মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তে মানুষ কী ভাবে? গবেষণা করতে গিয়ে চমকে ওঠেন বিজ্ঞানীরা

Thoughts Before Human Death : কী এই মৃত্যু? যখন আসে, তখন কীভাবে আসে? মৃত্যুর পর কী হয়? পরজন্ম বলে আদৌ কি কিছু আছে?

খাওয়া, পড়া, কাজকর্ম, সংসার – মানুষের জীবনে এই সবই বারবার ঘুরে ফিরে আসে। এভাবেই বেঁচে থাকা আমাদের অভ্যাস, যুগ যুগ ধরে তেমনটাই দেখে চলেছি আমরা। আর ‘জন্মিলে মরিতে হইবে’ এই কথাটাও তো সবসময় শুনে এসেছি আমরা। একবার জন্মগ্রহণ করলে অনেক কিছুই হতে পারে, কিন্তু মৃত্যুকে এড়ানো যাবে না। এই মৃত্যু নিয়েই কত মানুষের কত কৌতূহল। কী এই মৃত্যু? যখন আসে, তখন কীভাবে আসে? মৃত্যুর পর কী হয়? পরজন্ম বলে আদৌ কি কিছু আছে? বিজ্ঞান আর ধর্মের কাছে আশ্রয় নেয় মানুষ। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে মৃত্যু নিয়ে নানারকম ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। তার নানারকম তত্ত্বকথা; অন্যদিকে বিজ্ঞানও রহস্যের সমাধান খুঁজে চলেছে।

তবে এসবের মাঝেই বেশকিছু গবেষণা জারি রয়েছে। মৃত্যু ঠিক কী, তা নিয়েও একেক বিজ্ঞানীর একেক রকম মত। তবে এখানে লুকিয়ে আছে আরও একটি প্রশ্ন। মৃত্যু যে আসন্ন, সেটা কি বুঝতে পারে ওই মানুষটি? মৃত্যুর আগে ঠিক কী ভাবে মানুষ? কী দেখে? কী চিন্তা ভিড় করে আসে মাথায়? নাকি সেখানে কিছুই থাকে না, সমস্তটাই থাকে ফাঁকা? এই প্রশ্ন থেকেই গবেষণা শুরু করেছিল লুইসিভিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি বিশেষ দল। ডঃ আজমল জেমারের নেতৃত্বে এই দলটি মৃত্যুর ঠিক আগের মানুষের ভাবগতি ও মস্তিস্কের বিভিন্ন তরঙ্গ পর্যালোচনা করছিল। সেখানেই উঠে এল চমকপ্রদ তথ্য। যা চমকে দিল বিজ্ঞানীদেরও।

আরও পড়ুন : মানুষ আসলে কখনই মারা যায় না, মৃত্যু পুরোটাই ভাঁওতা! কেন এমন উদ্ভট দাবি করলেন এই বিজ্ঞানী?

এই গোটা গবেষণার মূলে ছিলেন এক বৃদ্ধ রোগী। প্রায় ৮৭ বছর বয়স হয়ে গিয়েছিল তাঁর। জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন দীর্ঘদিন। প্রবল শরীর খারাপ হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকেই গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যান আজমল জেমাররা। লাগাতার মস্তিস্কের পর্যালোচনা করা হচ্ছিল। বিভিন্ন তরঙ্গ মেপে দেখা হচ্ছিল। এই গোটা কাজ চলার সময়ই হঠাৎই হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর। ডাক্তারদের অনেক চেষ্টাতেও বাঁচানো যায়নি ওই বৃদ্ধকে। আর পুরো ব্যাপারটিই ইলেকট্রো এনসেফেলোগ্রাফির মাধ্যমে রেকর্ড করা হয়।

ঠিক কী দেখা যায় সেখানে? গবেষকরা বলছেন, মৃত্যুর বেশকিছু সময় আগে থেকেই ওই বৃদ্ধের মস্তিস্কের তরঙ্গগুলি বদলে যাচ্ছিল। আলফা, ডেল্টা, থিটা, গামা অসিলেশনে বারবার দেখা হচ্ছিল, কোনও অস্বাভাবিকতা হচ্ছে কিনা। একটা সময় পর স্বাভাবিক তরঙ্গদৈর্ঘ্য গেল বদলে। মোট ৯০০ সেকেন্ড ধরে এই যাবতীয় ক্রিয়াকর্ম পর্যালোচনা করছিলেন বিজ্ঞানীরা। তারপর, সব চুপ।

আরও পড়ুন : মৃত্যুর পরে ঠিক কী রয়েছে? মরে যাওয়ার পর যে গোপন ‘রহস্যের’ কথা জানালেন এই ব্যক্তি

কিন্তু এই তরঙ্গগুলি কী নির্দেশ করছে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৯০০ সেকেন্ডের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল শেষ ৩০ সেকেন্ড। এই গোটা সময়টা জুড়ে ওই বৃদ্ধ মানুষটির মাথায় ভেসে আসছিল বিভিন্ন সময়ের স্মৃতি। আসলে, গোটা জীবনে মানুষের সঙ্গে যা ঘটে, সে সমস্ত ঘটনা কখনও মুছে যায় না। আমাদের মস্তিস্কের ভেতরেই স্মৃতি হয়ে থেকে যায় সেসব। মৃত্যুর আগে সিনেমার মতো সেই পুরনো ঘটনা, হাসি-কান্না, দুঃখ, প্রিয়জনের কথাই বারবার মনে আসে। সবই ফ্ল্যাশব্যাকের মতো, একটা আসে, আরেকটা যায়। এক কথায় বলতে গেলে, মৃত্যুর আগে আরও একবার ঝালিয়ে নেওয়া জীবনের পথটা।

অদ্ভুতভাবে এই কাজটি মস্তিস্ক নিজের থেকেই করে। মৃত্যুর ঠিক কয়েক সেকেন্ডের আগে গোটা জীবনের ছবিটাই একবার চোখের সামনে ভেসে আসে আমাদের। আর মরণাপন্ন মানুষটিও ওই অতীত সময়কে শেষবারের মতো আঁকড়ে ধরতে চান। এভাবেই, বিজ্ঞানের হাত ধরে মৃত্যু চলে আসে আমাদের জীবনে।

More Articles