যা খাচ্ছেন তাতেই অম্বল? Acidity-এর সমস্যায় জর্জরিত? নিরাময় কী?
অ্যাসিডিটি আজকের দিনে খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। আমাদের খাদ্যভাস্যের আমুল পরিবর্তনের ফলে প্রায় প্রত্যেক ৩ জনের মধ্যে ১ জনের মধ্যে অ্যাসিডিটি সমস্যা বর্তমান। কিন্তু কীভাবে বুঝবেন আপনার মধ্যেও বর্তমান অ্যাসিডিটির সমস্যা? কী করেই বা পাবেন এই সমস্যা বা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
যা খাচ্ছেন তাতেই অ্যাসিডিটি হচ্ছে, কিছু না খেলেও চোঁয়া ঢেকুর আর গলা-বুক জ্বালার সমস্যা হচ্ছে? আপাতভাবে সমস্যাটা তেমন গুরুতর বলে মনে না-ও হতে পারে, কিন্তু যাঁরা ভুক্তভোগী, তাঁরা জানেন অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ঝামেলা ঠিক কতটা ভোগাতে পারে ভবিষ্যতে। তাই আপনি আজ থেকেই এই রোগের প্রতি একটু সজাগ হলেই কিন্তু সমস্যাটা সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবে কিছু পেতে গেলে বলিদান দিতে হয় কিছুর, তাই অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গেলে আপনাকে কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতেই হবে। কিন্তু তার আগে জানা প্রয়োজন আমাদের শরীরে এই সমস্যা হয় কেন?
সমস্যার উৎপত্তি :
আমাদের খাদ্যনালীর মাধ্যমে খাবার ও পানীয় পৌঁছে যায় পাকস্থলীতে। খাদ্য এবং পানীয়র এই গমন সবসময়ই নিম্নমুখি। আমাদের শরীরে অ্যাসিড খাবার হজম করার জন্য নিঃসৃত হয় এবং পাকস্থলীর দিকেই অর্থাৎ নিম্নমুখীই হয়। সাধারণ পরিস্থিতিতে উপরের দিকে অ্যাসিডের উঠে আসার কথা নয়। কিন্তু আমরা যখন ঢেকুর তুলি, তখনও ভিতর থেকেই হাওয়া উঠে আসে এবং তা উর্ধগামী। তবে তাতে তেমন কোনও সমস্যা নেই। এক-আধবার অ্যাসিড মিশ্রিত চোঁয়া ঢেকুরও উঠতে পারে। কিন্তু বার বার আপনার খাদ্যনালীতে অ্যাসিড উঠে এলে সেখানে প্রদাহ তৈরি হয়। ফলে বুক জ্বালা করবে, গলা পর্যন্ত টকভাব টের পাবেন। সমস্যাটার উৎপত্তিও এখান থেকেই।
নিরাময় কী? :
১. যাঁদের অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা আছে, তাঁরা কখনও পেট ভর্তি করে খাবেন না। খাদ্যনালী যেখানে পাকস্থলীতে মেশে, সেখানে একটি রিং গোছের মাসল থাকে, এই মাসলটির নাম ইসোফেগাল স্পিঙ্কটার। এই পেশিটি দুর্বল হয়ে গেলেই রিফ্লাক্স বেশি হয়। তার উপর অতিরিক্ত খাবার খাওয়াটা ঠিক না – তাতে সমস্যা বাড়বে।
২. সারা দিনে অল্প অল্প করে বার বার খেতে থাকুন। পেট ভর্তি করে একবার খেয়ে হজম না করতে পারার থেকে ভালো অল্প অল্প করে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বার বার খান। এতে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণটাও সহজ হবে।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম এবং খাদ্যাভাস বদলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলুন। যাঁরা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যায় বার বার ভোগেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওজন কমলেই তাঁদের সমস্যা কমতে আরম্ভ করে।
৪. সহজপাচ্য খাবার খান। যে খাবার যত তাড়াতাড়ি হজম হয়, সেই খাবার তত আপনার শরীরের জন্য উপকারী। খুব বেশি কার্বোহাইড্রেট খাওয়া বন্ধ করতে পারলেও ভালো হয়। বিশেষ করে ময়দায় তৈরি ভাজাভুজি যত কম খাবেন তত ভালো। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট হজম করতে সময় বেশি লাগে। তখন পেট ফাঁপে, গ্যাস হয়। জন্ম নেয় ব্যাকটেরিয়া, তার ফলে গ্যাস হয় আরও বেশি।কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটে সাধারণত সমস্যা হয় না।
৫. চা, কফি, প্যাকেজড ড্রিংক ইত্যদির সেবন কমিয়ে ফেলুন। যাঁরা খুব বেশি কফি, ফলের রস বা সফট ড্রিঙ্ক খেতে অভ্যস্ত, তাঁদেরও অ্যাসিড রিফ্লাক্সের জটিল সমস্যা দেখা দেয়।
৬. বেশি রাত অবধি জাগা বন্ধ করুন। রাতের খাবার সময়ে খেয়ে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। ঘুমের ঘাটতি থেকে অনেক সময় হতে পারে অ্যাসিডিটির সমস্যা। নির্দিষ্ট পরিমাণ বিশ্রাম, সঠিক জীবজ্জাপন এর মাধ্যমে যার থেকে বিরত থাকা যায়।
৭. খালি পেটে থাকবেন না। খালি পেট অ্যাসিডিটির আঁতুর ঘর। খিদে পেলেই কিছু খান। হয়তো সামান্য কিছুই, যেমন বাদাম, বিস্কুট, কেক; কিন্তু খান।
৮. এই পয়েন্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক সময়েই কাঁচা পেঁয়াজ খেয়ে থাকি খাবারের সাথে, কিন্তু পারলে এড়িয়ে চলুন কাঁচা পেঁয়াজ। কাঁচা পেঁয়াজ-এও বুক জ্বালার সমস্যা বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে ব্যবহার করুন সুগার ফ্রি চিউয়িং গাম। আপনি যত চিবোবেন, তত বেশি লালা নিঃসৃত হবে মুখ থেকে। তা আপনার অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের পক্ষে দারুণ সহায়ক।
৯. একজন ডায়েটিশিয়ানের সাহায্য ও নিতে পারেন। তিনি যে খাদ্যলিস্ট বানিয়ে দেবেন তা খেলেই আপনি নিরাময় পেতে পারেন।
আমাদের শরীর মন্দিরের মতো। নিয়মিত তার উপাসনা করুন। যা যা আপনার শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বর্জন করুন। দেখবেন হাতেনাতে উপকার পাবেন।