাপত্র এবং জন্মস্থান নিয়েও তৈরি হয়েছিল এমন অস্বচ্ছতা। এইবার ক্যাস্টিলোকে ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে কমিটি মহলে। একদিকে ইকুয়েডর যেখানে ক্যাস্টিলোকে নিজেদের নাগরিক বলে দাবি করছে অন্যদিকে চিলির দাবি ক্যাস্টিলো আসলে ইকুয়েডরের নয় বরং কলম্বিয়ার নাগরিক। কাতার বিশ্বকাপ ২০২২-এর যোগ্যতা অর্জন ম্যাচে ক্যাস্টিলো এখনও পর্যন্ত ইকুয়েডরের হয়ে আটটি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন।
নজরকাড়া বিষয়, যে-টিমকে কেন্দ্র করে বিতর্ক, সেই টিমই স্থান করে নিয়েছে বিশ্বকাপের গ্রুপ ‘এ’-র তালিকায়। অর্থাৎ, ইকুয়েডর রয়েছে এই তালিকায়, সঙ্গে আছে কাতার, সেনেগাল এবং নেদারল্যান্ডসের। এদিকে চিলি-র ব্যর্থ পরাক্রমের জন্য এই টিম এবার বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পারেনি। কেবল চিলিই নয়, পাশাপাশি কলম্বিয়াও নেই সেই তালিকায়। সুতরাং আন্দাজ করাই যায় যে, বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে না-পারার ক্ষোভে ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনেছে চিলি ও কলম্বিয়া।
পাঁচটি দেশ কেবল দক্ষিণ আমেরিকার থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে এবার বিশ্বকাপ খেলার। সূত্র থেকে খবর, কলম্বিয়া ষষ্ঠ এবং চিলি সপ্তম স্থান অধিকার করে রয়েছে যোগ্যতা অর্জন খেলায়। চিলির এহেন অবস্থা দেখে তাদের দাবি, কলম্বিয়ার ফুটবলারকে অবৈধভাবে নিজেদের দলে টেনে নিয়ে খেলিয়েছে ইকুয়েডর। উল্টে বেআইনিভাবে বিদেশি ফুটবলারকে নিজেদের দলে খেলানোর জন্য ইকুয়েডরকে শাস্তি দেওয়া দাবি জানায় চিলি। এ-বিষয়ে কলম্বিয়া কোনও মন্তব্য না করলে, ক্ষিপ্ত হয়েছে চিলি। তাঁদের দাবি, ইকুয়েডরকে শাস্তি দিয়ে সেই জায়গায় চিলিকে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। বিষয়টি এতটাই হাতের বাইরে চলে যায় যে, বিতর্ক মেটাতে অবশেষে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতেরও দ্বারস্থ হয় চিলির ফুটবল সংস্থা।
ইতিমধ্যেই চিলির অভিযোগে আলোকপাত করেছে ফুটবল বিশ্বকাপ সংস্থা। অভিযোগ অনুসারে, সেই ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই তদন্তও শুরু করে দিয়েছে ফিফা।ক্রমাগত তদন্ত চলার পর, বিশ্ব-ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা সিদ্ধান্তে আসে যে, চিলির দ্বারা আনা অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন। তাঁদের সিদ্ধান্ত অনুসারে ইকুয়েডর সম্পূর্ণ নির্দোষ। কারণ তদন্তের চাহিদা অনুসারে, ইকুয়েডর ক্যাস্টিলোর নাগরিকত্ব প্রমাণপত্র এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র সব সঠিক সময়ে জমা দিয়েছে। তার মধ্যে বিন্দুমাত্রও সন্দেহজনক কিছু নেই, এমনটাই জানালেন নিয়ামক সংস্থা। এই সকল প্রমাণপত্র আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতেও পেশ করা হবে- এমনটাই জানিয়েছে ফিফা সংস্থা। যদিও এত কিছুর পরেও চিলি ফুটবল ফেডারেশন হাল ছাড়েনি।তারাও ইতিমধ্যে তৈরি এই মামলার শেষ পর্যায়ে পৌঁছনোর জন্য।
মোট ৩২টি দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কাতার ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২। কাতারে প্রথমবারের মতো হতে যাচ্ছে শীতকালে বিশ্বকাপ। এর আগে বিশ্বে কখনও শীতকালে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়নি। সাধারণত বছরের মাঝে, অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে ফুটবল বিশ্বকাপ হয়ে থাকে। মধ্যপ্রাচের দেশ হওয়ায় কাতারে এই সময়ে তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি থাকে। যা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এমন পরিস্থিতিতে যে-কোনও ধরনের বিশ্বকাপ আয়োজন করা প্রায় অসম্ভব। তাই কাতারের আবহাওয়ার কারণে সামনে আসা চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে ফিফা বিশ্বকাপকে তার স্বাভাবিক গ্রীষ্মকালের স্লট থেকে সরিয়ে শীতকালে নিয়ে আসা হয়েছে।
কাতার বিশ্বকাপ হতে চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্বকাপ। কাতার আয়োজক দেশ হিসেবে দেশের স্টেডিয়াম, রাস্তা, হোটেল ইত্যাদির উন্নয়নে অবকাঠামো প্রকল্পে ২০০ বিলিয়ন ডলার ব্যায় করেছে। এর উদ্দেশ্য একটাই, যাতে খেলা দেখতে আসা পর্যটকদের যেন অসুবিধে না হয়। বিশ্বকাপের সবচেয়ে কমসংখ্যক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এইবারের বিশ্বকাপ। মাত্র ৮টি স্টেডিয়াম প্রস্তুত করা হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশ্বকাপের জন্য সবচেয়ে কমসংখ্যক ভেন্যু। এর মধ্যে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য নির্বাচিত আটটি ভেন্যুর মধ্যে শুধু মাত্র একটি ভেন্যু সম্পূর্ণভাবে তৈরি করা, আর বাকি সাতটি খেলার জন্য তৈরি করা। এর আগে অবশ্য আর্জেন্টিনায়, ১৯৭৮ সালে মাত্র ছয়টি স্টেডিয়াম নিয়ে ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে স্টেডিয়ামের সংখ্যা ছিল কাতারের চেয়ে দু'টি কম।
কাতার বিশ্বকাপে দর্শকের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়াবে, এমনটাই আসা করা যাচ্ছে ইতিমধ্যে। এটি কেবলই অনুমান নয়, এর পিছনে রয়েছে যুক্তিযুক্ত কারণ। ভৌগোলিকভাবে কাতার একটি মধ্যপ্রাচের দেশ হওয়ায় সেই কারণে এখানে পরিবহণ করা পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ থেকেই যথেষ্ট সোজা। সুতরাং, ২০২২ বিশ্বকাপ শুরু হলেই সারা বিশ্ব থেকেই রেকর্ড সংখ্যক দর্শক আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আগ্রহজনক বিষয় হলো, নির্বাচিত স্টেডিয়ামগুলো কাতার বিমানবন্দরের আশপাশে অবস্থিত। কাতারে হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশে রেকর্ড-সংখ্যক দর্শনার্থী আনতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশ্বকাপ চলাকালীন সারা মাসে কাতারে প্রতিদিন ১৩০০ বিমান আসবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।