১৩ অগস্ট থেকে ১১ সেপ্টেম্বর: আরজি কর মামলায় কতদূর এগিয়েছে সিবিআই?

RG Kar Doctor's Rape and Murder Case: গত ১৩ অগস্ট এই মামলার দায়িত্ব পেয়েছে সিবিআই। দেখতে দেখতে সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ পেরিয়ে গিয়েছে। ঠিক কতটা এগিয়েছে এই এক মাসে সিবিআই?

আরজি করের নির্যাতিতার বিচার চেয়ে আন্দোলন চলছেই। গত ৯ অগস্ট আরজি কর কলেজের বক্ষবিভাগের সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয় এক তরুণী চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ। ময়নাতদন্তে মেলে ধর্ষণ ও ভয়ঙ্কর নির্যাতনের প্রমাণ। সেই মামলায় রাজ্যের হাত থেকে তদন্তভার কার্যত ছিনিয়ে নিয়ে দেওয়া হয় সিবিআইয়ের হাতে। কিন্তু তদন্ত বা সুবিচারের আশা, সত্যি কি এগিয়েছে কোনওটাই ঠিক পথে? গত ১৩ অগস্ট এই মামলার দায়িত্ব পেয়েছে সিবিআই। দেখতে দেখতে সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ পেরিয়ে গিয়েছে। ঠিক কতটা এগিয়েছে এই এক মাসে সিবিআই?

আরজি করের ঘটনার এক দিন পরেই এক সিভিক ভলিন্টিয়ারকে অভিযুক্ত সন্দেহে গ্রেফতার করেছিল রাজ্যপুলিশ। তার পরে কার্যত আরজি কর চিকিৎসক খুনের ঘটনায় কেউ-ই গ্রেফতার হয়নি। হ্যাঁ, দুর্নীতি মামলায় আরজি কর কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ-সহ আরও চার জনকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। তবে আরজি করের চিকিৎসক ধর্ষণ-খুনে ধৃত বলতে ওই একজনই।

এর মধ্যে দু-দু'বার সুপ্রিম কোর্টে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিবিআই। কিন্তু সেই রিপোর্ট তিলোত্তমার সুবিচারের দাবিতে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের জন্য তেমন কোনও আশার আলো আনতে পারেনি। এরই মধ্যে বুধবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআইয়ের দফতরে ডাকা হল আরজি কর হাসপাতালের চার জুনিয়র ডাক্তারকে। যতদূর জানা গিয়েছে, এবার আর দুর্নীতি নয়। ধর্ষণ ও খুনের মামলার তদন্তেই ডাকা হয়েছে ওই চার জুনিয়র চিকিৎসককে।

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে মিলল না সাড়া! মাথা উঁচু করে আন্দোলনেই অনড় জুনিয়র ডাক্তারেরা

আরজি করে নিহত চিকিৎসকের অপরাধীর শাস্তির দাবিতে যখন গোটা রাজ্য উত্তাল, তখন সিবিআইয়ের তদন্ত যেন সেই একটা বিন্দুতেই থমকে রয়েছে। এর মধ্যে একাধিক বার আরজি কর কলেজের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে সিবিআই। কখনও থ্রিডি স্ক্যানারের মতো আধুনিক যন্ত্র নিয়ে তো কখনও হানা দিয়েছে হাসপাতালের মর্গে। তার থেকে দুর্নীতি মামলার ব্যাপারে বেশ কিছু সূত্র মিললেও অভয়া-মামলায় তেমন কোনও অগ্রগতি দেখা যায়নি। এরই মধ্যে হাতে এসে যায় নিহত চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। জানা যায়, ফরেন্সিক বেশ কিছু পরীক্ষার রিপোর্ট তখনও বাকি। অভিযুক্তের সঙ্গে নির্যাতিতার শরীরে পাওয়া ফ্লুইডের ডিএনএ মিলিয়েও দেখা হয়। কয়েকদিন আগেই এসেছে সেই রিপোর্ট। যেখানে অভিযুক্তের সঙ্গে নির্যাতিতার শরীরে পাওয়া ফ্লুইডের ডিএনএ ম্যাচ হয়েছে বলেই জানা যায়। সেই অনুযায়ী প্রাথমিক চার্জশিট তৈরির প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছেন সিবিআই-এর তদন্তকারী অফিসাররা, তেমনটাও শোনা গিয়েছে। 

একই সঙ্গে সিভিক ভলিন্টিয়ার সঞ্জয় রাইয়ের ইতিমধ্যেই পলিগ্রাফ পরীক্ষা করেছে সিবিআই। সেই পরীক্ষায় সঞ্জয়ের বক্তব্যে একাধিক অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে সিবিআই গোয়েন্দারা। লাই ডিটেক্টর টেস্টে সঞ্জয়ের কাছ থেকে ঘটনার রাতের পুঙ্খানুপুঙ্খ জানতে চেয়েছিল সিবিআই। তাতে ধৃত ওই সিভিক ভলিন্টিয়ার জানিয়েছিল, সে আরজি করে এসে ওই চিকিৎসককে মৃত অবস্থাতেই আবিষ্কার করে। এদিকে সেদিন রাতে আরজি করে আসার আগে বন্ধুর সঙ্গে মদ্য়পান করার পর দু-দু'টি যৌনপল্লিতে হানা দিয়েছিল বলে দাবি করেছিল সে। বান্ধবীর কাছে থেকে ছবি চাওয়া থেকে হাসপাতালে আসার আগে রাস্তায় এক মহিলার যৌনহেনস্থা করার কথা স্বীকার করেছে সঞ্জয়। এদিকে চিকিৎসককে ধর্ষণের ব্যাপারে নানা অসঙ্গতিপূর্ণ কথা বলতে দেখা গিয়েছিল সঞ্জয়কে। সে কথা জানিয়েছিল সিবিআই খোদ।

ওই পর্যন্তই। তার পর আর ধর্ষণ মামলার তদন্তে বিশেষ কোনও অগ্রগতি দেখা যায়নি সিবিআইয়ের তরফে। বরং সিবিআই এর পর ব্যস্ত হয়ে পড়ে দুর্নীতি মামলার তদন্ত নিয়েই। প্রায় ১৬ দিন একটানা জেরার পর গ্রেফতার করা হয় আরজি কর কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ-সহ চার জনকে। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার পলিগ্রাফ টেস্ট হয় সন্দীপেরও। তবে সেই পলিগ্রাফ টেস্টের ফলাফলও তেমন সন্তুষ্টিজনক নয় বলেই জানিয়েছিল সিবিআই। তবে সন্দীপ ঘোষ-সহ ধৃত ওই চার জনকে এখনই নিজেদের হেফাজতে নিতে চায়নি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

একদিন আগেই আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান,তদন্ত করতে নেমে ইলেকট্রনিকস গ্যাজেট বাজেয়াপ্ত হয়েছে, সেগুলি থেকে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে চায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তার জন্য আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন তাদের। ততদিন পর্যন্ত ধৃতদের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের আবেদন জানানো হয়। সেই মতোই প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠানোর কথা রয়েছে ওই চার অভিযুক্তকে।

তার পরে এতদিন পরে হঠাৎ করেই ধর্ষণ ও খুনের তদন্তে চার জুনিয়র ডাক্তারকে ডেকে পাঠালেন সিবিআই গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, এবার চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের মামলার তদন্তে আরও কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে চায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। বুধবার দুপুর বারোটা নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে প্রবেশ করেন ওই চার জুনিয়র ডাক্তার। এই মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে হাসপাতালের অন্দরের তথ্য তাঁদের কাছে রয়েছে কিনা, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: আরজি কর: ধৃত সন্দীপদের হেফাজতে নিতে চাইছে সিবিআই! নেপথ্যে কোন কারণ?

গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানিতে ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয়ের কথা উঠে এসেছিল জনস্বার্থ মামলাকারীদের কথায়। প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতি নিয়েও। তার পরেই প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ও ময়নাতদন্ত নিয়ে একাধিক প্রশ্ন করেন। ময়নাতদন্তের চালান কোথায়, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছিল রাজ্যের কাছ থেকে। সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানিয়েছিলেন, এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে প্রথম পাঁচ ঘণ্টা খুব জরুরি। সে সময় ঘটনাস্থলে বহু লোকের আনাগোনা হয়েছে। ফলে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা থেকেই যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল সিল করতেও অনেকটা সময় নেয়। ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহের সময় সঠিক নিয়ম মানা হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। এত কিছু হওয়ার পাঁচ দিন পরে তদন্তভার পায় সিবিআই। ততক্ষণে বহু সাক্ষ্যপ্রমাণই নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে তদন্তের কাজ অনেকটাই বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে গিয়েছে বলে শীর্ষ আদালতে দাবি করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে।

তবে এতদিন পরে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা নিয়ে ফের নড়েচড়ে বসতে দেখা গেল সিবিআইকে। সেই মামলার তদন্তেও কি এবার গতি আনতে চলেছে তবে সিবিআই। খুব শিগগিরই কি এই মামলাতেও বড়সড় কোনও অগ্রগতি দেখতে চলেছে রাজ্য? আপাতত সেই আশাতেই বুক বাঁধছে গোটা দেশ।

More Articles