নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে খেলার জন্যই হার ভারতের! কেন এমন বলছেন মমতা?
Mamata Banerjee on Cricket World Cup 2023 : এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতাও বলছেন নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে খেলেই হেরেছে ভারত!
দেশেরই মাঠে ভারত অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ ভারতীয়রা ঠিক কবে হজম করতে পারবে, আঁক কষে বলা কঠিন। শুরু থেকে একটিও ম্যাচ না হারা ভারতীয় দলকে লহমায় হারিয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালের আসর বসেছিল গুজরাতে। নরেন্দ্র মোদির রাজ্য। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ স্বয়ং মাঠে উপস্থিত। মাঠে খেলা শুরুর আগে সামরিক বিমানের চোখ ধাঁধানো প্রদর্শনী। নাচ, গান, সারা গ্যালারি জুড়ে নীল ঢেউ- কী নেই! তবু দুর্বল হয়ে পড়ল ভারত, হেরে গেল ভারত। ভারত হারতেই সোশ্যাল মিডিয়াতে ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগ হয়ে উঠল 'পনৌতি'! মানে 'অপয়া'। নরেন্দ্র মোদির নামে স্টেডিয়াম, সেখানে প্রধানমন্ত্রী খোদ উপস্থিত! তাও, মোদি হ্যায় ফিরভি মুমকিন নেহি হ্যায়! নেটিজেনদের অনেকেই কেউ মজা করে, কেউ বা গুরুতর বিশ্বাস থেকেই কথাগুলি বলেছেন। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতাও বলছেন নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে খেলেই হেরেছে ভারত!
পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেসের এক বিশেষ অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ভারত গুজরাতে ওই স্টেডিয়ামে খেলেছে বলেই হার। ভারতীয় দল যদি কলকাতায় খেলত, ওয়াংখেড়েতে খেলত তাহলে হারত না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "চমকে ধমকে, মিডিয়া থেকে শুরু করে সকলকেই বন্দুকের নিচে রেখে দিয়েছে বিজেপি সরকার। তাই নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচ খেলা হলো। আমাদের ছেলেমেয়েরা এত ভালো খেলাধুলোয়, সব গেরুয়া পরিয়ে দিয়েছে।" মমতা বলছেন, ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সির রং নীল থেকে বদলে গেরুয়া করে দেওয়ার চেষ্টাও করেছিল মোদি সরকার। কিন্তু প্লেয়ারদের আপত্তিতেই তা আর ঘটেনি। তাও নাকি জার্সিতে নীলের মধ্যে গেরুয়ার ছোঁয়া দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন- বিশ্বকাপে হারই কারণ? কেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচিং থেকে সরছেন রাহুল দ্রাবিড়?
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘পাপিষ্ঠ'দের জন্যই ভুগতে হলো ভারতকে। "পাপ বাপেরেও ছাড়ে না," বলছেন মমতা। তাঁর দাবি সারা দেশে বিজেপি বিরোধী জোটের নাম 'ইন্ডিয়া' রাখা তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। দেশের নামও ইন্ডিয়া, সেই থেকে মিলিয়ে মিশিয়েই নাম। অথচ ইন্ডিয়া নামটিই বদলে দিতে মরিয়া বিজেপি! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, পাপ হোক বা পাপিষ্ঠ, ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের হারের সঙ্গে যে এর সম্পর্ক থাকতে পারে না তা তো যে কোনও বিচক্ষণ মানুষই জানবেন। তাও ঠাট্টা বা তর্ক, দুইয়ের খাতিরেও যদি আলোচনা করা যায়, ইডেন বা ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম হিসেবে কি ততখানি যোগ্য?
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়াম এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। এমন এলইডি লাইট সিস্টেম সারা বিশ্বেই নেই কোথাও। পৃথিবীর অন্যান্য ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এখনও ঐতিহ্যবাহী ফ্লাডলাইট টাওয়ারই দেখা যায়। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ১৩২,০০০ টি দর্শকাসন। এত বিপুল পরিমাণে দর্শক কি ইডেনে বা ওয়াংখেড়েতে সম্ভব? ইডেনের আসন সংখ্যা ৬৮,০০০। ওয়াংখেড়ের আসন সংখ্যা ৩৩,১০৮।
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অন্যান্য ব্যাপক সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে। ৫৫ টি ঘরের ক্লাবঘর, চারটি ড্রেসিং রুম, ৭৬টি কর্পোরেট বক্স এবং একটি অলিম্পিক-আকারের সুইমিং পুল আছে এখানে। প্রতিটি দর্শকের স্ট্যান্ডে একটি রিসেপশন এবং একটি ফুড কোর্ট রয়েছে। ৬৩ একর জমি জুড়ে তৈরি এই নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে খেলে ভারত হেরেছে ঠিকই। বিজেপি বিরোধিতাও প্রাসঙ্গিক তৃণমূলের কাছে। কিন্তু 'পনৌতি' বা 'পাপিষ্ঠ'-দের ভারতের হারে ভূমিকা কতখানি তা বোধহয় সত্যিই ভাবনার বিষয়। যুক্তির কাছে এটুকু উত্তর চাওয়াই যায়।