পুড়ে ছাই দু'হাজার বাড়ি, সর্বস্ব খুইয়ে মাথায় হাত, নতুন বছরেও দুর্দশাই সঙ্গী রোহিঙ্গাদের?

Fire at Rohingya Camp Bangladesh : কীভাবে তাঁরা বাঁচবেন, কীভাবে বেঁচে থাকার রসদ খুঁজবেন, সেটা নিয়েই চিন্তায় রোহিঙ্গারা।

হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা মিনিট। এই সামান্য সময়ই একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চল পুড়ে খাক হয়ে গেল। কয়েকশো পরিবার, শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। চোখের জলটুকুও শুকিয়ে গিয়েছে। আল্লার কাছে একটাই প্রার্থনা, আর কত? আর কত দুর্দশার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে? বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ছবিটা এখন এমনই। যেদিকে তাকানো যায়, কেবল ছাই, ধ্বংসস্তূপ আর হাহাকারের চিহ্ন। এমন অবস্থায়, কীভাবে তাঁরা বাঁচবেন, কীভাবে বেঁচে থাকার রসদ খুঁজবেন, সেটা নিয়েই চিন্তায় রোহিঙ্গারা।

রবিবার, ৫ মার্চ, বেলা তিনটে। অন্যান্যদিনের মতোই কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালির রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সূর্যাস্তের রোদ পড়েছে। হঠাৎই সেই ক্যাম্পে আগুন ধরে গেল। মুহূর্তের মধ্যে তা ছড়িয়ে গেল অন্যত্র। দমকল কর্তারা জানিয়েছেন, প্রথমে উখিয়ার ১১ নম্বর ক্যাম্পে আগুন লাগে। পরে সেটা অন্যান্য জায়গাতেও ছড়িয়ে পড়ে। সেইসঙ্গে দোসর হয়ে হাজির হয়েছে জোরালো হাওয়া। তার জেরে আগুন আরও অনেকটা ছড়িয়ে যায়। প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় দমকল বাহিনী।

rohingya fire

আর তারপর? বিগত কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গা সমস্যা চাক্ষুষ করেছে গোটা বিশ্ব। মায়ানমার থেকে তাঁরা কখনও বাংলাদেশে যাচ্ছেন, কখনও আবার অন্য দেশে। বাংলাদেশের উপকূলবর্তী বেশকিছু জায়গায় রোহিঙ্গাদের শরণার্থী ক্যাম্প রয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্য, শিক্ষার ব্যবস্থা নেই, স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত। মানুষ হয়েও মানুষের মৌলিক সুবিধাগুলো পাচ্ছেন না রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। আর কক্সবাজারের উখিয়ার এই ক্যাম্পে আগুন লেগে যাওয়ার পর আরওই বিপর্যয় নেমে এল। দমকল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অন্তত ২০০০-এরও বেশি ঘরবাড়ি পুড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জিনিসপত্র একেবারে ধুলিস্যাৎ। হতাহতের কোনও খবর না থাকলেও এমন পরিস্থিতিতে মাথায় হাত পড়েছে রোহিঙ্গাদের। স্থাবর অস্থাবর সামান্য যা কিছু ছিল, সব ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সেই ছাই ঘেঁটেই খুঁজে নেওয়া, কিছু পড়ে রয়েছে কিনা।

আরও পড়ুন : কখনও বেঁচে থাকার মরিয়া চেষ্টা, কখনও মৃত্যু, গোটা বছর সমুদ্রেই কাটল রোহিঙ্গাদের জীবন

২০১৭ সালে মায়ানমারে সামরিক অভিযানের কারণে রোহিঙ্গারা নিজেদের জায়গা ছাড়তে বাধ্য হয়। তখন থেকেই কয়েক লক্ষ মানুষ কার্যত সহায় সম্বলহীন। কেবল বাংলাদেশেই নয়, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াতেও পাড়ি দেন এই রোহিঙ্গারা। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও, যে করেই হোক বাঁচতে হবে, টিকে থাকতে হবে – এটাই ছিল লক্ষ্য। ২০২২ সালে এভাবেই কয়েকশো রোহিঙ্গা নৌকা ভাসিয়েছিল মহাসাগরে। লক্ষ্য ছিল, অন্য কোনও দেশে, উপকূলে যদি ঠাই পাওয়া যায়। সেই কাজ করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন কয়েক হাজার রোহিঙ্গা। একটা গোটা বছর কেটেছে জলের ওপর – খাওয়া নেই, তৃষ্ণা নেই, ওষুধ নেই।

rohingya problem

আর আগুন? অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালেই পরপর দুটি অগ্নিকাণ্ড হয় বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এই উখিয়াতেই ঘটেছিল সেই ঘটনা। ২০২২-র জানুয়ারিতে প্রায় ৬০০ ঘর পুড়ে যায়। আর ওই বছরেরই মার্চে প্রায় ১০ হাজার বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ১৫ জন রোহিঙ্গা মারাও যান। তারপর ফের এই ঘটনা। এমনিতেই রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে চিন্তিত খোদ রাষ্ট্রপুঞ্জ। মানুষ হয়ে জন্মেও তাঁদের কোনও অধিকার নেই। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কোনও ঠিক নেই ক্যাম্পে। শিক্ষারও সঠিক বন্দোবস্ত নেই। এখন কী করে পরিস্থিতি ঠিক হবে, বাংলাদেশ সরকার আদৌ পাশে দাঁড়াবে কিনা, জানেন না তাঁরা। তাহলে কি ২০২৩-এও সমুদ্রে নৌকা ভাসাবেন রোহিঙ্গারা? আরও দক্ষিণ পশ্চিমে সরে যাবেন তাঁরা? আশঙ্কা দানা বাঁধছে।

More Articles