মেয়েকে কুস্তির মঞ্চে পাঠাবে না আর কোনও পরিবার: বিজেন্দ্র সিং

Wrestling Body Row: যেখানে সাক্ষীর মতো পদকজয়ী কুস্তিগিরেরা সুবিচার পান না, তাহলে সাধারণ লোকের সুবিচার পাওয়ার গ্যারান্টিটা কোথায়! প্রশ্ন বিজেন্দ্রর।

রেস্টলিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (WFI)-র সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন যৌনহেনস্থায় অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় সিং। তার পরেই কুস্তি থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেছেন পদকজয়ী সাক্ষী মালিক। দীর্ঘদিন ধরেই যৌনহেনস্থায় অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে সরব হয়ে এসেছেন সাক্ষীরা। এই লড়াই তাঁদের দীর্ঘদিনের। এবার সেই লড়াইয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ী বিজেন্দ্র সিং।

বেশ কয়েক মাস ধরেই ফেডারেশনের ভোট নিয়ে টালবাহানা চলছিল। শেষমেশ বৃহস্পতিবার সেই ভোটগ্রহণ পর্ব মেটে। ভোটগণনার পরে হাতে আসে ফলাফল। যেখানে ৪৭টির মধ্যে ৪০টি ভোট পেয়ে ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হব ব্রিজভূষণের ব্যবসায়িক পার্টনার ও দীর্ঘদিনের সহচর সঞ্জয় সিং। ফেডারেশনের মাথায় থাকাকালীন মহিলা কুস্তিগিরদের নানা ভাবে শারীরিক হেনস্থা করার অভিযোগ রয়েছে বাহুবলী নেতা ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: কুস্তি থেকে হঠাৎই সরে দাঁড়ালেন সাক্ষী মালিক! নেপথ্যে কি ব্রিজভূষণের কলকাঠি?

বারবার অভিযোগ তোলা সত্ত্বেও ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি প্রশাসনের তরফে। বাধ্য় হয়ে আন্দোলনের পথে নামেন সাক্ষী, বিনেশ ফোগটের মতো তারকা কুস্তিগিরেরা। যন্তর মন্তরের সামনে শুরু হয় বিনিদ্র রাত জাগা। এদিকে নতুন সংসদভবন উদ্বোধনের আলোয় সরিয়ে দেওয়া হয় রাস্তা থেকে আন্দোলনকারীদের। ব্রিজভূষণকে কুস্তি ফেডারেশনের মাথা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বটে, তবে তাতে সুবিচার হয়নি।

কারণ বিজেপির আশীর্বাদধন্য নেতা ব্রিজভূষণ গুটি সাজিয়ে রেখেছিলেন আগে থেকেই। ৬ বারের সাংসদ ব্রিজভূষণের গায়ে আবার রয়েছ চড়া হিন্দুত্ববাদীর লেবেলও। ফলে তিনি যে শাসক দলের একটু বেশিই কাছের লোক হবেন, তাতে আর আশ্চর্য কি! ফলে নিয়ম রক্ষার্থে ফেডারেশনের ভোট তো হল। আর সেই ফেডারেশন ক্ষমতায় এলেন ব্রিজভূষণ-ঘনিষ্ঠ

তবে শেষপর্যন্ত কাজের কাজ কিছু হয়নি। ভোটে জিতে ফেডারেশনের মাথায় বসেছেন, ব্রিজভূষণেরই ডানহাত সঞ্জয় সিং। ফলে ফেডারেশনের রাশ যে পরোক্ষ ভাবে ব্রিজভূষণের হাতেই থেকে যাবে, তাতে আর আশ্চর্য কী! সুরক্ষার নিরিখে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, মুম্বই শহরগুলির জায়গা বেশ ভয়ের জায়গায়। বিশেষত নারী ও শিশুসুরক্ষার ক্ষেত্রে। হবে না-ই বা কেন! কুস্তির মতো বাহুবলী খেলার প্রতিনিধিদের যদি কুস্তি ফেডারেশনে এসে যৌনহেনস্থার মুখে পড়তে হয়, তাহলে গোটা দেশের নারীসুরক্ষা ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা বুঝতে বিশেষ অসুবিধা হয় না।

পদকজয়ী কুস্তিগির বিজেন্দ্র সাক্ষীর পাশে দাঁড়িয়ে জানিয়েছেন,তিনি বুঝতে পেরেছেন সাক্ষীর যন্ত্রণাটা। ভারতের একমাত্র মহিলা কুস্তিগির সাক্ষী, যার ঝুলিতে রয়েছে এতগুলো পদক। সেই সাক্ষী এতদিন ধরে সুবিচার চেয়ে লড়েছেন, যা আজও তিনি পেলেন না। সেই যন্ত্রণায় প্রিয় কুস্তির ময়জান ছাড়লেন তিনি। বিজেন্দ্রর প্রশ্ন, এই ঘটনায় বিশ্বের সামনে ভারতের সম্মান কি আদৌ বাড়ল? ২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন বিজেন্দ্র। পরে কংগ্রেসেও যোগ দেন এই পদকজয়ী কুস্তিগির।

বিজেন্দ্র জানিয়েছেন, ফেডারেশনের এই ঘটনায় গোটা ক্রীড়াজগৎ হতাশাগ্রস্ত। হরিয়ানার মতো জেলায় ক্রমশ কমছে কন্যাসন্তান জন্মের হার। সেখানে মেয়ে প্রায় নেই বললেই চলে। মনে করা হয়, এর জন্য দায়ী, দিনের পর দিন ধরে চলতে থাকা এই অসাম্য। ছেলে ও মেয়েকে আজও বেশিরভাগ জায়গাতেই এক নজরে দেখা হয় না। আর সেই সব জায়গার মধ্যে ঢুকে পড়ল এবার কুস্তি ফেডারেশনও। এর পরে কোনও বাবা-মা বা পরিবার তাঁদের কন্যাসন্তানকে কুস্তির দুনিয়ায় আসতে দেবেন কি! স্টেডিয়ামে যেতে দেবেন? সংশয় ধরে পড়েছে বিজেন্দ্রর গলা থেকে।

তাঁর বক্তব্য, যেখানে সাক্ষীর মতো পদকজয়ী কুস্তিগিরেরা সুবিচার পান না, তাহলে সাধারণ লোকের সুবিচার পাওয়ার গ্যারান্টিটা কোথায়! বিজেন্দ্র জানান, এই উত্তর দিতে এগিয়ে আসা উচিত প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি সকলের। এই ঘটনা গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর উপরে বিরাট বড় প্রশ্ন তুলে দিয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন বিজেন্দ্র।

 

সঞ্জয় সিংয়ের বিপরীতে ফেডারেশনের সভাপতি পদে লড়েছিলেন কমনওয়েলথ গেমসের স্বর্ণপদকজয়ী অনিতা শেওরান। আন্দোলনকারী কুস্তিগিরদের মধ্যে ছিলেন তিনিও। তবে দুঃখের বিষয়, তিনি এই নির্বাচনে ভোট পেয়েছেন মাত্র ৭টি। স্বাভাবিক ভাবেই হেরে যাওয়াই ছিল ভবিতব্য। স্বর্ণপদকজয়ী কুস্তিগিরের থেকে ব্রিজভূষণঘনিষ্ঠ সঞ্জয় সিংয়ের পক্ষেই গিয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা। আর এর থেকেই বোঝা যায় দুর্নীতির শিকড় পৌঁছেছে কত গভীর পর্যন্ত।

আরও পড়ুন: কুস্তিতে হারাতে পারলেই বিয়ের প্রতিশ্রুতি, কখনও হারেননি চেঙ্গিস খানের নাতনি

ভোটের এই ফলাফল ঘিরে তীব্র হতাশা প্রকাশ করেছেন বিনেশ ফোগট, বজরং পুনিয়ার মতো বিখ্যাত কুস্তিগিরেরা। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। জানান, সঞ্জয় সিং নির্বাচিত হওয়ার অর্থ কিচ্ছু পাল্টালো না ফেডারেশনে। আবার সেখানে মহিলা কুস্তিগিরদের দিনের পর দিন হেনস্থার শিকার হতে হবে। শুধু ফেডারেশন নিয়েই নয়, গোটা দেশের বিচারব্যবস্থার উপরেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছে, ভবিষ্যতের কুস্তির দুনিয়া কার্যত অন্ধকার। এর পর কোথায় যাবো, যাওয়া উচিত- দিশা নেই আমাদের কাছে। এ দেশে সুবিচার কীভাবে পেতে হয়, সেই রাস্তা তাঁদের জানা নেই বলেই ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন স্বর্ণজয়ী এই কুস্তিগির।

More Articles